স্বপন রবি দাশ,হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় যৌতুকের টাকা না পেয়ে এক গৃহবধূকে গরম খুন্তি দিয়ে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে স্বামী ও তার স্বজনদের বিরুদ্ধে। মামলার দুইজন পলাতক আসামিকে সেনাবাহিনী আটক করলেও পরে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ তাদের ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী লিজা আক্তার ওরফে নাজিরা আক্তার লিজা গত ২৭ এপ্রিল নবীগঞ্জ থানায় চারজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। আসামিরা হলেন—লিজার স্বামী শোয়াইবুর খান, ননদ রেবি খান, ভাসুর ফয়েজ খান ও দেবর হাবিবুর খান। তারা সবাই নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের বাসিন্দা। আর লিজা নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নের বড়চর গ্রামের ইলাছ মিয়ার কন্যা।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৪ নভেম্বর লিজার বিয়ে হয় শোয়াইবুর খানের সঙ্গে। শোয়াইব আইইএলটিএস সম্পন্ন করে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলে লিজার পরিবার থেকে তাকে প্রথমে ১৫ লাখ এবং পরে আরও ১২ লাখ—মোট ২৭ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এরপর ২০২৪ সালের ১৪ মার্চ দম্পতি ব্রিটেনে পাড়ি জমান এবং কিছুদিন স্বাভাবিকভাবে কাটলেও এরপর থেকেই শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা পুনরায় যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকেন।
জানা যায়, লিজার দেবর হাবিবুর খান যুক্তরাজ্যে যেতে চাইলে আসামিরা লিজার কাছে আরও ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। এতে লিজা অস্বীকৃতি জানালে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু হয়। একপর্যায়ে তার ননদ রেবি খান গরম খুন্তি দিয়ে লিজার দুই হাতে মারাত্মকভাবে আঘাত করেন। এতে লিজার শরীরের বেশ কিছু অংশ দগ্ধ হয়। এ সময় তাকে বেধড়ক মারধরও করা হয়।
অবস্থার অবনতি হলে কৌশলে তিনি তার ভাবী জাকিয়া সুলতানা জিবাকে ফোন করে জানালে পরিবার বিষয়টি নবীগঞ্জ থানায় জানায়। এরপর পুলিশ লিজাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। অভিযোগে বলা হয়, যৌতুক না পেয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা চেষ্টার চেষ্টা করা হয়েছে।
ঘটনার পর দীর্ঘ অনুসন্ধানের মাধ্যমে ৬ জুন সেনাবাহিনীর ওসমানীনগর ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন শাহরিয়ারের নেতৃত্বে একটি দল অভিযান চালিয়ে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দশগ্রাম এলাকার একটি বাড়ি থেকে মামলার দুই পলাতক আসামি রেবি খান ও ফয়েজ খানকে আটক করে। পরে তাদের বিশ্বনাথ থানায় হস্তান্তর করা হয় এবং সেখান থেকে নবীগঞ্জ থানায় পাঠানো হয়।
এ প্রসঙ্গে সেনাবাহিনীর মেজর মুবীন আর রহমান জানান, লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে অভিযুক্তদের অবস্থান নিশ্চিত করে অভিযান চালানো হয় এবং ৪ জনকে আটক করা হয়। তবে পুলিশ পরে দুজনকে গ্রহণ করে।
নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামরুজ্জামান জানান, “রেবি খান ও ফয়েজ খান নামের দু’জনকে আমাদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছিল। তবে তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া রেবি খানের সঙ্গে তার দুই বছরের কন্যাসন্তান ছিল এবং ফয়েজ খান ছিলেন অসুস্থ। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে তাদের অভিভাবকের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তদন্তে জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার বিচারহীনতার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন এবং পুনরায় আসামিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় মহলেও এই ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।