ভোরের খবর ডেস্ক: ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসই পৃথিবী গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) কাতারের দোহায় ‘আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনে’ বক্তৃতাকালে এ আহ্বান জানান তিনি।ড. ইউনূস বলেন, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সবুজ, স্থিতিস্থাপক ও টেকসই বিশ্ব গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। তিনি মনে করেন, এই ভবিষ্যৎ জ্ঞান, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির সংমিশ্রণে গড়ে উঠবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি নতুন সামাজিক চুক্তি তৈরির মোক্ষম অবস্থানে রয়েছে। এই চুক্তিতে রাষ্ট্র ও জনগণ, বিশেষ করে যুবসমাজকে গুরুত্ব দিয়ে, ন্যায়বিচার, মর্যাদা ও সমতার ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের সুযোগ রয়েছে।তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশকে একটি আশার বাতিঘর হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য সামাজিক ব্যবসা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও মাইক্রো ফাইন্যান্সের ভূমিকা নতুন করে মূল্যায়নের আহ্বান জানান তিনি, যা প্রান্তিক জনগণের জন্য অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, একটি টেকসই, সহনশীল ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য এখনই সময় সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার। এই ভবিষ্যৎ গড়তে হলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও প্রান্তিক জনগণের ক্ষমতায়নকে মৌলিক ভিত্তি হিসেবে নিতে হবে।তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্ব নানা হুমকির মুখে রয়েছে- যেমন জলবায়ু পরিবর্তনের দ্রুততা, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, মানবিক সংকট এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতার দুর্বলতা। আধুনিক প্রযুক্তি, নীতিমালা ও শাসন কাঠামো এমন গতিতে পরিবর্তন আনছে যে, অতীতের অনেক ধারণা এখন অচল হয়ে পড়ছে। এই বাস্তবতায় আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতা আরও জোরদার করা জরুরি।
ড. ইউনূস আহ্বান জানিয়ে বলেন, চলুন আমরা এমন এক পৃথিবী গড়ি, যেখানে কেউ এতটা দরিদ্র থাকবে না যে সে স্বপ্ন দেখতে পারবে না, আবার কোনো স্বপ্ন এত বড় হবে না যে তা পূরণ করা যাবে না। ভবিষ্যৎ এমন কিছু নয় যা আমরা উত্তরাধিকার হিসেবে পাই। এটি এমন কিছু যা আমরা তৈরি করি। এবং আমাদের প্রত্যেকেরই এতে ভূমিকা রয়েছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, সামনে যে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে তা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। তবে এগুলোর মোকাবিলায় উদ্ভাবন, সহমর্মিতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার শক্তি আমাদের হাতেই রয়েছে।
আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, কাতার এই সম্মেলনের মাধ্যমে দেখিয়েছে- জলবায়ু সংকট, সামাজিক বৈষম্য এবং কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ কীভাবে উদ্ভাবন, ঐতিহ্য ও অংশীদারিত্বের মাধ্যমে মোকাবিলা করা যায়।
এ সময় সামাজিক ব্যবসা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং মাইক্রোফাইন্যান্সের ভূমিকার কথা তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, এসব উপায়ের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগণের জন্য টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করা সম্ভব। তিনি সম্মেলনের আয়োজনের জন্য কাতার ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন শেখ মোজা বিনতে নাসের এবং ভাইস চেয়ারপারসন ও সিইও শেখ হিন্দ বিনতে হামাদ আল থানিকে ধন্যবাদ জানান।উল্লেখ্য, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান কাতারের মন্ত্রী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।