স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আরও সক্রিয় ও সুসংগঠিত ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ধানের শীষ বিজয়ী হতে পারলে দেশের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হবে। তাঁর ভাষায়, ধানের শীষকে বিজয়ী করার কোনো বিকল্প নেই—কারণ এই প্রতীককে জিতিয়ে আনলেই জনগণের ভাবনা, পরিকল্পনা ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ খুলে যাবে।
বুধবার বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক আলোচনায় তিনি এসব বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে যুবদল ও কৃষক দলের নেতারা ছাড়াও বিভিন্ন স্থরের নেতাকর্মীরা যোগ দেন। বক্তৃতার শুরুতেই তারেক রহমান বলেন, দেশের ভবিষ্যৎ গঠন করতে হলে শুধু পরিকল্পনা করলেই হবে না—সেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য মাঠে নামতে হবে, জনগণের কাছে যেতে হবে এবং তাদের আস্থা অর্জন করতে হবে।
তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “আপনার দল যে স্ট্রেইটকাট প্ল্যান উপস্থাপন করেছে, এরকম দীর্ঘমেয়াদি ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা কোনো রাজনৈতিক দলই দিতে পারেনি। যারা দেশ পরিচালনায় দায়িত্বে থেকেছে, তারাও জনগণকে এমন ভবিষ্যত-ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা দেখাতে সক্ষম হয়নি।” তাই তাঁর মতে এখন সময় পরিকল্পনাগুলো ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার—যাতে মানুষ বুঝতে পারে বিএনপি কী করতে চায় এবং কীভাবে করতে চায়।
তারেক রহমান আরও বলেন, অতীতে দেশে নানা পরিকল্পনা করা হলেও তার অনেকগুলোই নথির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। কিন্তু বিএনপি চায় জনগণের অংশগ্রহণ নিয়ে ধাপে ধাপে বাস্তবায়নযোগ্য কর্মপরিকল্পনা কার্যকর করতে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, দেশের সংকটময় মুহূর্তে অতীতে জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া দায়িত্ব পালন করে দেশকে নানা চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণ ঘটিয়েছেন। বর্তমান প্রজন্মের নেতাকর্মীদের ওপর এখন সেই দায়িত্ব এসেছে।
তিনি দলীয় কর্মীদের আহ্বান জানান—মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে তাদের সঙ্গে কথা বলতে, দলীয় পরিকল্পনাগুলো ব্যাখ্যা করতে এবং জনগণকে আশ্বস্ত করতে। তাঁর ভাষায়, “যদি আমরা সজাগ না হই, যদি মাঠে নেমে না পড়ি, তাহলে দেশ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাই এখনই আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ শুরু করতে হবে।”অনুষ্ঠানে তিনি ফ্যামিলি কার্ড, স্বাস্থ্য কার্ড, ফার্মার্স কার্ড, বেকারত্ব সমস্যা সমাধান, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, কৃষি রপ্তানি বৃদ্ধি, শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন, নগর পরিকল্পনা সহ বিএনপির অগ্রাধিকার খাতগুলো নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন।
নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, সারা দেশে ফ্যামিলি কার্ড চালু করে ধীরে ধীরে নারী সমাজকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা হবে—যা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করবে। কৃষিখাতে রপ্তানি বৃদ্ধি, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর চাষাবাদ এবং কৃষকের আয়ের নতুন সুযোগ তৈরি করার ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তনের প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা যেন ইংরেজি ও বাংলা ছাড়াও তৃতীয় আরেকটি আন্তর্জাতিক ভাষায় দক্ষ হতে পারে—এমন শিক্ষা কাঠামো তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি তিনি জানান, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে করদাতার অর্থ আর ‘মেগা প্রজেক্ট’ নয়—ব্যবহার করা হবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ উন্নয়নে।
স্বাস্থ্য খাতে ১০ লাখ স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, এদের মধ্যে অধিকাংশই নারী হবেন, যা কর্মসংস্থান ও স্বাস্থ্যসেবার মান—উভয় ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এখনই উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।নগরায়নের চ্যালেঞ্জ নিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরে খোলা জায়গা কমে গেছে—ফলে শিশু ও তরুণদের জন্য খেলার মাঠ নেই। বিএনপি ক্ষমতায় এলে প্রতিটি ওয়ার্ডে বাজার দরে জমি কিনে খেলার মাঠ তৈরি করা হবে।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার, মাহদী আমিনসহ যুবদল, কৃষক দল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের শীর্ষ নেতারা।এই আলোচনার সারমর্মে তারেক রহমানের বার্তা ছিল স্পষ্ট—দেশ গড়ার কাজটি দীর্ঘমেয়াদি, এতে সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন, আর সেই পথে এগোতেই ধানের শীষকে বিজয়ী করতে হবে বলে তিনি দলীয় কর্মীদের প্রতি দৃঢ় আহ্বান জানান।

