নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে কমিশন কোনো ব্লেম নিতে রাজী নয়। সরকার যেভাবে চাইবে, সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। একই সঙ্গে সর্বশক্তি দিয়ে সুন্দর একটি নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্র্যাসি এ্যান জ্যাকবসনের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, নির্বাচন কমিশনের উপরে যাতে কোন কোন ব্লেম না আসে, নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতির অভাব রয়েছে, নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত নয়, প্রস্তুতি সাফিশিয়েন্ট নয়- এই কথা বলে যাতে কোন নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের কথা না হয়, এজন্য আমরা পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে থাকবো।
তিনি বলেন, যে কোনো সময় নির্বাচন সরকার যখন চাইবে আমরা যাতে ডেলিভার করতে পারি সেই প্রস্তুতি আমরা নেব। আমরা কোন ধরনের কোন ব্লেম নিতে রাজি না। এই কথাটা উনাকে (চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স) জানিয়েছি এবং সেই লক্ষ্যে আমরা কিন্তু প্রস্তুতি নিয়েছি।বৈঠকে ‘মব’ নিয় চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের প্রশ্ন প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, উনি জানতে চাইলেন যে, ইলেকশনের সময় কোনো পার্টির উপরে যদি মব সৃষ্টি হয় তাহলে কি হবে। আমি বললাম ইলেকশন তো এখনো দেরি আছে। ইলেকশনের সময় যখন ৩০০ কনস্টিটিয়েন্সিতে একদিনে ইলেকশন হবে তখন তা ৩০০ জায়গায় ভাগ হয়ে যাবে। যারা মব সৃষ্টি করে ওরা দেখবেন যে যার যার কনস্টিটিসিতে চলে গেছে। একসাথে এত লোক একত্রে আর পাওয়া যাবে না, ঢাকা শহর খালি হয়ে যাবে। যারা মব সৃষ্টি করতে চাইবে তারা সুবিধা করতে পারবে না।
নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ইসির নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করে সিইসি বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব যেহেতু আমাদের হাতে, সেহেতু ল অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশন আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সেজন্য আমরা আমাদের দিক থেকে পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনী যাদের যা করার আছে-সব জায়গায় আমরা সাপোর্ট দিই এবং তাদের সাথে আমাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকে। এবং তারাও খুব কো-অপারেটিভ থাকে সব সময়ই। তারা আমাদের দিক থেকে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং নির্বাচনকালীন সময়ে তারা সবসময় আমাদের সাহায্য সহযোগিতা করে থাকে। অতীতে যেমন করেছে, ভবিষ্যতেও করবে। এই আস্থার জায়গা থেকে আমি উনাকে বলেছি যে ল অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশন নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে জানি, এই অভিজ্ঞতা থেকে বলেছি। আমরা বিভিন্ন সময়ে এই ধরনের আশঙ্কার কথা শুনেছি, কিন্তু যখন নির্বাচন এসেছে তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে এসেছে। কারণ নির্বাচনের সময় সবাই চায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হোক এবং একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন হোক।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, একটা কথা তিনি (চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স) ফাঁক দিয়ে বলেছেন গুজব ও ষড়যন্ত্র তত্ব নিয়ে। আমি বলেছি এই দেশটা গুজবের দেশ। তিনি আবার গুজবটা দূর করতে চান। আমি গুজব কানে না নিতে বলেছি। আমরা পুরো নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা ফেরত আনার ব্যবস্থা করেছি। ভোটের দায়িত্বে ৯৫ শতাংশ সরকারের লোক আর ৫ শতাংশ ইসির তিনি এমন বলেছেন। আমি বলেছি সরকার ৯৫ শতাংশ যদি রেজাল্ট নিজের দিকে আনে এটা একটা… আরেকটা হলো আমাদের ৯৫ শতাংশ জনগণের পক্ষে। এটা সৎ উদ্দেশ্যে।
অতীতে এটা অপব্যবহার হয়েছে। উনি বলেছেন এটা ঠিক। আমি বলেছি সরকারকে বাদ দিয়ে ভোট সম্ভব নয়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী লাগবে, বাজেট লাগবে, উনাদের সহযোগিতা ছাড়া ভোট সম্ভব নয়। ৯৫ শতাংশ সরকারের লোকবল রেজাল্ট নিজেদের পক্ষে নিচ্ছেন না কেননা, সরকার প্রধান কোনো দলের না। তিনি স্বাধীনভাবে ইসি যেন কাজ করতে পারে, সে সহযোগিতা করেছেন, সেটাও জানিয়েছি। আমরা সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়া সহযোগিতা পেয়েছি।সিইসি বলেন, মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে বৈঠকে কালো টাকার কথা এসেছে, এটা একেবারে বন্ধ করতে তো পারবো না। ঐক্যমত কমিশনের সঙ্গে বসেছি সেটাও জানিয়েছি। আমি আশাবাদী, সর্বশক্তি দিয়ে শেষ পর্যন্ত ফাইট করবো। দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে সুন্দর নির্বাচন যেন সে চেষ্ট করবো।
নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটা সমঝোতা আসবে বলে আশা ব্যক্ত করে সিইসি বলেন, আমার ধারণা হলো রাজনৈতিক দলগুলো দেশের স্বার্থ সবার উপরে বিবেচনায় রাখবেন। দলগুলো দেশের স্বার্থে কাজ করেন দেশের কথা চিন্তা করে কাজ করেন এবং শেষ পর্যন্ত গিয়ে দেখবেন যে একটা পজিশনে এসে যায়। আমি উনাকে বলেছি যে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো দেখবেন আপনি শেষ পর্যন্ত একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং এ আসবে।এসময় সিইসির সঙ্গে বৈঠকে অন্যদের মধ্যে মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক প্রধান ডেভিড মো, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ফিরোজ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।