রংপুর প্রতিনিধি: রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের কিশামত হাবু দ্বিমুখী দাখিল মাদ্রাসায় পরীক্ষা চলাকালে এক শিক্ষার্থীকে কিশোর গ্যাং স্টাইলে হত্যার উদ্দেশ্যে টয়লেটে গিয়ে গলায় চেইন পেঁচিয়ে হকিস্টিক, চেইন, লাঠি ও লোহার সিক দিয়ে বেধড়ক মারধরের ঘটনা ঘটেছে । ঘটনায় গুরুতর আহত দশম শ্রেণির ছাত্র শাওন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপালে ভর্তি রয়েছে ।
ঘটনাটি ১০ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরে মাদ্রাসার টয়লেটে গেইট বন্ধ করে ঘটানো হয়েছে । স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই দিন মাদ্রাসায় পরীক্ষার সময় শাওন টয়লেটে গেলে ওই প্রতিষ্ঠানের ৬ জন শিক্ষার্থী তাকে অনুসরণ করে টয়লেটের ভিতর আটক করে মারধর শুরু করে। হামলাকারীরা হলেন একই প্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণির ছাত্র গালিব, মুহিবুর রহমান, আল-আমিন, ইমন, মারুফ ও নাজির।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, টয়লেটের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে শাওনকে এলোপাতাড়ি চেইন, লোহার সিক ও লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। চিৎকার শুনে এক সহপাঠী এগিয়ে গেলে তাকেও মারধর করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় তারা। ঘটনার সময় ২ জন শিক্ষক দেখলেও তারা এগিয়ে আসেন নি , পরে চিৎকার শুনে বেশকয়েকজন জড়ো হয়ে শাওনকে উদ্ধার করেন এবং হামলাকীদের মাদ্রাসা অফিসে আটক করে রাখেন। স্থানীয়দের সহায়তায় শাওনকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এলাকাবাসীরা বলেন, হামলাকারী বকাটে কিশোররা বিভিন্ন সময়ে সিনিয়র – জুনিয়র সহপাঠীদের উপর হামলা করেছে। তবে প্রতিবার মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি প্রকাশ না করে নিজেদের মধ্যে মিমাংসা করে দিয়েছেন।
এলাকার সচেতন মহল মনে করছেন, পূর্বে ঘটে যাওয়া এমন ঘটনায় মাদ্রাসা কতৃপক্ষ কঠোর কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটানোর পরোক্ষ কারণ ।
স্থানীয় শহিদুল ইসলাম বলেন, আগেও ওরা অনেককেই ভয়ভীতি দেখাইছে। এইবার তো মনে হইলো ওরে মেরেই ফেলত। শাওনকে আহতকারী কিশোরদের মধ্যে উশৃংখল কিশোর গ্যাং – এর সব বৈশিষ্ট্য আছে।মাদ্রাসার সুপারেনটেন্ড বলেন, ঘটনার পরপরই অভিযুক্তদের অফিস রুমে বন্ধ করে রাখা হয়। আর আমরা স্থানীয় প্রতিনিধিদের জানিয়েছি।
ঘটনার পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা পরিস্থিতি শান্ত করতে গেলে উত্তেজনা বাড়ে। পরবর্তীতে খবর পেয়ে গঙ্গাচড়া মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ভুক্তভোগীর অভিযোগ লিখিত অভিযোগ না থাকার অজুহাতে মব ভায়োলেন্সের আশংকা সত্বেও ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন, একদিকে ভুক্তভোগীর পরিবার শাওনকে চিকিৎসার ব্যবস্থার জন্য ব্যাস্ত ছিলেন। পুলিশ চলে গেলে নিরূপায় ভুক্তভোগী পরিবার সেনাবাহিনীর সহযোগীতা কামনা করলে, সেনাবাহিনীর একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আনে। অবশেষে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে গ্রাম্য শালিসের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয় এবং হামলাকারীদের অবিভাবকদের মুচলেকা নিয়ে ভবিষ্যতে এমন ঘটনায় জড়িত না থাকার শর্তে ছেড়ে দেয়।