আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ বিদেশী শ্রমিকদের জন্য নতুন ভিসা ইস্যুতে আরেক দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। আগেই তিনি গ্রিনকার্ডধারী এবং কিছু বিদেশী শ্রমিকের বিরুদ্ধে ভিসা ইস্যু স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এবার তার মেয়াদ আরো বাড়িয়েছেন। বলা হয়েছে, এসব ক্যাটেগরিতে এ বছর শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভিসা ইস্যু স্থগিত থাকবে। এর আওতায় পড়বেন উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন প্রযুক্তি বিষয়ক কর্মী, কৃষিনির্ভর নয় তবে মৌসুমী কাজে সাহায্যকারী এবং শীর্ষ স্থানীয় নির্বাহীরা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এ বিষয়ে হোয়াইট হাউজ থেকে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে যেসব মার্কিনি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের জন্য কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কিন্তু সমালোচকরা একে দেখছেন বাঁকা চোখে।
তারা বলছেন, করোনা ভাইরাস মহামারিকে ব্যবহার করে অভিবাসী আইনকে কঠোরভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
কাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য
সাংবাদিকদের কাছে ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, প্রশাসন যে ভিসা ইস্যু করার সিদ্ধান্ত ‘ফ্রিজ’ করেছে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন প্রায় ৫ লাখ ২৫ হাজার মানুষ। এর মধ্যে রয়েছেন প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার মানুষ, বিদেশী এসব মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের জন্য নতুন গ্রিনকার্ড পেয়েছেন। তাদের ক্ষেত্রেও এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। এর আগে এপ্রিলে এমন স্থগিতাদেশ প্রথম দিয়েছিল হোয়াইট হাউজ। সেই নির্দেশই সোমবার নতুন করে বর্ধিত করা হলো। তবে এরই মধ্যে যারা ভিসা হাতে পেয়েছেন তারা সোমবারের ঘোষিত নতুন নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন না বলে মনে করা হচ্ছে। এই নির্দেশের আওতায় থাকবেন এইচ-১বি ভিসার আবেদনকারীরা। এর মধ্যে বেশির ভাগই ভারতীয় প্রযুক্তি বিষয়ক কর্মী। সমালোচকরা বলছেন, এসব ভিসার মাধ্যমে সিলিকন ভ্যালির কোম্পানিগুলো কম বেতনের বিদেশী কর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রে কাজ দিয়েছিল। গত বছর এইচ১-বি ভিসার জন্য ৮৫ হাজার পদের জন্য আবেদন পড়েছিল প্রায় ২ লাখ ২৫ হাজার।
এ ছাড়া এই নির্দেশের অধীনে পড়বেন এইচ-২বি ভিসার আবেদনকারী মৌসুমী কর্মীরা। এর মধ্যে রয়েছেন হাসপাতাল বিষয়ক শিল্প, কৃষিখাতে নয় এমন মৌসুমী শ্রমিক, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প ও স্বাস্থ্যসেবামুলক পেশা। এই নির্দেশে আওতায় আরো রয়েছেন জে-১ স্বল্পমেয়াদী এক্সচেঞ্জ ভিসা। এটি এমন একটি ক্যাটেগরি যার আওতায় রয়েছেন ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থী, বাসাবাড়িতে শিশুদের দেখাশোনাকারী কর্মী। তবে আওতার বাইরে রয়েছেন প্রফেসর ও স্কলাররা। এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকবেন এল ভিসার আবেদনকারীরাও। এর আওতায় রয়েছেন ম্যানেজার ও বহুজাতিক বিভিন্ন কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ পদের কর্মীরা।
কি প্রতিক্রিয়া পড়ছে
একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, এর উদ্দেশ্য মহৎ এবং উজ্বল। এটা অর্থনীতির জন্য খুবই মূল্যবান সিদ্ধান্ত। সেন্টার ফর ইমিগ্রেশন স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক মার্ক ক্রিকোরিয়ান এই পদক্ষেপের পক্ষে। তিনি বার্তা সংস্থা এপিকে বলেছেন, মার্কিনিদের কর্মসংস্থানকে সুরক্ষিত রাখতে এটা একটি বড় পদক্ষেপ ট্রাম্প প্রশাসনের। কিন্তু এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে আমেরিকান সিভিল ইউনিয়ন। তারা বলেছে, কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে করোনা মহামারিকে ব্যবহার করে অভিবাসন আইনকে নতুনভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে অনেক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, যারা বিদেশী শ্রমিকদের ওপর নির্ভর করে পরিচালিত হয়। নতুন এই বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে সতর্কতা জানিয়ে এ মাসে একটি চিঠি লিখেছে চেম্বার অব কমার্স। তাতে বলা হয়েছে, অর্থনীতি যখন প্রত্যাবর্তন করছে তখন কর্মশক্তির চাহিদা মেটাতে মার্কিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিশ্চয়তা প্রয়োজন। সেই প্রয়োজন মেটাতে যেমন দেশের ভিতরকার, তেমনি বিদেশী মেধাবী শ্রমিক প্রয়োজন।