ঢাকারবিবার , ২ মার্চ ২০২৫
আজকের সর্বশেষ খবর

গ্রুপিং কোন্দলে নাজেহাল পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা বিএনপি


মার্চ ২, ২০২৫ ৮:৪১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

কেএম সবুজ:   পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলা বিএনপিতে চরম কোন্দল দেখা দিয়েছে। গ্রুপিংয়ের কারণে এক্কেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা এই দলটি। প্রতিবেদনটি লেখাকালীন সময়ে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৪ ই নভেম্বর ২০২৪ইং সাঁথিয়া উপজেলা বিএনপির ২৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে জেলা বিএনপি। সেখানে অন্য উপজেলার বাসিন্দা একজন নারী নেত্রীকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। যার সূত্র ধরেই কাঙ্খিত পদ বঞ্চিত ভিপি শামসুর রহমান সহ তার সমর্থকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়। এরপর ফুঁসে ওঠে সাধারণ মানুষ। দফায় দফায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করে আসছিল তারা। এর মাঝেই সাঁথিয়া উপজেলা বিএনপির অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি ঘোষণার প্রস্তুতি নেয় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। সেখানেও চরম অসন্তোষ ও অভিযোগ উঠেছে নেতাকর্মীদের মাঝে। গত ১৯শে ফেব্রুয়ারী ২০২৫ইং কমিটি ঘোষণার আগে কোন কর্মী সম্মেলন না করে গ্রুপিং কোন্দলে বিএনপির একাংশের মধ্যে করমজা ইউনিয়ন বিএনপির ২১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক খাইরুন নাহার খানম মিরু ও সদস্য সচিব সালাউদ্দিন খান। তারপর থেকে ফুঁসে ওঠে বিএনপির পদ বঞ্চিত নেতাকর্মীরা। পাল্টা-পাল্টি কমিটি করতে গিয়ে সংঘর্ষের ও ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত হয় বিএনপির অন্তত ৩ নেতাকর্মী। তাদের মধ্যে থেকে গুরুতর আহত হওয়ায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নেওয়া হয় স্বপন হোসেন(৪৫) নামের এক বিএনপি সমর্থককে। অভিযোগ উঠেছে করমজা ইউনিয়ন সদ্য ঘোষিত বিএনপির আহ্বায়ক মোজাফফর হোসেন করমজা ইউনিয়ন আওয়ামিলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হোসেন আলী বাগচির লোকজন নিয়ে হামলা চালিয়ে আহত করেছে।

এ বিষয়ে করমজা ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক মোজাফফর হোসেনের জানতে চাইলে তিনি জানান, সাঁথিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির পক্ষ থেকে আমাকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। যারা পদ বঞ্চিত হয়েছে তারা আমার বাড়িঘরে হামলা ও লুট করতে এসেছিল আমি আমাদের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে প্রতিহত করেছি। এখানে আওয়ামিলীগের কেউ ছিল না। যারা বেড়া পৌর মেয়র আব্দুল বাতেনের সাথে আতাত করে রাজনীতি করেছে তারা পদ বঞ্চিত হয়েছে।

তাদের মধ্যে থেকে পদ বঞ্চিত করমজা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ মজনু অভিযোগ তুলে বলেন, আমি একজন তৃণমূল কর্মী। দীর্ঘ ১৭ বছরে বিএনপির বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে আমি বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে অংশগ্রহণ করেছি। কিন্তু এই পকেট কমিটিতে যাদের নাম রয়েছে তাদের কোনদিন আমি আন্দোলন সংগ্রামে দেখিনি। আমরা করমজা ইউনিয়ন বিএনপির যে আহ্বায়ক কমিটি হয়েছে তা অবৈধ আখ্যা দিয়ে গণতান্ত্রিক পন্থায় করমজা ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে একটি কর্মসূচি দিয়েছিলাম। সেখানে করমজা ইউনিয়ন বিএনপির সদ্য ঘোষিত আহ্বায়ক মোজাফফর হোসেন করমজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও করমজা ইউনিয়ন আওয়ামিলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হোসেন আলী বাগচির পালিত দলবল নিয়ে আমাদের উপর হামলা করেছে। যেখানে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩ জন গুরুতর।

তবে গ্রুপিং কোন্দলে নাজেহাল সাঁথিয়া উপজেলা বিএনপি। ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে এর ফলাফল কেমন হতে পারে এমন প্রশ্ন নিয়ে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সালাউদ্দিন খানের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।

গ্রুপিং কোন্দল নয় বরং ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে অনৈতিক ভাবে সুবিধা গ্রহণের মধ্যে দিয়ে কমিটি গঠন করার কারণে সাঁথিয়া উপজেলা বিএনপিতে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলে ভিপি শামসুর রহমান জানান, আসলে গ্রুপিং সাঁথিয়াতে ছিল না। মূলত সাঁথিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দেওয়ার পরেই নেতাকর্মীদের মাঝে এমন প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যাকে আহ্বায়ক করেছে সে গোপালগঞ্জের শেখ পরিবারের পুত্রবধূ শেখ শওকত হোসেন নিলুর স্ত্রী। অন্য উপজেলার বাসিন্দা। সে আন্দোলন সংগ্রামে কোন সময় এই উপজেলায় উপস্থিত ছিলেন না। তাকে আহ্বায়ক দেওয়ার কারণে এই কোন্দল বেড়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

দিন যতই পেড়িয়ে যাচ্ছে ততই ঘনিয়ে আসছে জাতীয় নির্বাচন। পাবনা-১(বেড়া-সাঁথিয়ায়) আসনে তৎকালীন বিএনপির জোট সরকারের সময়ে জামায়াতের দখলে ছিল আসনটি। নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াত রাজনীতির মাঠ দখলে রাখলে ও গ্রুপিং কোন্দলে নাজেহাল পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা বিএনপি। আসলে জেলা বিএনপির নেতাদের এই গ্রুপিং কোন্দল নিরসনে কোন জোড়ালো ভূমিকা আছে কিনা এমন প্রশ্নে পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি যেহেতু বাংলাদেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দল সেক্ষেত্রে গ্রুপিং কোন্দল থাকবে এটাই স্বাভাবিক।তবে আমরা ইতিমধ্যে গ্রুপিং কোন্দল ভুলে এক ছাতার নিচে জড়ো হয়ে পাবনায় ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি জন-সমাগম উপস্থিত  করেছি। দিন যতই পেড়িয়ে যাচ্ছে ততই ঘনিয়ে আসছে জাতীয় নির্বাচন সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির তুলনায় জামায়াতের দখলে আসনটি এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,যেহেতু জামায়াতের সাবেক আমীরের বাড়িই পাবনার-১ আসনে ছিল সেক্ষেত্রে জামায়াতের দখলে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবুও সাঁথিয়া উপজেলা বিএনপির গ্রুপিং কোন্দলের কারণে একটু সমস্যা হলেও পরবর্তীতে যেই নমিনেশন পাবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা মেনে কাজ করবে বলে আমি আশাবাদী।

উল্লেখ্য , বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচনে জন সমর্থন পেতে গ্রুপিং কোন্দল ভুলে জনগণের পাশে থেকে কাজ করে যাওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলা বিএনপিতে চরম এই কোন্দলে জনগণের মাঝে এক প্রকার আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবেদনের জরিপ অনুযায়ী সাঁথিয়া ও এর বিভিন্ন ইউনিয়ন বিএনপির মধ্যে চরম অসন্তোষের তিনটি কারণ তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে এসেছে। তার মধ্যে ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করা, বিএনপির অসময়ে মাঠে থাকেনি অর্থ্যাৎ হাইব্রিডদের কে পদে বসানো এবং অর্থের বিনিময়ে পদ বিক্রি করা। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে আগামী দিনের পাবনা-১ এর এই চ্যালেঞ্জিং আসনটিতে হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে উপজেলা বিএনপি !

✅ আমাদের প্রকাশিত কোন সংবাদের বিরুদ্ধে আপনার অভিযোগ  বা পরামর্শ থাকলে ই-মেইল করুনঃ dailyvorerkhabor@gmail.com❌ বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।