

নিজস্ব প্রতিবেদক: একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন—এটি দেশের নির্বাচনী ইতিহাসে একেবারে নতুন অভিজ্ঞতা। এই কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে গণভোট সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রচারণায় নামছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশনের ধারণা, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে ভোটারদের পরিচিতি থাকলেও গণভোট নিয়ে এখনও অনেকের জানাশোনা কম। তাই সংসদ নির্বাচনের প্রচারের পাশাপাশি গণভোট বিষয়ক প্রচারণাও চালানোর পরিকল্পনা করেছে সংস্থাটি।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন এবং জুলাই সনদের ওপর গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দেন। সরকারের এই সিদ্ধান্ত এখন ইসিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই ভোটের তফসিল ঘোষণা হতে পারে, যেখানে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে।
ইসি সূত্র জানায়, সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার মন্ত্রিপরিষদের মাধ্যমে ইতোমধ্যে কমিশনকে চিঠি দিয়েছে। ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ জানান, গত বৃহস্পতিবার পাওয়া চিঠিতে দুটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে—গণভোট আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন, এবং এটি জাতীয় নির্বাচনের একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে।
এ পরিস্থিতিতে ইসির প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো—ভোটারদের মধ্যে গণভোট সম্পর্কে যথাযথ সচেতনতা সৃষ্টি করা। এজন্য বেশ কিছু কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
এছাড়া এআই ব্যবহার করে ফেক নিউজ শনাক্তকরণ, গুজব প্রতিরোধে ফ্ল্যাশ নিউজ প্রচার এবং পোস্টাল ব্যালটের প্রচারণাও জোরদার করা হবে।
একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, ‘আইন পাস না হওয়া পর্যন্ত কমিশন এ বিষয়ে কাজ করতে পারবে না। আশা করা হচ্ছে আগামী সপ্তাহেই গণভোট আইন পাস হবে। এরপর কমিশন প্রস্তুতি শুরু করবে। গণভোটে চারটি পয়েন্টে হ্যাঁ/না ভোট হবে।’গণভোট আয়োজন নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘গণভোটের বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় এসেছে মাত্র কয়েকদিন আগে। এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবন্ধকতা দেখা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীরা সহযোগিতা করলে একটি সুন্দর নির্বাচন সম্ভব।’
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য এবং ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী বলেন, ‘একদিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট—উভয়ই সম্ভব, যদি সঠিক প্রস্তুতি, পর্যাপ্ত জনবল ও উন্নত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা যায়।’ তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, ভোটকেন্দ্র বাড়ানো প্রয়োজন নাও হতে পারে; তবে ব্যালট গণনায় দুই ধরনের আলাদা টিম লাগবে—একটি সংসদ নির্বাচনের ব্যালট গণনা করবে, অন্যটি গণভোটের।
তিনি আরও বলেন, ‘গণভোটের ক্ষেত্রে ব্যালট ইস্যু, গণনা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলাদা প্রশিক্ষণ জরুরি। প্রিজাইডিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের সঙ্গে আরও দুই-তিনটি সেশন যোগ করে গণভোট প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটেও দুটি ব্যালট ইস্যু করতে হবে। এগুলো চ্যালেঞ্জ নয়; বরং দায়িত্বেরই অংশ।’
ইসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমান ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬ কোটি ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ৯০৭, মহিলা ৬ কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার ৪২ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১ হাজার ২৩৪ জন।সরকার ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করছে। সেদিন গণভোটও অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণার পর দুই ভোট আয়োজনকে সামনে রেখে ইসি প্রস্তুতি আরও জোরদার করেছে।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ এ্যাড. নজরুল ইসলাম । ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দৈনিক ভোরের খবর,খন্দকার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান। অফিসঃ ১৫০ নাহার ম্যানসন (৫ম তলা) মতিঝিল বানিজ্যিক এলাকা,ঢাকা -১০০০। বার্তাকক্ষ-+৮৮০১৭৪৫-৩৫৪২৭৭