স্টাফ রিপোর্টার: নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপকে ইতিবাচকভাবে দেখছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে জুলাই সনদ চূড়ান্তের আগে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা সরকারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের শামিল বলে মনে করছে দলটি। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা জানিয়েছেন দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব। এ সময় এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ, যুগ্ম সদস্য সচিব (মিডিয়া) মুশফিক উস সালেহীনসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হাজারো শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা ছিল—বিচার ও সংস্কার। সেই লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন করে, যেখানে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো জাতীয় নাগরিক পার্টিও নিজেদের মতামত তুলে ধরে।তিনি বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ছয়টি উপায় নিয়ে ঐকমত্য কমিশনে মতামত পাওয়া গেছে, যার মধ্যে আমরা গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি। অন্যান্য দলের প্রস্তাবে গণভোট ও সংবিধান সংস্কার সভাসহ বিভিন্ন প্রস্তাব রয়েছে।
কোন প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়ন করা হবে, তার সঙ্গে নির্বাচনী প্রস্তুতির সম্পর্ক রয়েছে। এই আলোচনা চলাকালেই প্রধান উপদেষ্টার একপাক্ষিকভাবে নির্বাচনের সময় ঘোষণা আমাদের হতবাক করলেও বৃহত্তর স্বার্থে আমরা তা মেনে নিয়েছিলাম। প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, ২০২৬ সালের পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহে নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।
আরিফুল ইসলাম আরও বলেন, আমরা আশা করেছিলাম, নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশের আগেই সরকার সংস্কারবিষয়ক পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জনের রোডম্যাপ প্রকাশ করবে। কিন্তু হতাশার সঙ্গে লক্ষ্য করছি, অজানা কারণে ঐকমত্য কমিশনের পরবর্তী দফার বৈঠক পেছানো হয়েছে এবং এখনও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার উপায় নির্ধারণ হয়নি। জুলাই সনদ চূড়ান্ত না করে এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত না হয়ে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ঐকমত্য কমিশন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের শামিল।
এনসিপির এই নেতা বলেন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা থেকে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য নির্বাচন আয়োজন প্রয়োজন, আমরা কোনোভাবেই নির্বাচনবিরোধী নই। সেদিক থেকে রোডম্যাপ ঘোষণা ইতিবাচক। তবে, যত দ্রুত জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি হবে, তত দ্রুত নির্বাচনের দিকে যাওয়া যাবে। সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত না করে নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ ভবিষ্যতে সংকট তৈরি করতে পারে, যার দায় সরকারকেই নিতে হবে।সংবাদ সম্মেলনে গণপরিষদ নির্বাচন, নতুন সংবিধান, বিচার ও সংস্কারের দাবিতে উপজেলা পর্যায়ে ‘উঠানে নতুন সংবিধান’ শীর্ষক কর্মসূচি ঘোষণা করেন এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব আরিফ সোহেল।
এই কর্মসূচির আওতায় প্রথম ধাপে দেশের আট বিভাগ ও কুমিল্লা অঞ্চলের ২৫টি উপজেলায় ২৯ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার দিনব্যাপী এই কর্মসূচি পালন করা হবে।কর্মসূচি সম্পর্কে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, জুলাই পদযাত্রার মধ্য দিয়ে আমরা দেশের প্রতিটি জেলায় যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা দেখেছি, দেশের মানুষের মধ্যে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অবাধ অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজনের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। এখন আমরা উপজেলা পর্যায়ে আমাদের কার্যক্রম প্রসারিত করতে চাই। এর অংশ হিসেবে প্রথম ধাপে ২৫টি উপজেলায় এই কার্যক্রম শুরু হবে। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে অন্যান্য উপজেলাগুলোতেও এই কর্মসূচি পালন করা হবে। এর মাধ্যমে আমাদের গণপরিষদ নির্বাচন, নতুন সংবিধান, বিচার ও সংস্কারের দাবিগুলো প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে যাবে।