মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি: মুন্সিগঞ্জে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। সিরাজদিখান ও শ্রীনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিতে বিভিন্ন দলের ৯ জন প্রার্থী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। তবে আওয়ামী লীগের দলীয় নৌকা প্রতীকে মনোনীত প্রার্থী আলহাজ্ব মহিউদ্দিন আহমেদ ও স্বতন্ত্র ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী ঢাকা মহানগর দক্ষিন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সারোয়ার কবীরের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আলহাজ্ব মহিউদ্দিন আহমেদ জয় লাভ করেন। তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর সিরাজদিখান ও শ্রীনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সারোয়ার কবীরের সমর্থক ও নেতাকর্মীর বাড়ীঘর ভাংচুর, মারধরসহ হাতের কবজি কেটে নেওয়ার মত অভিযোগ উঠে সদ্য নির্বাচিত সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মহিউদ্দিন আহমেদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। তবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থক ও নেতাকর্মী কর্তৃক স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের বাড়ীঘর ভাংচুর মারধরসহ নানা ভাবে হয়রানীর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলেও সদ্য নির্বাচিত সংসদ সদস্যের পুত্র আনিসুর রহমান রিয়াদ স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মারধরের ঘটনা সমূহ অপপ্রচার বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। এ নিয়ে তিনি তার ব্যক্তিগত ফেইসবুক আইডি থেকে সম্প্রতি একটি পোস্টও করেছেন। তিনি তার পোস্টে “১জন পরাজিত প্রার্থী আমাদের বিজয়কে মেনে নিতে না পেরে ফেইসবুক-সহ বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন অপপ্রচার করে যাচ্ছেন। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে আমাদের কোন নেতা-কর্মী এবং সমর্থকরা কোন সহিংসতা মারামারি বা প্রতিহিংসায় জড়িত হয়নি। যদি কোন এলাকায় কোন মারামারি হয়ে থাকে সেটা তাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা জমি জমা সংক্রান্ত। কেউ তাদের মিথ্যা প্রচারে বিশ্বাস করবেন না। বিগত এক মাসে তাদের মুখে অনেক মিথ্যা এবং গুজব শুনেছেন সেই ধারাবাহিক মিথ্যা প্রচারে এখনো সে লিপ্ত আছেন। আপনাকে অনুরোধ করবো মিথ্যা ছেড়ে সত্যের পথে আসুন।” মর্মে উল্লেখ করেন। এদিকে নির্বাচন পরবর্তী সংহিতা বন্ধে সদ্য নির্বাচিত সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মহিউদ্দিন আহমেদের নিরব ভুমিকা নিয়েও জণমনে প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। দলীয় ভাবে সহিংসতা বন্ধে কার্যকরি কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা আতঙ্কে দিন কাটানোসহ অনিরাপত্তায় ভুগছেন। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোসহ সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৭ জানুয়ারী নির্বাচনের দিন সন্ধ্যায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক সিরাজদিখান উপজেলার চিত্রকোট ইউনিয়নের খালপাড় গ্রামের বাসিন্দা নয়ন নামে এক দিন মজুরের হাতের কবজি কেটে ফেলে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকরা। বাসাইল ইউনিয়নের কাজীশাল গ্রামের বাসিন্দা আমির নামে এক সমর্থককে ছুরিকাঘাত, লতিব্দী ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক এজেন্টের বাড়ি ভাংচুর, হাফিজ নামে আরো এক এজেন্টকে মারধরসহ তার বাড়িঘর ভাংচুর, লতিব্দী ইউনিয়নের বাসিন্দা সাইফুল নামে এক সমর্থকের উপর হামলা চালানোসহ শ্রীনগর উপজেলার কয়কীর্তন গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য মীর আলী ও শ্রী মহেশের উপর হামলা চালায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকরা। এছাড়া সিরাজদিখান উপজেলার কোলা ইউনিয়ন পরিষদের ৩ ইউপি সদস্যকে হুমকি, শ্রীনগর উপজেলার কুকুটিয়া ইউনিয়নে আরো ৩ জন মহিলা ইউপি সদস্যসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক টুম্পা নামে এক নারীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থক ও নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। বাদ যায়নি শ্রীনগর উপজেলার হাসাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও। তাকেও হুমকি দিয়ে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মর্মে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী। এদিকে সমর্থক ও নেতাকর্মীদের সাথে ঘটে যাওয়া মারধর ও হামলার ঘটনাকে বিনপি জামাতের ২০০১ সালের নির্মম নৃশংসতার সাথে তুলনা করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সারোয়ার কবীর। তিনি সম্প্রতি তার ব্যক্তিগত ফেইসবুক আইডি থেকে এ সংক্রান্তে একটি পোষ্ট করে বলেন, “এ যেন বিনপি জামাতের ২০০১ সালের নির্মম নৃশংসতা। এটির নাম গনতন্ত্র নয়। যিনি নির্বাচিত হয়েছেন,উনাকে গনতন্ত্রের রীতিনীতি অনুযায়ী অভিনন্দন জানানো উচিত, কিন্তু উনি আমার কর্মীদের উপর সন্ত্রাসী তান্ডব চালানোর কারণে আমার কর্মীর ঝরে পড়া রক্ত উপেক্ষা করে আমি উনাকে অভিনন্দন জানাতে পারি না”। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সারোয়ার কবীরের একাধিক সমর্থক মুঠোফোনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকদের মারধর ও হামলার ভয়ে গ্রাম ছাড়া হয়ে থাকার কথা জানিয়েছেন। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থক ও নেতাকর্মী কর্তৃক তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে এবং তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন মর্মে সহিংসতা বন্ধে পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামণা করেন। এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মহিউদ্দিন আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে একটি অনুষ্ঠানে থাকার কথা জানান। পুনরায় ফোন করা হলে তিনি বলেন, আমি মৃত বাড়ীতে আছি পরে কথা বলবো এ বলে তিনি ফোন রেখে দেন। এ ব্যপারে সিরাজদিখান থানার ওসি মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা এই বিষয়টি কঠোর ভাবে দেখছি। কব্জি কাটার ঘটনায় সাথে সাথে আমরা এক জনকে আটক করেছি। যদি আপনারা কোথাও সহিংসতার খবর পান আমাদের জানান। আমরা তা কঠোর হাতে দমন করবো। সহকারী পুলিশ সুপার (সিরাজদিখান সার্কেল) মোস্তাফিজুর রহমান রিফাত বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের কাছে অভিযোগ আসা মাত্রই ব্যবস্থা নিচ্ছি।