স্টাফ রিপোর্টারঃ নজরুল ইসলাম মোল্ল্যা। সব সময় সরকারি দলের নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে তিনি সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে থাকেন। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার জামাল ইউনিয়নের বিএনপি’র টিকিটে নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান। এরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি ডিগবাজি দিয়ে এমপি মান্নান গ্রুপে যোগ দেন। তখন আওয়ামী লীগের মধ্যে আনার কমিশনার আর মান্নান এমপি’র বিরোধ ছিল তুঙ্গে। ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সাবেক চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের হোসেন মণ্ডলের নেতৃত্বেই চলতো দলটি। কিন্তু তিনি আনারের পক্ষের লোক হওয়ায় তাকে ঠেকাতে নজরুল মোল্ল্যাকে কাজে লাগান মান্নান এমপি। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি মান্নান এমপি’র হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে রাতারাতি আওয়ামী লীগের নেতা হয়ে যান। এরপর শুরু হয় নজরুল মোল্ল্যার সন্ত্রাসী তাণ্ডব।
জানা যায়, সামাজিকতার নাম ভাঙিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মধ্যদিয়ে তিনি আধিপত্য বিস্তার শুরু করেন। যা সাবেক চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের হোসেন মণ্ডলের নেতৃত্বাধীন নেতারাও মানতে পারেননি। ফলে মূল আওয়ামী লীগের সঙ্গে নজরুল মোল্ল্যার বিরোধ স্পষ্ট রূপ নেয়। তৎকালীন এমপি’র শক্তি কাজে লাগিয়ে তিনি আওয়ামী লীগের মূলধারার লোকজনের ওপর অপ্রতিরোধ্য নির্যাতন চালানো শুরু করেন। হামলা, মামলা আর সন্ত্রাসী তাণ্ডবে এক সময়ে ত্যাগীরা নির্যাতনের শিকার হয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন। পরে ২০১৪ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে আনোয়ারুল আজিম আনার এমপি হন। তিনি তখন আরেক ডিগবাজি দিয়ে আনারের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি করে রাজনৈতিক মাঠে ফেরা মোদাচ্ছেরের সঙ্গে আপস করেন। এ তরফায় তিনি নির্বাচন না করে বসে পড়েন। কিন্তু আওয়ামী লীগ আমলের শেষ নির্বাচনে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে দলটির মান্নান গ্রুপের প্রার্থী আব্দুর রশিদ খোকনের ট্রাকের পক্ষে ভোটে নামেন। এ নির্বাচনে আনোয়ারুল আজিম আনার এমপি নির্বাচিত হলে কোণঠাসা হয়ে পড়ে নজরুল। পরে কোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন আলার ঘাড়ে ভর করে রক্ষা পান তিনি। সুযোগ বুঝে সখ্যতা গড়ে তুলে আবারো ডিগবাজির মাধ্যমে হয়ে যান এমপি আনার গ্রুপের। একজন ভদ্র ও শান্ত প্রকৃতির নেতা হিসেবে সে সময়ে জনপ্রিয়তায় চেয়ারম্যান হয়ে যান মোদাচ্ছের হোসেন মণ্ডল। এরপর থেকে মোল্ল্যার তাণ্ডব কিছুটা থেমে যায়। আপস করে ফেলেন জামাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের মণ্ডল ও কোলা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা ও চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন আলার সঙ্গে। জনবিচ্ছিন্ন অবস্থায় ধীরগতিতে দিন কাটছিল তার। ৫ই আগস্টে আওয়ামী লীগের পতনের পর পুনরায় ডিগবাজি মারে নজরুল। খোলস পাল্টে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে হয়ে যান বিএনপি’র কাতারবন্দি। অথচ বিগত ১৭ বছর কোলা জামালপুর ইউনিয়নের বিএনপি’র নেতাকর্মীরা হামলা মামলার শিকার হলেও তিনি ছিলেন আনার এমপি’র পাওয়ারের গা গরম গডফাদার। আওয়ামী লীগের পতনের পর কালীগঞ্জে বিএনপি’র ৩টি গ্রুপ পৃথকভাবে রাজনীতির মাঠে ময়দানে কাজ করছে। নতুন করে বিএনপি’র নেতা সাজতে তিনি প্রথমে মাথা গুঁজে দেন সাবেক এমপি শহিদুজ্জামান বেল্টুর স্ত্রী মুরশিদা জামান বেল্টু গ্রুপে। সেখান থেকে আরও বেশি সুবিধা নেয়ার জন্য আবারো ডিগবাজি মেরে চলে যান আরেক গ্রুপ হামিদুল ইসলাম হামিদ গ্রুপে। এরপর এলাকায় শুরু করেন পুরনো বন্ধু আওয়ামী লীগের আলা চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী গ্রুপ দিয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার। ডিগবাজির ওস্তাদ এই নেতা তার এই সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে কোলা ইউনিয়নের দীর্ঘ সময়ের দুর্দিনের নেতা ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি গোলাম সরোয়ার হোসেন মোল্যাকে কোলা বাজারে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে জখম করেন। এর পরের দিন একই ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শুকুর আলীকেও একইভাবে কুপিয়ে জখম করেন। ওই ইউনিয়নের ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের আহম্মেদ বনির বাড়িতেও ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। তার হয়ে বর্তমানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর মদতদাতা যেন নেতৃত্ব পর্যায়ের বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারাই। প্রায়ই দুই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের পুরনো বন্ধুদের নিয়ে কোলা বাজারে রামদা, ঢাল, সড়কি ও দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়ে এলাকায় এখন ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। অথচ বর্তমানে বিএনপি’র নেতাদের মধ্যে চরম গ্রুপিং থাকায় পার পেয়ে যাচ্ছে নজরুল। এ বিষয়ে নজরুল মোল্লা গণমাধ্যমকে বলেন, আপনি আমার এলাকায় এসে দেখে যান। আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।