ঢাকাশনিবার , ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকের সর্বশেষ খবর

তদন্তে দূর্নীতির সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় অস্থায়ী বরখাস্ত হলেন বিতর্কীত ইউপি সদস্য – ঝর্ণা


সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫ ৮:০৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

রংপুর প্রতিনিধি:    রংপুরের গঙ্গাচড়ার গজঘন্টা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ঝর্ণা বেগমের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় গত ০৩ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসন তাকে অস্থায়ী বরখাস্ত করে এবং স্থায়ী বরখাস্তের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ জানিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠায়।২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের পবিত্র ঈদ- উল- ফিতর উপলক্ষে দুর্যোগাক্রান্ত/ দু:স্হ / অতিদরিদ্র ব্যক্তি/ পরিবারের জন্য বিনা মুল্যে ১০ কেজি ভিজিএফ (চাল) ৬ নং গজঘণ্টা ইউনিয়ন ৫২৫২ টি স্লিপ বা কার্ড বরাদ্দ পায়।
পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৯ নং ওয়ার্ডের জন্য জনসংখ্যার ভিত্তিতে আনুপাতিক হারে ৪৮৬ স্লিপ বা কার্ড ইউপি সদস্য ঝর্ণা বেগমকে বুঝিয়ে দেয় । ঝর্ণা বেগম কার্ড নিয়ে নিয়ম – নীতির তোয়াক্কা না করে যেমন খুশি তেমন সাজ নীতিতে বিতরণ করে নিজ স্বার্থ হাসিল করেন। পরের দিন চাল বিতরণের খবর শুনে প্রতিবন্ধি নাজমুল ইসলাম, বিধবা রওশন আরা, জিরামনি,বুলবুলি,মরিয়ম,ছাবেরা,রোকসানা,ছমছু,শাহানা,ইছারুল,রতন,শিরিন আহমেদ, সাহাজুল,অহেদুল,আজিজুল,মানিক মিয়া, সহ আরও অনেকেই তালিকায় নাম থাকা স্বত্বেও কার্ড না পেয়ে ইউনিয়ন পরিষদে যান এবং সেখানে প্রত্যেকের নাম মাষ্টার রোলে আছে নিশ্চিত হন। পরে বঞ্চিত সকলেই ইউপি সদস্য ঝর্ণা বেগমের বাড়িতে গিয়া তাদের স্লিপ বা কার্ড গুলো চাইলে ঝর্ণা বেগম রাগান্বিত হয়ে উচ্চস্বরে বলেন আপনাদের নামে কোন স্লিপ বা কার্ড হয়নি, শেষে নিরুপায় হয়ে কার্ড না পেয়েসবাই বাড়িতে ফিরে আসে।
পরে বঞ্চিত সকলেই পরামর্শ সাপেক্ষে উপজেলা নিবার্হী অফিসার বরাবর সকলের পক্ষে প্রতিবন্ধি নাজমুল ইসলাম বাদী হয়ে ঝর্ণার বিরুদ্ধে ভিজিএফ এর (চাল) না পাওয়া, ইউপি সদস্যের (চাল)আত্মসাৎ করা, বিধবা ভাতা করিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া, ৪০ দিনের কর্মসূচীর কাজ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে টাকা অগ্রিম নেওয়ার বিষয়গুলো তুলে ধরে অভিযোগ করেন এবং অভিযোগে ফটো কপি সহ বিস্তারিত সাংবাদিককে জানান। বিষয়টি তুলে ধরে ধারাবাহিক ভাবে স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে।

পরে সংবাদ ও অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউপি সদস্য ঝর্ণা বেগমকে চিঠির মাধ্যমে তিন কার্য দিবসের মধ্যে অভিযোগের ব্যাপারে লিখিত জবাব দেয়ার নির্দেশ দেন , লিখিত জবাবে ঝর্ণা বেগম তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে দায় এড়িয়ে যাওয়ায় বিষয়টি তদন্ত করার প্রয়োজনে সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মুজাহিদুর রহমানকে আহবায়ক,সহকারী শিক্ষা অফিসার খায়রুল ইসলাম ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ভূপাল রায়কে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে সাত কার্য দিবসের মধ্যে অভিযোগের পূর্ণাঙ্গ সত্য – মিথ্যা তুলে ধরে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। কিন্তু তদন্ত কমিটির আহবায়ক চাল বিতরণের সময় ট্যাগ অফিসারের দায়িত্ব থাকায় নিজেকে দায়মুক্ত রাখতে এবং ইউপি সদস্যকে বাঁচাতেই সরেজমিন তদন্তে বিষয়টিতে সত্যতা মিললেও ঝর্ণা বেগমের প্রভাব এবং অদৃশ্য কারণে নামে মাত্র একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবদনে অভিযুক্ত ইউপি সদস্যকে দায়ি না করে সু কৌশলে উচ্চতর তদন্ত প্রয়োজন মর্মে প্রতিবেদনে দাখিল করেন।
তদন্ত প্রতিবেদন ও ঝর্ণা বেগমের লিখিত জবাব যথাযথ না হওয়ায় পুনরায় উচ্চতর তদন্ত কমিটিতে উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মোসাদ্দেকুর রহমানকে আহবায়ক,উপজেলা সমবায় অফিসার আবতাবুজ্জামান ও উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা হাসানুজ্জামানকে সদস্য করে কমিটি গঠিত হয়।

উচ্চতর তদন্ত কমিটি অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিনে ইউপি চেয়ারম্যানের লিখিত জবাব, মহিলা ইউপি সদস্য ( ৭’৮’৯ সংরক্ষিত ) শম্পা বেগমকে ৩০টি স্লিপ দেয়ার মিথ্যা অপবাদ, গ্রাম পুলিশ আব্দুর রহিমকে সাথে নিয়ে স্লিপ বিতরণের মিথ্যাচার ও তাদের প্রতি ঝর্ণা বেগমের মিথ্যা দায় চাপানোর বিষয়টি লিখিত জবাবে প্রমাণিত হয় এবং অভিযোগকারীদের লিখিত জবাবে ভিজিএফ চাল না পাওয়া, বিভিন্ন বিষয়ে ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা নেয়ার বিষয়গুলিও পরিষ্কার হয়। উচ্চতর তদন্ত কমিটির পর্যালোচনায় তার সকল অপকর্মের প্রাথমিকভাবে সত্যতা প্রমাণিত হলে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করে।উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধতন কতৃপক্ষে পাঠিয়েছিলাম, সেখান থেকেই আইনানুগভাবে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থায়ী বরখাস্তের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

✅ আমাদের প্রকাশিত কোন সংবাদের বিরুদ্ধে আপনার অভিযোগ  বা পরামর্শ থাকলে ই-মেইল করুনঃ dailyvorerkhabor@gmail.com❌ বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।