স্বপন রবি দাশ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি: যখন দেশজুড়ে ঈদের আনন্দে ভরে উঠেছে প্রতিটি ঘর, পরিবার-পরিজনের সঙ্গে মানুষ মেতে উঠেছে উৎসবের রঙে- সেই মুহূর্তেও দেশের সীমান্তে দাঁড়িয়ে আছেন কিছু নির্ভীক রক্ষাকর্তা। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের কাছে ঈদের দিনটি শুধুই উৎসব নয়, বরং দায়িত্ব, ত্যাগ ও দেশপ্রেমের এক গভীর প্রতিশ্রুতি।
হবিগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (৫৫ বিজিবি) আওতাধীন ১০৩ কিলোমিটার সীমান্তে অবস্থিত ১৬টি বিওপির প্রতিটিতে ঈদের দিনেও চলে নিরবচ্ছিন্ন টহল ও নজরদারি। চুনারুঘাট উপজেলার বাল্লা বিওপিতে সকাল থেকেই ছিল বিশেষ নজরদারি ও সতর্কতা। সেখানে দায়িত্বে থাকা বিওপি কমান্ডার নায়েব সুবেদার মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন,
“ঈদের নামাজও আমাদের দুই ভাগে পড়তে হয়, যেন দায়িত্বে কোনো ফাঁক না থাকে। সবার পক্ষে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন সম্ভব হয় না। তবুও আমরা বিশ্বাস করি- ‘সবার আগে দেশ, তারপর পরিবার।’”
চাকরি জীবনের দীর্ঘ ৩০ বছরে অন্তত ২০টি ঈদ পরিবার থেকে দূরে কাটিয়েছেন তিনি। তা নিয়ে তার মনে নেই কোনো কষ্ট—আছে কেবল গর্ব ও দায়িত্ববোধ।
“সহকর্মীরাই আমাদের পরিবার হয়ে উঠেছে। সেই আত্মিক বন্ধনই আমাদের সাহস জোগায়, এগিয়ে নেয় দেশের সেবায়।”
মনতলা বিওপির নায়েব সুবেদার জাফরুল্লাহ বলেন, “দেশের প্রতিটি মানুষই আমাদের আপনজন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় ঈদ উপহার।”
ঈদ উপলক্ষে সীমান্তে নেওয়া হয় বিশেষ নজরদারি ও বাড়তি টহলের ব্যবস্থা। পাহাড়, টিলা, চা-বাগান আর দুর্গম সীমান্ত পেরিয়ে বিজিবি সদস্যরা সারা বছর কাজ করে যান নীরবে। রেমা, কালেঙ্গা ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে সংলগ্ন এলাকা চোরাকারবারিদের তৎপরতার ঝুঁকিপূর্ণ হলেও ঈদের দিনেও সেখানে ছিল বিজিবির সতর্ক চোখ।
ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তানজিলুর রহমান বলেন,
“ঈদের আনন্দ তখনই পরিপূর্ণ হয়, যখন দেশের সীমান্ত থাকে নিরাপদ। পরিবারের থেকে দূরে থাকাটা কষ্টের হলেও এই ত্যাগেই লুকিয়ে আছে গর্ব আর দেশপ্রেম। ৫৫ বিজিবির প্রতিটি সদস্য একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে পার করে এই বিশেষ দিনগুলো। তাদের নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগ আমাদের অনুপ্রেরণা। একজন অধিনায়ক হিসেবে আমি গর্বিত।”
চোরাচালান রোধেও ঈদের দিন ছিল বিজিবির সফল অভিযান। সাতছড়ি ও তেলিয়াপাড়া বিওপিতে চালানো অভিযানে জব্দ করা হয় ৩৪ লাখ ৪১ হাজার ২৫০ টাকার ভারতীয় শাড়ি, ১০৮ কেজি গাঁজা, ৭ বোতল বিয়ার এবং ১ বোতল বিদেশি মদ। এ বছরের শুরু থেকে ৫৫ বিজিবির আওতায় মোট ১৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকার চোরাচালানি ও মাদক দ্রব্য আটক করা হয়েছে।