রংপুর প্রতিনিধি: রংপুরের গঙ্গাচড়ায় পাটক্ষেত থেকে মাদ্রাসা ছাত্র শিশু জিসান হোসেন রাহিমের (৮) এর লাশ উদ্ধার করে, পরবর্তীতে হত্যাকারীকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। ৩১ মে (শুক্রবাবার) সকালে হত্যাকারীর ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।নির্মম হত্যাকান্ডের স্বীকার জিসান বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদিকুল ইসলাম এতিমখানা ও হাফিজিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থী। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার মাগরিবের সময় জুতা কিনে দেওয়ার কথা বলে মাদরাসা থেকে ডেকে নেয় লালমনিরহাট কালিগঞ্জের সুন্দ্রাহবি এলাকার আমির আলীর ছেলে সোহেল রানা। জুতা কিনে দেওয়ার পর কৌশলে রাহিমকে পাটক্ষেতে নিয়ে গিয়ে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যাসহ দুই হাত ভেঙে মুখে মাটি ঢুকিয়ে দেয়।সকালে স্থানীয়রা জিসানের লাশ দেখতে পেলে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।
এই নির্মম ও নারকীয় হত্যা কান্ডের সাথে জরিতদের ফাঁসির দাবিতে ৩১ মে সকালে গঙ্গাচড়া বাজার জিরো পয়েন্টে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে ইসলামি আন্দোলনের উপজেলা সেক্রেটারি ইউনুছ আলী বলেন, জিসানকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে এটা মেনে নেয়া যায় না। হত্যাকরী সোহেল রানার ফাঁসি এবং এই হত্যা কান্ডের সাথে জরিতদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
উপজেলা যুবদলের আহববায়ক সাজু আহমেদ স্বপন বলেন, আমি নিষ্পাপ জিসানের হত্যাকারীর ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি এবং জরিতদের তদন্ত সাপেক্ষে গ্রেফতার করতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আর যদি পুলিশ প্রশাসনের গাফিলতি প্রকাশ পায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা৷ করা হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী উপজেলা নায়েবে আমীর নায়েবুজ্জামান বলেন, জিসানের মতো আর কোন নিষ্পাপ শিশুকে যেন এমন মর্মান্তিক ঘটনার শিকার হতে না হয়, এ জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে সিসি ক্যামেরা লাগাতে হবে। দায়িত্বরত সকলকে সচেতন থাকতে হবে। হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে সমাজে একটি ইতিবাচক ম্যাসেজ পৌঁছে দিতে হবে।
গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রেসক্লাবের পক্ষে সাংবাদিক মাহফুজ বলেন, মাত্র আট বছর বয়সী একটি শিশুর কোন অপরাধ থাকতে পারে না। নিষ্পাপ জিসান হত্যা কান্ড গোটা সমাজ ব্যবস্থাকে নাড়া দিয়েছে। মানববন্ধনে উপস্থিত হাজারো মানুষের উপস্থিতি তারই প্রমাণ। সুতরাং এই মর্মান্তিক হত্যা কান্ডের সুষ্ঠু বিচারে যদি প্রশাসনের কোন গাফিলতি দৃষ্টিগোচর হয়, তাহলে প্রশাসনের বিরুদ্ধেও কঠিন ও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।
উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আপেল মাহমুদ বলেন, জিসান হত্যাকান্ড নেহাত কোন ঘটনা নয়, খুনিকে গ্রেফতারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না, সে যেন আইনের ফাঁক দিয়ে বের হতে না পারে সেদিকে প্রশাসনকে নজর রাখতে হবে এবং তার সহযোগীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার না হলে, ভবিষ্যতে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হবে। হত্যার শিকার শিশু জিসানের মা বলেন, আমার একমাত্র সন্তান জিসানকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে।
আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বনকে যে আমার কোল থেকে কেড়ে নিয়েছে আমি তার ফাঁসি চাই।গঙ্গাচড়া সদর ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজার রহমান দুলু বলেন, জিসানকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, এটা নিসন্দেহে বর্বরোচিত ঘটনা। এই ঘটনার সাথে জরিত সকলের ফাঁসি দিতে হবে । প্রশাসনের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই, হত্যাকারীর সাথে যদি আরো কেউ জরিত থাকে তাকেও গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনুন। অন্যথায় সাধারণ মানুষ আপনাদেরকেও ক্ষমা করবে না।এবিষয়ে গঙ্গাচড়া মডেল থানা (ভারপ্রাপ্ত) অফিসার ইনচার্জ আল এমরান বলেন,এবিষয়ে ইতোমধ্যে একটি মামলা হয়েছে। আমরা শিশু জিসানের হত্যাকারীকে গ্রেফতার করেছি। তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অন্য কেউ জরিত থাকলে তাকেও গ্রেফতার করা হবে।