শহীদুল ইসলাম শহীদ,(গাইবান্ধা) প্রতিনিধি: পারাপারের দুর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছে না তিস্তাপারের মানুষের। এবার শেষমেশ ভেঙেই গেল গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে কাজ শেষের আগেই দেবে যাওয়া সেই ভাইরাল ব্রিজের অর্ধেক অংশ। ফলে গুড়েবালিতে পরিণত হয়েছে মানুষের নদী পারাপারের দুর্ভোগ লাঘব হওয়ার স্বপ্ন।
জানা যায়, উপজেলার বেলকা ইউনিয়ন বেলকা বাজারের উত্তর পাশে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীর শাখার খেয়া ঘাট দিয়ে বেলকা ও হরিপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের অন্তত ২০ হাজার মানুষ মালামালসহ যাতায়াত করতেন নৌকায় করে। নৌকা ধরতে একটু খানি বিলম্বেই অপেক্ষা করতে হতো প্রায় ঘন্টা খানেক। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হতো অসুস্থ রোগীর স্বজনদের। বাদ পড়তো না স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীরাও। সময় মতো ক্লাস ধরতে বাড়ি থেকে বের হতে হতো দেড়-দুই ঘন্টা আগে। নৌকা ধরতে না পারলে কখনো কখনো দুই, এক ঘন্টা করে ক্লাসও মিস হতো শিক্ষার্থীদের।
স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা গত ০৫-০৪-২০২৩ ইং তারিখে গৃহীত দরপত্রের উপর গত ০৯/০৪/২০২৩ ইং লটারী অনুষ্ঠিত হয়। লটারীতে নির্বাচিত ঠিকাদার মেসার্স শাহানুর ইসলাম (ছানা) নামের গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৫% নিম্ন দরে ২৭ লাখ ৫০ হাজার ২৫০ টাকায় ব্রিজ নির্মাণের কাজটি পায়। সুন্দরগঞ্জ এলজিইডির সার্বিক তত্ত্বাবধানে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য ২৭/০৪/২০২৩ ইং তারিখে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কার্যাদেশ পান।
২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় বেলকা বাজার থেকে বেলকা ও হরিপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের লোকজনের যাতায়াতের জন্য তিস্তার শাখা নদীর উপর ৩৪৪ ফুট দীর্ঘ ও ৫ ফুট প্রস্থ কাঠের ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়।
২০২৩ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ২০২৪ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি অবধি কাজ না করেই টাকাও উত্তোলণ করেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। বিষয়টি জানা জানি হলে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয় কাজ। শেষ হয় জুনের মাঝামাঝি। কিন্তু কাজের মান নিম্নমানের হওয়ায় কয়েকদিন পরেই সেতুর মাঝখানের ৪টি পিলার দেবে যায়। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ব্রিজ দিয়ে চলাচল বন্ধ হয়ে যায় চরাঞ্চলের মানুষের। পারাপার হন নৌকা দিয়ে। তবুও আশা ছিল ব্রিজটি আবার ঠিক করা হবে বলে। কিন্তু গত (০৮ অক্টোবর) সকালে ভেঙে যায় ব্রিজের দেবে যাওয়া অংশ থেকে প্রায় অর্ধেকটা। ফলে হতাশ হন শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, কাজের নিম্নমানের কারণে ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ায় দীর্ঘদিনের কষ্ট আর দূর হলো না। এখন বাড়তি টাকা ও সময় ব্যয় করতে হচ্ছে তাদের। বিড়ম্বনায় পড়ছেন যাতায়াতকারী শিক্ষার্থীরা।
স্থানীয়রা জানান, তিন যুগ ধরে যাতায়াতের কষ্ট থেকে মুক্তি মিলছে না আমাদের। প্রতিদিন ১০ টাকা করে দিলে মাসে ব্যয় হচ্ছে ৩০০ টাকা। তাছাড়া রোগীদের হাসপাতালে এবং কৃষিপণ্য হাটে নিয়ে যাওয়া খুবই কষ্টকর। এ থেকে রেহাই পাবো কবে?
বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ বলেন, কাজের মান নিম্ন হওয়ায় ব্রিজটির ৪টি পিলার গত জুন মাসেই দেবে যায়। কয়েকদিন পরেই সেই ভাইরাল ব্রিজের অর্ধেক অংশ ভেঙে গেছে।ফলে চরণচলের লোকজন নদী পারাপারে মারাত্মক সমস্যা সম্মুখীন হচ্ছে।