

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: গভীর শোক ও দুঃখের সঙ্গে জানানো যাচ্ছে যে, আমাদের দৈনিক ভোরের খবর-এর টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী’র প্রিয় বাবা, অধ্যাপক বাণীতোষ চক্রবর্তী (বাণী স্যার) আজ আর আমাদের মাঝে নেই।তিনি টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার ডুবাইল গ্রামের নিজ বাড়িতে রবিবার ৫ অক্টোবর দুপুর ৩:৩০ মিনিটে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন।পুনশ্চঃ রাত ২ টায় শুরু হয়ে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া কার্যক্রম সকাল ৬ টা পর্যন্ত স্থায়ী ছিলো।
অধ্যাপক বাণীতোষ চক্রবর্তী (বাণী স্যার) ছিলেন গোপালপুর ও উত্তর টাঙ্গাইলের শিক্ষা,সাহিত্য,সংস্কৃতি,নাট্য ও ক্রীড়া জগতের এক অবিসংবাদিত নাম। ছাত্র জীবনে,অধ্যাপনাকালিন সময়ে ও সাম্প্রতিক সময়েও তিনি ছিলেন অনন্য অবিস্মরণীয় এক ব্যক্তিত্বের নাম। ক্রীড়া,সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের এমন কোনো মাধ্যম নেই যেখানে তার পদচারনা ছিলো না। গান,নাট্যাভিনয়,উপস্থাপনা,বিতর্ক প্রতিযোগিতা,কবিতা আবৃত্তি,বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সহ সবকিছুতেই তাঁর ছিলো নিরবচ্ছিন্ন দখল।পাঠদানে শুধু কলেজের ক্লাসরুমে নয়, তিনি কলেজের বাইরেও সারাজীবন ছাত্র-ছাত্রী সহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষের প্রতি ছিলেন গুরুর মতো দায়িত্বশীল ও স্নেহময়। ছাত্র-ছাত্রীদের মানবিক মূল্যবোধ চর্চা,সাহিত্য-সাংস্কৃতিক জ্ঞানচর্চা,প্রতিভা অন্বেষণ,মননশীলতা,
বুদ্ধিমত্তা,নৈতিকতা ও ব্যক্তিত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে তার দিক নির্দেশনায় ছিলো বলিষ্ঠ পদক্ষেপ।আর এসব তিনি সবসময় নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে সম্পন্ন করতেন। ক্লাসরুমে পাঠদানে তার নান্দনিক উপস্থাপনা ও অভিনয় শৈলির চমৎকার কাব্যিক সংমিশ্রনের কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে তিনি ছিলেন এক ব্যতিক্রমী জনপ্রিয় আইডল। বিষয়ভিত্তিক পাঠদান প্রক্রিয়ায় তিনি তার স্বভাবসুলভ কৌশল অবলম্বন করে শিক্ষার্থীদের মন জয় করে নিতেন।
বাণী স্যার শিক্ষাকে কেবল পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতেন না। তিনি শিক্ষাকে জীবনমুখী করেছিলেন। তার শিক্ষাদানের ধরন ছিল বোধগম্য, সহানুভূতিশীল এবং অনুপ্রেরণামূলক।ছাত্রদের শুধুমাত্র পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে শেখাতেন না, বরং তাদের জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং নিজেকে দায়িত্বশীল করে গড়ে তুলতেও তিনি সমানভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা তাকে শুধু শিক্ষক বা অধ্যাপক হিসেবে নয়, বরং একজন পরামর্শদাতা, বন্ধু এবং জীবনের পথপ্রদর্শক হিসেবে মনে করতো সবসময় ।
শিক্ষা ও জ্ঞানের পাশাপাশি বাণী স্যারের সংস্কৃতি,শিল্প-সাহিত্য, সংগীত ও ক্রীড়ার প্রতি ছিল গভীর আগ্রহ ও প্রেম। তিনি সংস্কৃতি চর্চায় ছিলেন এক বটবৃক্ষের মতো অভিভাবক, যিনি নতুন প্রজন্মকে সঠিক লক্ষ্যে পৌছাতে পথপ্রদর্শক হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন আগে থেকেই।তার দৃষ্টিভঙ্গি, নৈতিকতা, মানবিকতা এবং উদার মনোভাব শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে অম্লান ছাপ রেখেছে। তিনি প্রায়শই বলতেন যে শিক্ষার মূল লক্ষ্য হলো শুধু জ্ঞান অর্জন নয়, বরং মানবিক গুণাবলী ও নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশ।
বাণী স্যার ছিলেন একজন বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন শিক্ষাবিদ, আদর্শ পিতা, সমাজসেবক এবং নাট্য ও সংস্কৃতিচর্চার পথ প্রদর্শক। তিনি ছিলেন একজন স্বহৃদয়বান ব্যক্তি। যে কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে তিনি সহজেই মিশে যেতে পারতেন। এজন্যই দল বল নির্বিশেষে সকলের কাছে তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা লক্ষণীয়।তার শিক্ষার্থীদের তিনি প্রতিনিয়তই বলতেন: শুধু শিক্ষিত নয়, বরং নৈতিক ও আদর্শবান মানুষ হিসেবে তোমাদের গড়ে উঠতে হবে।
তার শিক্ষাজীবন ছিল এক দীর্ঘ এবং সফল যাত্রা। তিনি টাঙ্গাইল জেলার শিক্ষা ক্ষেত্রে যে অবদান রেখেছেন, তা চিরকাল স্মরণীয় থাকবে। কলেজের শিক্ষক হিসেবে তার জীবন শুধুমাত্র পাঠদান ও পরীক্ষা পর্যালোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি শিক্ষার্থীদের জীবনের প্রতিটি সমস্যায় দিকনির্দেশনা দিতেন, তাদের মনের খেয়াল রাখতেন এবং যে কোনো সংকটে সমাধান খুঁজে দিতেন। তার এমন দৃষ্টান্তমূলক শিক্ষাদান পদ্ধতি স্থানীয় শিক্ষাব্যবস্থায় এক আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছিল।
তিনি সমাজসেবায়ও ছিলেন অগ্রণী। গোপালপুর ও উত্তর টাঙ্গাইলের শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির উন্নয়নে তিনি যে ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তিনি স্থানীয় স্কুল, কলেজ এবং সাংস্কৃতিক সংস্থায় সদা সক্রিয় ছিলেন। তিনি নিয়মিত যে কোনো সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতেন, নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করতেন এবং স্থানীয় ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তাদের আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে অনুপ্ররেণামূলক আলোচনা করতেন।
তার প্রয়াণ আমাদের সকলের জন্য গভীর শোকের কারণ। একজন মহান শিক্ষক, সমাজসেবক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব,
নাট্যাভিনেতা ও আবৃত্তিকার হিসেবে সকলেই তাকে একনামে শনাক্ত করতে পারেন।সেই মানুষটি আজ আমাদের মাঝে নেই—এই শূন্যতা কখনও পূর্ণ হবে না। আমরা তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমাদের আন্তরিক সমবেদনা ও সহানুভূতি প্রকাশ করছি।
দৈনিক ভোরের খবর পত্রিকার পক্ষ থেকে আমরা অধ্যাপক বাণীতোষ চক্রবর্তী (বাণী স্যার) স্যারের শিক্ষা, মানবিকতা, উদার মনোভাব এবং সমাজসেবায় অবদানের চিরন্তন মর্যাদাকে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি। তার জীবনের সকল অর্জন নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থী ও সমাজ সেবকদের জন্য চিরকাল অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। তার জীবনের প্রতিটি অধ্যায় আমাদের শেখায় কিভাবে জ্ঞান, সহমর্মিতা, ধৈর্য ও মননশীলতা দিয়ে সমাজ ও শিক্ষাজগতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা যায়।
মানুষ মানুষের জন্য,জীবন জীবনের জন্য-এই বাণীকে হৃদয়ে ধারণ করে সকল ধর্মের,সকল দলের,সকল শ্রেণির মানুষের সাথে তাঁর আন্তরিক সখ্যতা তাঁকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছেন।
বাণী স্যারের অবদান, তার শিক্ষাদান পদ্ধতি, তার উদারতা এবং মানবিক মনোভাব আমাদের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে। তার আদর্শ, নৈতিকতা ও দৃষ্টান্ত আগামী প্রজন্মের শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ এবং সমাজসেবকদের জন্য পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবে।আজ আমরা শোকাহত হয়েছি, তবে আমরা চাই তার স্মৃতি স্মরণের মাধ্যমে আমরা যেন নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে পারি। বাণী স্যারের বিদেহী আত্মা শান্তিতে থাকুক এবং তার বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন ও তার সকল অবদান আজীবন মানুষের হৃদয় মনে বেঁচে থাকুক।বাণী স্যারের কথামালা গুলো বিশ্ব মানবতার বাণী হয়ে আজীবন সমুজ্জ্বল থাকুক সকল হৃদয়ে।সকলের দোয়া/আশীর্বাদে ওপারে ভালো থাকুন স্যার এটাই কাম্য সবার।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ এ্যাড. নজরুল ইসলাম । ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দৈনিক ভোরের খবর,খন্দকার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান। অফিসঃ ১৫০ নাহার ম্যানসন (৫ম তলা) মতিঝিল বানিজ্যিক এলাকা,ঢাকা -১০০০। বার্তাকক্ষ-+৮৮০১৭৪৫-৩৫৪২৭৭