ভোরের খবর ডেস্ক: সরকার জনগণের ন্যায্য দাবি শুনতে ও মানতে বাধ্য বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। রোববার (২৫ মে) বিকেলে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।তারেক রহমান বলেন, ‘অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধানের সঙ্গে দেখা করে রাজনৈতিক দলগুলো আবারও জাতীয় নির্বাচনের তারিখ সুস্পষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণান দাবি জানিয়েছে। বিএনপির দাবি আগামী ডিসেম্বরের ভেতরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বিএনপিসহ আমরা যারা এক সঙ্গে রাজপথে আন্দোলন করেছি, আমাদের সর্বাত্মক সমর্থন অব্যাহত রেখেছি। সুতরাং দেশে-বিদেশে সমান্বিত দক্ষ এবং যোগ্য ব্যক্তিত্ব অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানের নেতৃত্বে জনগণ অবিলম্বে দেশের ইতিহাসের সবেচেয়ে অবাধ নিরপেক্ষ একটি জাতীয় নির্বাচন দেখতে পাবে… আজকে এনপিপির এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এই প্রত্যাশা আমি রাখছি।’ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন বিএনপি সাথে যুগপথ আন্দোলনে থাকা ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি এর ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তারেক রহমান।
তারেক রহমান বলেন, ‘অন্তবর্তীকালীন সরকারকে নিয়মমাফিক বাজেট ঘোষণা করতে হবে। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে, প্রতিটি বছর জাতীয় বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঘাটতি বাজেট হচ্ছে মূল প্রতিবন্ধকতা। বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে এনবিআর হয়তো সরাসরি কোনো ভূমিকা নেই। তবে রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এনবিআরের ভূমিকা মূখ্য।’
তিনি বলেন, ‘এমন বাস্তবতায় বাজেট পাসের ঠিক আগ মুহূর্তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হঠাৎ করেই এনবিআরের সংস্কার চাপিয়ে দিয়ে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে যে একটি অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছে… এটি আমাদের অর্থনীতির জন্য খুব ভালো বিষয় নয়। এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক সরকার সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে সকলেই বিশ্বাস করে এবং বিশেষ করে গণতন্ত্রকামী জনগণ।’
তারেক বলেন, ‘দেশে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত থাকলে সরকারের পক্ষে ফ্যাসিবাদী চরিত্র ধারণ করা সহজ হয় না। সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সরকার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সরকারের চরিত্র যাই হোক, সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য করা না গেলে ক্ষমতাসীন সরকার হয়তো নিজেদের অজান্তেই স্বৈরাচারি হয়ে ওঠে। এই কারণে হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে হলেও নাগরিকদের সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা জারি রাখতে হবে। প্রতিটি নাগরিকদের নিজেদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার থাকতে হবে। দেশের জনগণ সরকারের করুণার পাত্র নয়। সরকারকে অবশ্য জনগণের ন্যায্য দাবি শুনতে ও মানতে বাধ্য। অন্তবর্তীকালীন এই সরকার জবাবদিহিমূলক নয়।’
তারেক রহমান আরও বলেন, ‘হাজারো শহীদের রক্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নৈতিক ও রাজনৈতিক বৈধ্যতার হয়ত সংকট নেই। তবে অবশ্যই অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক নয়। সরকার যেহেতু জবাবদিহিমূলক নয় সেহেতু নৈতিক কারণেই সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জনগণের সামনে স্পষ্ট থাকা প্রয়োজন। জনগণকে অন্ধকারে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোকে অনিশ্চয়তায় রেখে শেষ পর্যন্ত কেনো পরিকল্পনাই কার্যকর ও টেকসই হয় না, হবেও না। অনিশ্চিত অবস্থার সৃষ্টি।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যোগ্যতা অযোগ্যতা বিষয় নয়, দেশে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক সরকার না থাকায় একদিকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা নেমে এসেছে। অপর দিকে এক অনিশ্চিতকর রাজনৈতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দেশে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে একরমের অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। এ কারণে জনগণ প্রতিদিন আমরা দেখছি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে নেমে আসছে। যদিও আনফোরচুনেটলি তাদের এই দাবি-দাওয়া শোনার কেউ নেই এই মুহূর্তে। স্বৈরাচারের মাথাচাড়ায় সর্তক থাকুন।’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আমি একটি বিষয় গণতন্ত্রকামী জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, বাংলাদেশে জনগণের ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠায় যেকোনো ধরনের অজুহাত কিংবা গড়িমসির সুযোগ নিয়ে পতিত পলাতক পরাজিত স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠার অপেক্ষায় রয়েছে কিন্তু। এটি আজকে এখানে বিভিন্ন বক্তার বক্তব্যেও ফুটে উঠেছে। তবে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট তাবেদার অপশক্তির পূনর্বাসনের পথরোধ করা সম্ভব। আমরা নিজ নিজ দলীয় আদর্শ এবং কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রক্রিয়াগত বিরোধ দৃশ্যমান হলেও আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, দেশ ও জনগণের স্বার্থে ফ্যাসিবাদ মোকাবিলায় একতরফা ইস্যুতে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ বিগত ৫ অগাস্টের মতোই ঐক্যবদ্ধ।’
ন্যাশনাল পিপলস পার্টি(এসপিপি) সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মাহদী আমিন, বিএলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিম, ভাসানী জনশক্তির শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার একাংশের খন্দকার লুৎফুর রহমান, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।