স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার আওতাধীন আশুলিয়া থানার জামগড়া এলাকায় রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা ও দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা এখন এলাকাবাসীর নিত্যদিনের দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই এলাকা তলিয়ে যায়, এবং পানি সরে যেতে সময় লাগে একাধিক দিন। ফলে লাখো মানুষ, বিশেষ করে পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা প্রতিদিন পায়ে নোংরা পানি লেগে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে বাধ্য হচ্ছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই জলাবদ্ধতার মূল কারণ অপরিকল্পিত আবাসন ও শিল্প কারখানা নির্মাণ, অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং বাসাবাড়ি ও কারখানার ময়লা পানি সরাসরি রাস্তায় ফেলা। অধিকাংশ বাড়ির চারপাশে উঁচু দেয়াল এবং নিজ উদ্যোগে তৈরি করা স্পিড ব্রেকারগুলোর কারণে পানি আটকে যাচ্ছে, ফলে স্বাভাবিক নিষ্কাশনের পথ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এর পাশাপাশি এলাকাবাসী আরও অভিযোগ করেছেন, জামগড়া এলাকাব্যাপী প্রাকৃতিক পানি নিষ্কাশনের একটি প্রধান মাধ্যম ছিল “নয়ন জলি খাল।” অথচ বর্তমানে এই খালটিও দখল ও ভরাটের কারণে কার্যত মৃতপ্রায়। বিশেষ করে তেতুলতলা ও মোল্লা বাজার এলাকায় খালের পাশে ড্রাম বসিয়ে পানি চলাচলের পথ বন্ধ করে জমি প্লট আকারে বিক্রি করা হয়েছে। এসব অবৈধ দখল ও স্থাপনা নির্মাণের পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর। তারা জানান, সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা কাদের দেওয়ান গং এর নেতৃত্বেই দীর্ঘদিন ধরে নয়ন জলি খালটির প্রাকৃতিক প্রবাহ রুদ্ধ করে জলাবদ্ধতা চরমে উঠেছে।
বিশেষ করে আইডিএস গার্মেন্টস এর সামনের এলাকা, দি রোজ গার্মেন্টস রোড, হেয়ন গার্মেন্টস রোড, বাঁশতলা চেয়ারম্যান বাড়ি রোডসহ পুরো শিল্পাঞ্চল জুড়ে জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নিচ্ছে। প্রতিদিন শত শত শ্রমিক এই দুর্গন্ধযুক্ত, নোংরা পানি মাড়িয়ে কর্মস্থলে যাচ্ছেন। এতে তারা টাইফয়েড, হেপাটাইটিস, চর্মরোগসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় কয়েকজন পোশাক শ্রমিকের সঙ্গে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের ঘামে দেশের রপ্তানি খাত চলে, অথচ আমরা নিজেরাই সবচেয়ে অবহেলিত। প্রতিদিন নোংরা পানি পেরিয়ে কাজে যেতে হয়, আর একটু অসুস্থ হলেই ছাঁটাইয়ের ভয়। চিকিৎসার ব্যবস্থাও নেই।”স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এ অবস্থাকে জনস্বাস্থ্য সংকটের পূর্বাভাস হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, জলাবদ্ধতা শুধু শ্রমিকদের নয়, এলাকার শিশু, বৃদ্ধ ও শিক্ষার্থীদেরও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলছে।
এ প্রসঙ্গে জামগড়া এলাকার এক স্থানীয় শিক্ষক বলেন, “আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে যেতে পানির মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হয়। তাদের অনেকেই পায়ে ক্ষত ও নানা সংক্রমণে ভুগছে। এই শিল্পাঞ্চলে লক্ষাধিক মানুষের বসবাস, অথচ মৌলিক নাগরিক সুবিধার চিত্র অত্যন্ত করুণ। এটি উন্নয়নের ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি।”
এলাকাবাসী ও সচেতন মহল দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সাভার উপজেলা প্রশাসন, আশুলিয়া থানা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তারা বলেন, একটি জনবহুল শিল্পাঞ্চলে এমন বেহাল পরিস্থিতি দেশের উন্নয়ন চিত্রের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। জরুরি ভিত্তিতে সুষ্ঠু নিকাশী ব্যবস্থা, নয়ন জলি খাল পুনঃখনন ও দখলমুক্তকরণ, পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং অবৈধ পানি নিষ্কাশন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ এ্যাড. নজরুল ইসলাম । ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দৈনিক ভোরের খবর,খন্দকার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান। অফিসঃ ১৫০ নাহার ম্যানসন (৫ম তলা) মতিঝিল বানিজ্যিক এলাকা,ঢাকা -১০০০। বার্তাকক্ষ-+৮৮০১৭৪৫-৩৫৪২৭৭