রংপুর প্রতিনিধি: বুধবার ৬ নভেম্বর রংপুর কমিউনিটি (ডক্টরস) হাসপাতালে রাত ১২টার দিকে বুকের ব্যথা নিয়ে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য মোকছেদুল ইসলাম (৫০) হাসপালে ভর্তি হন। বৃহস্পতিবার বিকেলে চিকিৎসকরা তার হার্টে রিং পরানোর কথা বলে । পরবর্তীতে তার হার্টে রিং পরানোর সময় ভুল চিকিৎসার কারণে মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।স্বজনদের অভিযোগ, পরিবারের সদস্যদের না জানিয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক একজনের স্বাক্ষর নিয়ে তড়িঘড়ি করে রোগীর অপারেশন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে ভুল চিকিৎসায় মোকছেদুল ইসলামের মৃত্যু হলেও বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। প্রতিবাদ জানাতে গেলে ভাড়াটে গুন্ডা দিয়ে তাদেরকে মারধোর করা হয় এবং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়া হয় । এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাসপাতালের পরিস্থিতি চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, চিকিৎসকের অবহেলা ও দালাল চক্রের প্রতারণার কারণে মোকছেদুল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে। বুধবারে ভর্তি হয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে চিকিৎসক মো. আবু জাহিদ বসুনিয়া তার এনজিওগ্রাম করেন। এ সময় রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রোগীর অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলের বন্ডে স্বাক্ষর করিয়ে চিকিৎসক দ্রুত রিং পরানোর সিদ্ধান্ত নেন এবং অপারেশন চলাকালেই রোগীর মৃত্যু হয়।তারা আরোও অভিযোগ করেন, রোগীর মৃত্যু হওয়ার পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টাকা হাতিয়ে নিতেই আইসিইউতে তাকে জীবিত দেখানোর চেষ্টা । অতপর ক্ষুব্ধ হয়ে স্বজনরা জোর করে আইসিইউতে প্রবেশ করে এবং মোকছেদুল ইসলামকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। কারমাইকেল কলেজ ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হলে মুহূর্তেই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পায়।
নিহতের অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে শাফিউল ইসলাম বলেন, ‘অপারেশন রুম থেকে শুধু বাবার ‘আ-আ’ শব্দ শুনেছি । পরে যখন আইসিইউতে নেওয়া হয়, বাবা কোনো নড়াচড়া করেননি । তখনই বুঝতে পারি আমার বাবা আর নাই । কিন্তু চিকিৎসকরা তা প্রকাশ করে নাই।নিহতের শ্যালক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আইসিইউতে ঢুকে দেখি দুলাভাই অনেক আগেই মারা গেছেন। আমি ফেসবুকে লাইভে গেলে হাসপাতালের গুন্ডারা আমার উপর চড়াও হয় । পরিচালককে বন্ডে অপ্রাপ্ত বয়স্কের স্বাক্ষরের নেয়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি কোনো উত্তর দেন নাই । তার পর আমাকে টেনে-হিঁচড়ে নিচে নামানো হয়, ৫০-৬০ জন মিলে মারধর করে। আমার মোবাইল ফোন নিয়ে নেয় এবং পাঞ্জাবি ছিঁড়ে ফেলে।’
এ ঘটনায় এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনরা দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও দালাল চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।স্থানীয়রা বলেন, হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত একটি দালাল চক্র প্রায় দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে অপারেশনের ব্যবস্থা করেছিল।এলাকাবাসী ও স্বজনরা দ্রুত ঘটনাটির নিরপেক্ষ তদন্ত এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও দালাল চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

