ভোরের খবর ডেস্ক: ২০২৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনের দিন বিএনপিপন্থি আইনজীবী ও সাংবাদিকদের হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা এবং নির্বাচন জালিয়াতির অভিযোগে আওয়ামী লীগপন্থি ৪০ আইনজীবী ও সাবেক ডিবি প্রধান হারুনসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ শাহবাগ থানাকে গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শুনানি শেষে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বাদী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বার এসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী সদস্য এবিএম ইব্রাহিম খলিল মানবজমিনকে বলেন, গত ১৯শে সেপ্টেম্বর শাহবাগ থানায় ৪০ আইনজীবী ও সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করি। কিন্তু শাহবাগ থানা মামলা গ্রহণ না করে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নালিশি মামলা দায়ের করি। গত বুধবার আদালত শুনানি শেষে অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করতে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে- সাবেক আইনমন্ত্রী মো. আনিসুল হক, সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এম আমিন উদ্দিন, বারের সাবেক সভাপতি এডভোকেট মমতাজ উদ্দিন ফকির, বারের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আব্দুন নুর দুলাল, সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরী, বারের সাবেক সম্পাদক এডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক, ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই-রাকিব, ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম, সাবেক ডিএজি এডভোকেট মোতাহার হোসেন সাজু, এডভোকেট মেসবাহুর রহমান (তাপসের সহযোগী), সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মো. মোরশেদ, এডভোকেট মনিরুজ্জামান, এডভোকেট ওজিউল্লাহ, এডভোকেট আজাহারুল্লা ভূঁইয়া, এডভোকেট সৌমিত্র সরদার, এডভোকেট শুভ, (সিলেট), এডভোকেট কাজল রশিদ বিশ্বাস, ব্যারিস্টার ইমরান (তাপসের সহযোগী), সাবেক ডিএজি এডভোকেট আসাদুজ্জামান মনির, সাবেক এ.এ.জি, এডভোকেট মিজান (বরগুনা), ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক জগলুল কবির, সাবেক এ.এ.জি সাইফ, এডভোকেট শাহ নেওয়াজ, সাবেক এ.এ.জি, মুকিম, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন-অর-রশিদ, ডিসি রমনা, (সুপ্রিম কোর্ট ইনচার্জ, ডিসি) মোহাম্মদ মমিন, রমনা জোনের সাবেক এডিসি হারুন, শাহবাগ থানার এসআই গোলাপ উদ্দিন মাহমুদ, এ.সি রমনা জোনের মো. বায়েজীদুর রহমান, ধানমণ্ডি জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার আব্দুল আল মাসুম, নিউ মার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুক, শাহবাগ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাহফুজুল হক ভূঞা, পুলিশ পরিদর্শক মো. গোলাম মোস্তফা, নায়েক মো. বাকী বিল্লাহ, মো. মঈনুদ্দীন, রাকিব সরকার, কিবরিয়া, রকিবুল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা ৪০/৫০ জন সন্ত্রাসী প্রকৃতির আইনজীবী ও ১০০ জন স্পেশাল পুলিশ সদস্য।
অভিযোগে যা বলা হয়, আসামি সাবেক ডিবি প্রধান হারুন-অর-রশিদের নির্দেশক্রমে রমনার সাবেক ডিসি মোহাম্মদ মমিন ও রমনা জোনের সাবেক এডিসি হারুনের নেতৃত্বে ২০২৩ সালের ১৫ই মার্চ সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৩-২০২৪ নির্বাচনকে বানচাল করার উদ্দেশ্যে ১,২ ও ৩নং আসামির নির্দেশনা ও সার্বিক পরিকল্পনায় ৪-২৫নং আসামিদের উপস্থিতিতে পুলিশ ও অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসী আইনজীবী আসামিগণসহ অজ্ঞাতনামা ১০০ পুলিশ সদস্য সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অডিটোরিয়ামে জোরপূর্বক প্রবেশ করে বিএনপি সমর্থক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও ভোটারদের হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাঠি দিয়ে আঘাত করতে থাকে। তৎসময়ে সদস্য পদপ্রার্থী আইনজীবী কাজী মোস্তাফিজুর রহমান আহাদ প্রতিবাদ করলে ২৯নং আসামি রাইফেলের বাঁট দিয়ে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে। অতঃপর ২৯নং আসামির সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যগণ আইনজীবী আহাদকে ফ্লোরে ফেলে বুট জুতা দিয়ে পিষ্ট করতে থাকে। এতে আইনজীবী আহাদ মারাত্মকভাবে আহত হন। তৎপর ৪নং আসামি আইনজীবী রেজাকে চড়-থাপ্পড় মারেন এবং ২৮নং আসামি ও তৎসঙ্গীয় পুলিশ সদস্যগণ আইনজীবী রেজাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে। এ সময় বারের নির্বাচিত সহ-সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান খান এগিয়ে আসলে ৩৪নং আসামি ও তার সঙ্গীয় পুলিশ তাকেও রাইফেলের বাঁট ও বুট জুতা দিয়ে এলোপাতাড়ি লাথি ও আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে। আইনজীবী আয়েশা আক্তার নির্বাচন কমিশনারের সদস্য দায়িত্ব পালন করতে গেলে ৬নং আসামি মারধর করে ফ্লোরে ফেলে দেয়। এরপর আয়েশা আক্তারের শরীরের বিভিন্ন স্থানে কিল-ঘুষি মেরে নীলা ফোলা জখম করে। ২৩নং আসামি তার হাতে থাকা পিস্তলের বাঁট দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে। অতঃপর ৬নং ও ২৩নং আসামি আয়েশা আক্তারকে টানা-হেঁচড়া করে অডিটোরিয়াম থেকে বের করে দেন। এ ছাড়াও এদিন পুলিশের লাঠিচার্জে ২৫ সাংবাদিক গুরুতর আহত হওয়া কথা উল্লেখ করা হয়।