ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১০ এপ্রিল ২০২৫
আজকের সর্বশেষ খবর

৬৮ পাবনা-১ (বেড়া,সাঁথিয়া) অন্ত কোন্দলে দিশেহারা বিএনপি আসন দখলে এগিয়ে জামায়াত সক্রিয় আওয়ামিলীগও


এপ্রিল ১০, ২০২৫ ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

কেএম সবুজ:  আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে ব্যাপক অস্থিরতা। জনগণের মাঝে বিরাজ করছে এক অন্যরকম অনুভূতি। দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদের হস্তক্ষেপে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থী কিংবা দলকে ভোট দিতে পারেননি সাধারণ ভোটাররা। তাইতো অবাধ,সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক সেটাই প্রত্যাশা সবার। এদিকে গত ০৫ই আগষ্ট ২০২৪ইং আওয়ামিলীগ সরকারের বড়সড় পতনের পরে দলের কোন নেতাকর্মীকেই রাজপথে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। অন্যদিকে বিএনপি বার বার আন্দোলন সংগ্রাম করে ব্যর্থ হয়ে মুখ থুবড়ে পড়লেও জামায়াতের রাজনৈতিক অঙ্গনও ছিল নীরব ভূমিকায়।কিন্তু সরকার পতনের পরে জামায়াতের রাজনৈতিক অঙ্গন উজ্জীবিত হলেও জেলা,উপজেলা সহ বিভিন্ন ইউনিটির কমিটি নিয়ে চাপে আছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। বিভিন্ন জায়গায় রাজপথের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে বিতর্কিত কমিটি করার কারণে নিজেদের মধ্যে অন্ত কোন্দলে জড়িয়েছে দলটি।

পাবনা-১ হল বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ৩০০টি নির্বাচনী এলাকার একটি। এটি পাবনা জেলায় অবস্থিত জাতীয় সংসদের ৬৮নং আসন। এখানে ২০২৩ইং সালের ভোটার তালিকা অনুযায়ী মোট ভোটার সং্খ্যা ৪,৩১,৬২০। তার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সং্খ্যা ২,২০,১৯২ নারী ভোটারের সং্খ্যা ২,১১,৪২৭ ও হিজড়া ভোটারের সং্খ্যা ১ টি।

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বের পাবনা-১ নম্বর আসনটি (বেড়া-সাঁথিয়া) নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের নিবন্ধন বাতিলকৃত জামায়াতে ইসলামির সাবেক আমীর মতিউর রহমান নিজামী এই আসনটিতে ১৯৯১ সালে বিএনপির সাথে জোট করে নির্বাচনে জয়ী হন।২০০১ সালে আবারো তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই আসনের সাঁথিয়া উপজেলা তার জন্মস্থান। অর্থাৎ আপাতদৃষ্টিতে এই আসনটি জামায়াত সমর্থিত একটা আসন বললেই চলে।

সারা দেশে জামায়াতে ইসলামীর আগাম প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও দলের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়ার একাংশ) আসনে দলের প্রার্থী নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল। এই আসনে এতো দিন প্রচারণা চালাচ্ছিলেন বেড়া উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির ও বর্তমান কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুল বাসেদ খান।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি সকালে‌ উপজেলা জামায়াতের কার্যালয়ে দলটির বিশেষ সভায় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর শাহাদাতের পর এখানে আমাদের দলের প্রার্থী নাজিবুর রহমান মোমেনই ছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকারের জুলুম নির্যাতনের কারণে মতিউর রহমান নিজামীর পরিবারের কোনো সদস্য দেশে থাকতে পারেননি। তাই মাঝখানে নির্বাচনের জন্য আমরা প্রার্থী করেছিলাম আব্দুল বাসেদ খান ভাইকে। আবারও আমরা বিজয়ের সম্ভাবনাকে নিশ্চিত করতেই ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেনকে প্রার্থী করলাম। আমাদের দলের প্রার্থী হওয়া বা প্রার্থী করা কোনোটাই প্রার্থীর সাথে সম্পর্ককৃত নয়, সবকিছুই দলের সঙ্গে সম্পর্ককৃত।প্রার্থী ঘোষণার পরেই আসন দখলে মরিয়া জামায়াত। বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচী সহ জনগণের আস্থা ও জনপ্রিয়তা পেতে ছুটছেন এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে।

অপরদিকে দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথ দখলে রেখে গত ০৫ই আগষ্টের পরে যেন মুখ থুবড়ে পড়েছে বিএনপি। গ্রুপিং কোন্দলে নাজেহাল অবস্থায় দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে একপ্রকার হতাশার বিরাজ করছে। জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে নেই কোন সক্রিয় ভূমিকা। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা গেছে হঠাৎ এই আসনটিতে বিএনপির দূর্দশার মূল কারণই হল ত্যাগীদের মূল্যায়ন না করে যাদের কমিটি দেওয়া হয়েছে তারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারছেন না। বিতর্কিত কমিটি আর স্থানীয় দলীয় নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে পদ বঞ্চিত ত্যাগী নেতাদের সাথেও কেন্দ্রীয় বিএনপির অফিসে কয়েকবার আলোচনায় বসেছেন দলটির হাইকমান্ড। তবুও আশার আলো দেখেনি দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। গ্রুপিং কোন্দল আর বিতর্কিত কমিটির কারণে নানা ভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে পাবনা-১।

এদিকে বিএনপির অন্ত- কোন্দল ও জামায়াতের আসন দখলের ভূমিকার মাঝে সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে আওয়ামিলীগকে। গত ০৫ আগস্টের আওয়ামিলীগ সরকারের পতনের আগে ওই আসনটিতে বেশ কয়েকবার সংসদ সদস্য ছিলেন শামসুল হক টুকু। তার আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তৎকালীন মন্ত্রী পরিষদে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক ডক্টর আবু সাইয়িদ। এরপর আওয়ামিলীগ তাকে আর মূল্যায়ন না করায় দীর্ঘদিন আওয়ামিলীগের রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন। কিন্তু গত ঈদুল ফিতরের পরে পাবনা-১ আসনে তার নিজ বাড়ী বেড়াতে আওয়ামিলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রকাশ্যেই মিটিং করতে দেখা গেছে। শুধু মিটিংই নয় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সহ বিভিন্ন ইউনিটির কমিটি গঠনের ও সিদ্ধান্ত নেন তারা।

এরপরই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয় পাবনা-১ আসন। সারা দেশে যেখানে আওয়ামিলীগের বিরুদ্ধে বিএনপি -জামায়াত সহ ছাত্র জনতা বেশ সক্রিয়। তার মাঝেই কিভাবে প্রকাশ্যে তারা মিটিং করে তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। অধ্যাপক ডক্টর আবু সাইয়িদ আওয়ামিলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে মিটিং করার পরে আওয়ামিলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ করে। সেখানে জামায়াতের ও বেশ কিছু নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

কিন্তু এই বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কোন সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি। যাতে করে পাবনা-১ আসনটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়। দলীয় নেতাকর্মীদের অন্ত-কোন্দলই একমাত্র দলটির মুখ থুবড়ে পড়ার কারণ বলে ধারণা করা যাচ্ছে।

✅ আমাদের প্রকাশিত কোন সংবাদের বিরুদ্ধে আপনার অভিযোগ  বা পরামর্শ থাকলে ই-মেইল করুনঃ dailyvorerkhabor@gmail.com❌ বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।