ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ আন্তর্জাতিক তামাক প্রক্রিয়াজাত কোম্পানি জাপান টোব্যাকোর ম্যানেজার মানিক রুহানির বিরুদ্ধে তামাক চাষীদের সাথে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। তামাক চাষীদের বোনাস ফাঁকি দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন লক্ষ,লক্ষ টাকা। এরিয়া ম্যানেজারের এরকম অভিনব প্রতারণার কারণে এবার তামাক চাষীদের লোকসান দেখা দিয়েছে। অনেক কৃষক ধারদেনা করে তামাক লাগিয়ে পড়েছেন বেকায়দায়। তামাক চাষীদের কাছ থেকে জানা যায়,কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী একর প্রতি জমিতে ভালো মানের তামাক অর্থাৎ প্রথম গ্রেড হলে তামাকের নির্ধারিত বাজার মূল্য থেকে ৪০ টাকা অতিরিক্ত বোনাস দেওয়া হবে।
কোম্পানির বর্তমান মূল্য তালিকা অনুযায়ী প্রথম গ্রেডের তামাাের দাম কেজিপ্রতি ২৩৮ টাকা।
আর বোনাসের ৪০ টাকা যোগ হলে বেড়ে দাড়ায় ২৭৮ টাকা।
সেকারণেই বাড়তি কিছু টাকা লাভের আশায় তামাক চাষীরা তাদের সর্বোচ্চ সময়শ্রম অর্থ খরচ করে চাষ করেছিলেন। তারা সার,কীটনাশক বেশি পরিমাণ জ্বালানি ব্যবহার করে প্রথম শ্রেণীর তামাক উৎপাদন করে বাজারজাত করেন। কিন্তু কোম্পানির কাছ থেকে কাঙ্খিত বোনাসের টাকা না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন এসব তামাক চাষীরা। এবিষয়ে সদর উপজেলার তামাক চাষী লতা মিয়া বলেন,আমি গরিব মানুষ পরের জমি লিজ নিয়ে,এনজিওর টাকা তুলে তামাক চাষ করি।
এবছর আমার তামাক অনেক ভালো হয়েছিল। সেজন্য ফিল্ড ম্যানেজার ইমরান হোসেন আমাকে বললো, আপনার তামাক ভালো হয়েছে আপনাকে কোম্পানি বোনাস দেবে।
আপনি তামাক ছোট ঘরে বেশি খড়ি ব্যবহার করে তামাকের ভালো কালার করেন। আমি সেভাবে তামাক তৈরি করে মোট ২৫০০ কেজি তামাক কোম্পানিতে দিয়ে থাকি। ম্যানেজার আমার তামাক প্রথম গ্রেড হিসাবে দাম দেয় কিন্তু বোনাসের টাকা দেয়নি।
অথচ আগের দিন তামাক জমা শেষে ফিল্ডম্যান বলেন,আপনি ৫৫ হাজার টাকা বোনাস পেয়েছেন।
আমি বোনাসের টাকা চাইতে গেলে এরিয়া ম্যানেজার বলেন,আপনার মোট তামাকের অর্ধেক প্রথম গ্রেড হতে হবে না হলে বোনাস হবেনা।
তামাক চাষী মোহাম্মদ নূর ইসলাম গামা জানান,জমি লিজ নিয়ে রাতদিন কষ্ট করে তামাক চাষ করি।
এবার সার,কীটনাশকের দাম বাড়তি হওয়ায় ধারধেনা করে তামাক লাগিয়ে ছিলাম খুব ভালো তামাক হয়েছিল আমার।
কোম্পানির কার্ডে মোট ২১০০ কেজি তামাক দিয়েছি ১ম গ্রেডে।
সেকারণে ফিল্ডম্যান ইমরান হোসেন আমাকে বললো আপনি ৪৮ থেকে ৫০ হাজার টাকা বোনাস পাবেন। কিন্তু ব্যাংকে টাকা তোলার সময় কোন বোনাস পায়নি। পরবর্তীতে ফিল্ডম্যান ও এরিয়া ম্যানেজার কাছে যায় তখন সে বলে আপনার কোম্পানির শর্তপূরণ হয়নি আপনার বোনাস দেওয়া যাবেনা। ভুক্তভোগী কৃষক হুমায়ুন কবির জানান, প্রতিবছর তামাক চাষ করি কষ্ট করে ভালো দাম পায় এবারো রাতদিন পরিশ্রম করে ভালো তামাক তৈরি করেছিলাম। আমি জাপান টোব্যাকোর কার্ডে প্রায় ২৫০০ কেজি প্রথম গ্রেডের তামাক বিক্রি করি। কোম্পানি আমাকে ৬৮ হাজার টাকা বোনাস দেবে বলে জানিয়েছিল এরিয়া ম্যানেজার।
এরপর ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগ করলে আর ফোন রিসিভ করেনা। আমরা এই প্রতারণার সঠিক বিচার চাই।
তামাক চাষীদে সাথে প্রতারণা ও অনিয়মের বিষয়ে জাপান টোব্যাকোর ম্যানেজার মানিক রোহানির কাছে মোবাইলে জানতে চাইলে সে বলেন,আমি কোম্পানির চাকরি করি,কোম্পানির নিয়মে চলি। কোম্পানি প্রতিবার তামাক চাষীদের ভালো তামাক উৎপাদন করলে বোনাস দেয়।
তবে এবার আমাদের কোম্পানি নতুন নিয়ম করেছে প্রতি একর জমির মোট উৎপাদনের অর্ধেক তামাক প্রথম গ্রেড করতে হবে।
সেকারণে অনেকেই এবার বাড়তি টাকা পায়নি। তবে যারা কোম্পানির শর্তপূরণ করতে পেরেছে তারা কমবেশি বোনাস পেয়েছে। তবে ম্যানেজার এই নিউজ না করার জন্য সাংবাদিকদের নিষেধ করেন।