কেএম সবুজ: ছাত্র-জনতা হত্যা মামলায় চলতি মাসেই শুরু হচ্ছে শেখ হাসিনার বিচারকার্যক্রমএ পতিত শেখ হাসিনার আমলে জুলাই- আগস্টের ছাত্র আন্দোলনে ১ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। এদের অধিকাংশই বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এসব ছাত্র জনতার হত্যার প্রধান আসামি হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে দুই শতাধিক। ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত তিন শতাধিক অভিযোগ পড়েছে। বেশির ভাগ অভিযোগে প্রধান আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। দীর্ঘদিন ধরে চলে তদন্ত। গত মাসে বিচারকার্যক্রম শুরু না হওয়ায় ট্রাইব্যুনালের সামনে শহীদ পরিবার বিক্ষোভ করে। অনেকের মধ্যে শেখ হাসিনার বিচার নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। তবে গতকাল সেই ধোঁয়াশা কাটতে শুরু করেছে। চলতি মাসেই শুরু হচ্ছে গণহত্যায় জড়িত ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম। আগামী সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যার তদন্ত রিপোর্ট চিফ প্রসিকিউটর বরাবরে দাখিল করবে।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর এডভোকেট গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম মানবজমিনকে বলেন, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা সোমবার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে। সেটা নিয়ে পর্যালোচনা ও পুঙ্খানুপুঙ্খানু বিশ্লেষণ করা হবে। যাতে কোনো গ্যাপ না থাকে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সব ঠিকঠাক করে প্রতিবেদনটি দাখিল করা হবে। আশা করছি চলতি মাসেই শেখ হাসিনার বিচার কার্যক্রম শুরু হবে।
প্রতিবেদন দাখিলের ডেটলাইন জানা গেছে, ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর এডভোকেট তাজুল ইসলামের এক ফেসবুক পোস্টে। তবে পোস্টে কবে শুরু হতে পারে বিচার কার্যক্রম সে তথ্য উল্লেখ করেননি তিনি। পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, তদন্ত সংস্থা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যার তদন্ত রিপোর্ট আগামী সোমবার চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে দাখিল করবে। তদন্ত রিপোর্ট দাখিল হওয়ার পর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ অর্থাৎ ফরমাল চার্জ দাখিলের মাধ্যমে হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হবে।
গত ২০শে এপ্রিল চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন যেকোনো মুহূর্তে দাখিল হতে পারে। তদন্ত প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। তবুও অধিকতর সতর্কতা ও স্বচ্ছতা অবলম্বন করার জন্য আমরা দুই মাস সময় চেয়েছি। আদালত সেটা মঞ্জুর করে আগামী ২৪শে জুন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করেছেন। তদন্তের জন্য আমরা পর্যাপ্ত সাক্ষীদের সাক্ষ্য নিয়েছি। বিভিন্ন ধরনের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ যেমন সিসিটিভি ফুটেজ, ক্যামেরা কিংবা ড্রোন ফুটেজ আমরা সংগ্রহ করেছি। তদন্তের একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে মোটামুটি এটা বোঝা যাচ্ছে যে এসব অপরাধ রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে, সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির মাধ্যমে হাসিনা তার মন্ত্রিপরিষদ, পুলিশ বাহিনীসহ সকলকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এবং তারা এই পরিকল্পনা সাজানো থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নে কাজ করেছে।
উপস্থাপিত চার্জশিটের ওপর শুনানিতে ট্রাইব্যুনাল সন্তুষ্ট হলে চার্জ গঠন ও বিচার শুরুর নির্দেশ দেবেন ট্রাইব্যুনাল। এরপরই শুরু হবে সাক্ষ্যগ্রহণের পালা। সাক্ষ্যগ্রহণের সময় প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করে ঘটনার সত্যতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। তারপর প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের আইনজীবী তাদের নিজ নিজ দাবির পক্ষে আইন, প্রসিডিংস ও যুক্তি উপস্থাপনের পর বিচারকরা রায়ের দিন ধার্য করবেন। সাবেক জেলা ও দায়রা জজ ড. শাহজাহান সাজু মানবজমিনকে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেহেতু দেশে নাই। আইনানুযায়ী তার অনুপস্থিতিতেই বিচার কার্যক্রম চলবে। চাইলে রাষ্টের পক্ষ থেকে একজন আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারেন।