নিজস্ব প্রতিনিধি: ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা–৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ তথ্য নিশ্চিত করে।
প্রেস উইং জানায়, রাজধানীর বিজয়নগরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে শরিফ ওসমান হাদি গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনাকে প্রধান উপদেষ্টা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনী পরিবেশে এ ধরনের সহিংসতা দেশের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। আহত হাদীর সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন এবং চিকিৎসা কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বিশেষ দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দ্রুত ও বিস্তৃত তদন্ত চালিয়ে হামলায় জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য গ্রহণ, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং হামলার পেছনে কোনো সংগঠিত পরিকল্পনা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখার নির্দেশও দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে কোনো ধরনের সহিংসতা বরদাশত করা হবে না। জনগণের নিরাপত্তা এবং প্রার্থীদের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। দোষী যে-ই হোক, তাকে আইনের মুখোমুখি করতেই হবে।তিনি সব রাজনৈতিক পক্ষ, কর্মী-সমর্থক ও নাগরিকদের শান্তি ও সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানান, যাতে আসন্ন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও নিরাপদ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হতে পারে।
জানা যায়, শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরের কালভার্ট এলাকায় হাদিকে গুলি করা হয়। তাকে উদ্ধার করে ২টা ৩৫ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা তিনি শুনেছেন, তবে কোথায় ঘটনা ঘটেছে তা প্রাথমিকভাবে জানা যায়নি।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ মো. ফারুক জানান, হাদির বাম কানের নিচে গুলি লেগেছে এবং তার অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। জরুরি বিভাগের রেসিডেন্ট সার্জন ডা. মোশকাত আহমেদ বলেন, গুলিবিদ্ধ হাদী বর্তমানে কোমায় আছেন এবং তার মাথায়ও গুলি লেগেছে।
এর আগে গত ১৩ নভেম্বর হাদী দাবি করেছিলেন, তিনি বিদেশি নম্বর থেকে ফোন ও বার্তার মাধ্যমে হত্যার হুমকি পাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছিলেন, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ৩০টি বিদেশি নম্বর থেকে তাকে হুমকি দেওয়া হয়—তাকে নজরদারিতে রাখা হচ্ছে, তার বাড়িতে আগুন দেওয়া, পরিবারকে ক্ষতি করা এবং তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
ফেসবুক পোস্টে তিনি আরও লেখেন, “১৪০০ শহীদের রক্তের ঋণ মেটাতে যদি আমাকে কিংবা আমার বাড়ি-ঘরকেও পুড়িয়ে দেওয়া হয়, তবু ইনসাফের লড়াই থেকে এক চুলও নড়ব না, ইনশাআল্লাহ।”
তিনি বিশ্বাস প্রকাশ করেন, একজন হাদীকে হত্যা করলেও দেশে আরও অসংখ্য হাদী জন্ম নেবে, স্বাধীনতার স্বর কখনো স্তব্ধ করা যাবে না। শেষ পর্যন্ত তিনি পরিবারের নিরাপত্তা আল্লাহর ওপর সোপর্দ করে শহিদি মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন।

