নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় বৈঠকে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই বৈঠকের মাধ্যমে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। সংস্কার ইস্যুতে বৈঠক হলেও রাজনৈতিক দলগুলো বৈঠকে নির্বাচন বিষয়ে আলোচনা করতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। যদিও আজকের বৈঠকে একসঙ্গে সব দলের নেতাদের নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করবেন বলে জানানো হয়েছে। শুরুতে তিনি বক্তব্য দিতে পারেন। পরে দলগুলোর নেতারা কথা বলবেন।
বৈঠকে আমন্ত্রণ পাওয়া পাঁচটি রাজনৈতিক দলের নেতা জানিয়েছেন, সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা মঙ্গলবার দ্বিতীয় পূর্বে বৈঠক করবেন। এই ইস্যুতে একদফা বৈঠক এর আগেও হয়েছে। সেই বৈঠক থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলাফল আসেনি।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বৈঠকের বিষয়ে বলেন, আমরা মনে করি, আরও আগে পদক্ষেপ নেয়া উচিত ছিল। সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো আমরা বাস্তবায়ন চাই। রাজনৈতিক দলগুলোর আদর্শ ভিন্ন, সুতরাং সবাই সব বিষয়ে একমত হবে না।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, এটা বৈঠকের চেয়ে আনুষ্ঠানিকতা বেশি। নির্দিষ্ট কোনো অগ্রগতি নেই। রাজনৈতিক বিভাজন ও অচলাবস্থা থেকে উত্তরণের কোনো পথ নেই। মঙ্গলবার বৈঠকে নির্বাচনের রোডম্যাপ সুনির্দিষ্ট করার সুযোগ আছে। আমরা আশা করি, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এই বিষয়ে আশ্বস্ত করবেন যে, ডিসেম্বরেই নির্বাচন। সরকার যে জুন মাসে চাচ্ছে, তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। সুতরাং বৈঠকে আমাদের প্রত্যাশা, অচলাবস্থা অবসানে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেবেন।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, আমাদের জানানো হয়েছে, এটা দ্বিতীয় পর্যায়ের বৈঠকের উদ্বোধন। বৈঠকে গেলে আমরা বুঝতে পারবো। এরপরে আমাদের যে পরামর্শ এবং ভূমিকা, সেটা আমরা রাখবো।
ওদিকে ছয় সংস্কার কমিশনের দেয়া সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার বৈঠক আজ শুরু হচ্ছে। বৈঠকে ৩২টি রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিতব্য এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন ঐকমত্য কমিশনের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগামীকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে কমিশন। এর মাধ্যমে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু হবে। গত ২০শে মার্চ থেকে ১৯শে মে পর্যন্ত ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ৪৫টি অধিবেশনে সংলাপ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সাংবিধানিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে কমিশন। তবে বেশ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য এবং আংশিক ঐকমত্য হয়েছে। দ্বিতীয় দফার এই বৈঠক হবে বিষয়ভিত্তিক বলে জানিয়েছে কমিশন। যেসব মৌলিক বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেনি সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, নির্বাচন, সংস্কার ও বিচারের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চাইবো আমরা। কি কি সংস্কার হয়েছে, কোন কোন বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সে বিষয় আমরা জানতে চাইবো। আর আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের পরে নির্বাচনের পক্ষে মতামত দিয়েছি।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার বৈঠকে সুনির্দিষ্ট নির্বাচনের রোডম্যাপ সম্পর্কে জানাবে। দ্রুত নির্বাচন ও সংস্কারের রোডম্যাপ ঘোষণার কথা আমরা বলবো।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, নির্বাচন, সংস্কার ও বিচারের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চাইবো আমরা। আমরা সেপ্টেম্বরে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা এবং ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি। আর সংস্কারের যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য হয়েছে, সে বিষয়ে সনদ তৈরি করে ঘোষণা করতে আমরা পরামর্শ দেবো।