ভোরের খবর ডেস্ক: বিএনপি’র সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল এবং অঙ্গসংগঠন যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের যৌথ আয়োজনে চট্টগ্রামে তারুণ্যের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে যোগ দেন জাতীয় ক্রিকেট দলের তারকা ক্রিকেটার তামিম ইকবাল খান। এ ছাড়া লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। পাশাপাশি তিন সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের ১৮ কোটি মানুষ আওয়ামী লীগকে চায় না। শনিবার বিকাল সাড়ে চারটায় চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক পলোগ্রাউন্ড মাঠে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আয়োজিত এ সমাবেশে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ফেনী, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে যোগ দেন।
সমাবেশে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে আমরা এখানে সমাবেশ করছি। আরেকটা সমাবেশ হচ্ছে নিউ মার্কেট, আরেকটা ঢাকায়। দাবিটা কি? আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ আওয়ামী লীগকে চায় না। তারা দেশে ফ্যাসিবাদ বাকশাল কায়েম করেছে। প্রথম সংস্কার করেছে জিয়াউর রহমান, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, অর্থনীতির আজকে যে ভিত্তি গার্মেন্টস সেক্টর সেটাও জিয়াউর রহমানের অবদান। কেয়ারটেকার ব্যবস্থা এনেছেন খালেদা জিয়া। আজকে সবাই সবকিছু ভুলে যায়, বিদেশ থেকে এসে বড় বড় কথা বললে মানুষ ভুলে যাবে তাই না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের তরুণরা ব্যবসা চায়, চাকরি চায়। তরুণ সমাজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শান্তি চায়। একটা গণতান্ত্রিক দেশ চায়, যে যার কথা বলবে। আমরা সে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আজকে তারুণ্যের সমাবেশের একটা উদ্দেশ্য, তরুণরা আবার জেগে উঠো সমস্তকে চক্রান্ত ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জিয়াউর রহমান যুদ্ধ করেছেন গণতান্ত্রিক দেশের জন্য, খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের জন্য কাজ করেছেন। তারেক রহমান আধুনিক বাংলাদেশ করতে চান। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিক্রি করে কিছু চাই না। এ জন্য তারেক রহমান বলেছেন সবার আগে বাংলাদেশ। তিনি বলেছেন ফয়সালা হবে রাজপথে, সেটাই হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সুন্দর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হবে। যেখানে মানুষ মানুষকে ভালোবাসবে, মাথা উঁচু থাকবে দেশের। বাংলাদেশের পতাকাটা উড়বে পতপত করে। ওয়াসিমের রক্তের বিনিময়ে আমাদের নতুন স্বাধীনতা। তাকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে- এটা আশা করি।
যা বললেন তামিম: এদিকে বিকাল ৫টা ১৫ মিনিটে তামিম ইকবালও মঞ্চে ওঠেন। এ সময় পলোগ্রাউন্ডে উপস্থিত হাজার হাজার নেতাকর্মী তামিম ইকবালকে স্বাগত জানান। এ ছাড়া বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাকে উষ্ণ সংবর্ধনা জানান। তামিম হাত নেড়ে উপস্থিত জনতাকে শুভেচ্ছা জানান।
সমাবেশে তামিম ইকবাল বলেন, ‘আমি পলিটিক্যাল কেউ না। আমি একজন স্পোর্টসম্যান। তাই আমি স্পোর্টস নিয়ে কিছু কথা বলবো। একসময় মানে চট্টগ্রাম থেকে ৫-৬ জন করে ন্যাশনাল টিমে প্রডিউস করতো। কিন্তু লাস্ট ১০-১৫ বছর আগে সেরকম প্লেয়ার উঠে আসেনি।’ তিনি বলেন, ‘আমি চাইবো, আগামীতে যেন উঠে আসে। এজন্য কার জন্য কি প্রতিবন্ধকতা হয়েছে তা নয়। আমরা কেন ন্যাশনাল টিমে যেতে পারিনি তা দেখতে হবে। আর কি করলে আমরা স্পোর্টসে আরও অংশগ্রহণ করতে পারবো, অবদান রাখতে পারবো তা নিয়ে কাজ করতে হবে।’ এদিকে বিকালে সরজমিন দেখা যায়, মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন ছাত্র-শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। কেউ হেঁটে, কেউ বাসে আর কেউ ট্রাকে করে আসছেন। কেউ আবার ঢাক-ঢোলের তালে তালে। তাদের অনেকে সরাসরি পলোগ্রাউন্ডের দিকে চলে গেলেও কিছু টাইগারপাস মোড়ে জড়ো হচ্ছেন। বড় আকারের মিছিল নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তারা টাইগারপাসে এক হচ্ছেন বলে জানান নেতাকর্মীরা।
মূলত মহাসমাবেশটি তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বলা হলেও তাতে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় দলটির নেতা-কর্মী-সমর্থকদের যোগ দিতে দেখা গেছে। বেলা গড়াতেই নগরের ওয়াসা, সিআরবি, টাইগারপাস, কদমতলীসহ আশপাশের এলাকায় দেখা যায় পলোগ্রাউন্ডে সমাবেশে যোগ দিতে আসা ব্যক্তিদের নিয়ে বাস, মাইক্রোবাসসহ নানা ধরনের যানবাহনের ভিড়। তীব্র গরম ও প্রখর রোদ উপেক্ষা করে সমাবেশ শুরু আগেই লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠ। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েম, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বক্তব্য রাখেন।