অনলাইান ডেস্কঃ দিনে-রাতে সমানতালে চলছে পাথর লুট। মাঝে-মধ্যে অভিযান হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এই অবস্থায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে ভোলাগঞ্জের বাঙ্কার এলাকা। যেটি সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে এতদিন নিরাপদ ছিল। এলাকাবাসীর মতে, কোম্পানীগঞ্জের শারপিন টিলায় এখন আর টিলা নেই। কয়েকশ’ গর্তে পরিণত হয়েছে। তেমনিভাবে পাথর লুট অব্যাহত থাকলে বাঙ্কারও আর থাকবে না। ভোলাগঞ্জ কোয়ারির সাদাপাথর পর্যটন স্পটের পাশেই বাঙ্কারের অবস্থান। রেলওয়ের রূপওয়ে এলাকা। রেলওয়ের নিরাপত্তা রক্ষীরা বাঙ্কারের নিরাপত্তায় সব সময় নিয়োজিত থাকেন। গত ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের নাম করে চিহ্নিত পাথরখেকোরা বাঙ্কার এলাকায় হামলা করে। পিটিয়ে আহত করে কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মীকে। এরপর থেকে নিরাপত্তাহীনতার অজুহাতে বাঙ্কার থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছেন নিরাপত্তাকর্মীরা। দিনের বেলা টহল দিলেও বাঙ্কার রাত থাকে অনিরাপদ।
ভোলাগঞ্জ, কলাবাড়ি এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বাঙ্কার থেকে এরই মধ্যে শ’ শ’ কোটি টাকার পাথর লুট করা হয়েছে। এখন বাঙ্কারে শতাধিক গর্ত খুঁড়ে পাথর লুট করা হচ্ছে। বাঙ্কারের পাথর লুট বন্ধ করে ভোলাগঞ্জের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বিএনপি’র তরফ থেকে উপজেলা প্রশাসনের কাছে বার বার নালিশ দিলেও কোনো কাজ হয়নি। বিএনপি’র সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের জড়িত থাকার কারণে পাথর লুট বন্ধ করা যাচ্ছে না। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান করা হয়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বাঙ্কার এলাকার প্রতিটি গর্ত থেকে পুলিশ ও স্থানীয়দের নামে তিন হাজার টাকা করে চাঁদাবাজি করা হয়। এর বাইরে চলাচলকারী অন্তত ২ হাজার ট্রাক্টর থেকে ১৫০০ টাকা করে, দেড় হাজার নৌকা থেকে ৫০০ টাকা করে, ৫০টি ফেলুডার মেশিন থেকে ৬০০ টাকা করে চাঁদাবাজি করা হয়। সবচেয়ে বেশি চাঁদাবাজি হয় বোমা মেশিন থেকে। শতাধিক বোমা মেশিনের তাণ্ডবের কারণে ভোলাগঞ্জ পাথরশূন্য হচ্ছে। শ্যালো মেশিনের নামে পাথরখেকো যন্ত্রদানব শতাধিক বোমা মেশিন চালাচ্ছে। প্রতিটি বোমা মেশিন থেকে নেয়া হচ্ছে ১৫ হাজার টাকা করে। এই টাকার মধ্যে পুলিশের নামে ৫ হাজার, বিজিবি’র নামে ৫ হাজার ও স্থানীয় নেতাদের নামে ৫ হাজার টাকা ভাগবাটেয়ারা করা হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ভোলাগঞ্জের বাঙ্কার ও কোয়ারি এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক বাহারুল আলম বাহার ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রজন আহমদ। গত ৮ মাস ধরে তাদের নিয়ন্ত্রণেই চলছে ভোলাগঞ্জ কোয়ারি। তাদের সিন্ডিকেটে রয়েছে- পূর্ব ইসলামপুর ওয়ার্ড যুলীগের সভাপতি আজিদ মিয়া, কলাবাড়ি গ্রামের বিলাল আহমদ, মনির আহমদ, যুবলীগ নেতা হাবিল আহমদ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান, ইউপি যুবলীগ সভাপতি আলিম উদ্দিন। তারা পুলিশ ও বিজিবি’র লাইনম্যান হিসেবে এলাকায় পরিচিত। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র যৌথ সিন্ডিকেট এবার পাথর কোয়ারি লুট করে চলেছে। ভোলাগঞ্জের পশ্চিম অংশ থেকে বাঙ্কার এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে ভোলাগঞ্জে দুলা মেম্বার, তার ছেলে জাকির ও ইকবাল। তাদের সঙ্গে রয়েছে জাহাঙ্গীর, সাজন, নুরউদ্দিন, আনর, রুবেলসহ কয়েকজন। তারা বাঙ্কার এলাকার গর্ত থেকে ৩ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করে। ২৫-৩০টি শ্যালো মেশিন থেকে ১৫ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করে। গত ২৬শে এপ্রিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা ভোলাগঞ্জ কোয়ারি এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় তারা অন্তত ১০ জনকে আটক করে। এতে সাজা দেয়া হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান জানিয়েছেন, অভিযান দিলে একদিন বন্ধ থাকে। এরপর আবার শুরু হয়। নিয়মিত অভিযান পরিচালনার জন্য পুলিশের আরও বেশি লোকবল ও ম্যাজিস্ট্রেট থাকা দরকার। যারা পুলিশের নামে চাঁদাবাজি করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। ওদিকে ২০১৪ সালে শারপিন টিলা লুটের ঘটনায় ৪৭ জন লুটেরার একটি তালিকা করেছিল প্রশাসন। এবারো সেই সিন্ডিকেট পাথর লুট করছে। গত ৮ মাসে শতকোটি টাকার পাথর লুট করা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক হুঁশিয়ার আলীর নেতৃত্বে পাথর লুট চলছে। সঙ্গে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা বশর মিয়া ওরফে বশর কোম্পানী, আব্দুল কবির, যুবলীগ নেতা ও একাধিক মামলার আসামি আঞ্জু মিয়া, আইয়ূব আলী, সুহরাব আলী, ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক সেপুল আহমদ, থানা বিএনপি নেতা আজির উদ্দিন মেম্বার ও ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি ফয়জুর রহমান, থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বাবুল আহমদ, থানা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা ময়না মিয়া। শারপিন টিলার প্রতিটি গর্ত থেকে ৫ হাজার টাকা করে প্রশাসনের নামে ওই সিন্ডিকেট চাঁদাবাজি করে। এ ছাড়া চিকাঢর, নারায়ণপুর, জালিয়ারপাড়, নোয়াগাঁওয়ে প্রতিটি ট্রাক্টর থেকে ২০০ টাকা করে চাঁদাবাজি করা হয়। পাড়ুয়া এলাকায় থানা বিএনপি নেতা বাবুলের ভাগিনা রাশা ৩০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করে। শারপিন টিলা থেকে প্রতিদিন অন্তত ৫০০ ট্রাক্টর দিয়ে পাথর লুট করা হয় বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছেন। শারপিন টিলায় চাঁদাবাজির ঘটনায় গত রমজান মাসে একসঙ্গে পুলিশের ১৩ সদস্যকে কোম্পানীগঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। পূর্বের পাথর খাদক মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।