ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের কাঁশর কমিউনিটি ক্লিনিকের সামনে তালা ঝুলছে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও সেবা না পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন স্থানীয়রা। ক্লিনিকের দরজার সামনে অপেক্ষমাণ নারীদের চোখেমুখে হতাশা আর ক্ষোভের ছাপ স্পষ্ট।
৩০ বছর বয়সী রোজিনা বেগম তাঁর চার মাস বয়সী কন্যা হাবিবাকে নিয়ে সকাল থেকে অপেক্ষায় ছিলেন চিকিৎসা ও পরামর্শের জন্য। ক্ষুব্ধ রোজিনা বলেন, “এইহানে সেবা নামেমাত্র। হেরা ইচ্ছামতো আয়ে, ইচ্ছামতো যায়। এর আগেও একদিন বেলা ২টার দিকে আইছি, তখনো তালা ঝুলত।”
একই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন পাঁচ মাস বয়সী শিশুকন্যা রিয়া মনিকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মরিয়ম আক্তার। তিনি বলেন, “টিকা কার্ড নিতে আইছি। আগেরবার আইছিলাম, তখন ২০০ টাকা চাইছিল, যা সরকারিভাবে বিনামূল্যে দেয়ার কথা। আজ আবার ঘুরে যেতে হইতেছে।”
সেবা না পাওয়া, বিনামূল্যে সরবরাহযোগ্য ওষুধের ঘাটতি এবং টাকা চাওয়ার অভিযোগ শুধু কাঁশর নয়-উপজেলার আরও বহু কমিউনিটি ক্লিনিকের বিরুদ্ধেই রয়েছে একই ধরনের অভিযোগ। স্থানীয়রা জানান, সকাল ৯টায় খোলার কথা থাকলেও বেশিরভাগ ক্লিনিক খোলে বেলা ১১টার পর। কখনো খোলে, কখনো সারা দিন বন্ধ থাকে। খোলার পরও কতক্ষণ চালু থাকবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
ভালুকা উপজেলায় বর্তমানে ৪৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। এসব ক্লিনিকের মাধ্যমে মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা, পরিবার পরিকল্পনা, টিকাদান, পুষ্টি, স্বাস্থ্যশিক্ষা ইত্যাদি সেবা দেয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে এর চিত্র ভিন্ন। অনেকে জানান, ক্লিনিকে গেলে এক-দুই টাকার ট্যাবলেট দিয়েই বিদায় করে দেয়া হয়।
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সারা দেশে ১৩,৮৮১টি ক্লিনিক থাকলেও প্রায় ৮৫ শতাংশ রোগীকেই প্রয়োজনীয় সেবা না পেয়ে বেসরকারি হাসপাতালে যেতে হয়। ওষুধের ৬৪ শতাংশ খরচও রোগীকেই বহন করতে হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মাদ নজরুল ইসলাম বলেন, “সেবা প্রদানে কোনো অনিয়ম হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ২৭ প্রকার ওষুধ সরবরাহের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ছাইফুল ইসলাম খান বলেন, “ক্লিনিকে অনিয়মের বিষয়টি আমাদের কানে এসেছে। কঠোর তদারকি চলছে। অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।