ঢাকাশুক্রবার , ১৮ এপ্রিল ২০২৫
আজকের সর্বশেষ খবর

৫ই আগস্টের পর ৭৮২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী


এপ্রিল ১৮, ২০২৫ ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

স্টাফ রিপোর্টার: আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সব বাহিনীর সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগে ৫ই আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত মোট ৭ হাজার ৮২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এর মধ্যে গত দুই মাসেই ২ হাজার ৪৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে  সেনাবাহিনীর বিগত দুই মাসের কার্যক্রম তুলে ধরে এমনটাই জানিয়েছেন সেনা সদরের মিলিটারি অপারেশন্স ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, সেনাবাহিনী বিগত দুই মাসে ২৩২টি বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। যার মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত ঘটনা ছিল ৩৭টি, সরকারি সংস্থা ও অফিস সংক্রান্ত ২৪টি, রাজনৈতিক কোন্দল ৭৬টি এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ছিল ৯৫টি। গত দুই মাসে সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারকৃতদের তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, গ্রেপ্তার হওয়াদের মধ্যে কিশোর গ্যাং, তালিকাভুক্ত অপরাধী, মাদক ব্যবসায়ী, অপহরণকারী, চোরাচালানকারী, প্রতারক ও দালালচক্র, চাঁদাবাজ, ডাকাত, ছিনতাইকারী রয়েছে। অভিযানের সময় সেনাবাহিনী দুই মাসে ৩২০টি অবৈধ অস্ত্র ও ৫৬৪ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। ৫ই আগস্টের পর থেকে এপর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৩৭০টি অবৈধ অস্ত্র ও ২ লাখ ৮৫ হাজার ৫২ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ে যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসার জন্য সেনাবাহিনী অদ্যাবধি ৪ হাজার ৩৪০ জনকে দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। যার মধ্যে ৪৩ জন এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহতদের সম্মানে সেনাবাহিনী গত ২৩শে মার্চ সেনামালঞ্চে ইফতার ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করে। ২৫শে মার্চ আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে আহত এবং শহীদ পরিবারের সম্মানে সংবর্ধনা আয়োজন করা হয়। সেনাবাহিনী প্রধান উপস্থিত থেকে সকলের খোঁজখবর নেন। চিকিৎসাসহ সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

এ ছাড়াও বিগত সময়ে শিল্পাঞ্চলগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনাবাহিনী ১৩৭টি ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং ৩১ বার বিভিন্ন মূল সড়ককে অবরোধ থেকে অবমুক্ত করেছে। শিল্পাঞ্চলে জাতীয় নিরাপত্তা বিধানের সময় গত ৯ই এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের রবিন টেক্স গার্মেন্টসে অস্থিরতা প্রশমনের সময় নিয়োজিত সেনা সদস্যরা কিছু গার্মেন্টস শ্রমিকের ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় আক্রান্ত হয়। এতে ২৪ জন সেনা সদস্য আহত হয়। আহতদের মধ্যে ২০ জনকে সিএমএইচে ভর্তি হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। ঈদ পূর্ব গার্মেন্টসে অস্থিরতা মোকাবিলায় সেনাবাহিনী মালিকপক্ষ, শ্রমিকপক্ষ, মন্ত্রণালয়, শিল্পাঞ্চল পুলিশ ও বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে শ্রমিকদের বেতন ও ভাতা পরিশোধে বিশেষ ব্যবস্থা করে যা শ্রমিকদের মাঝে ঈদ পূর্ববর্তী গতানুগতিক অস্থিরতা প্রশমনে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

ঈদুল ফিতরে ঘরমুখো মানুষের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী ঈদের আগে ও পরে মিলে ২ সপ্তাহের বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করে। এর অংশ হিসেবে জাতীয় মহাসড়কগুলোতে নির্বিঘ্নে যান চলাচল নিশ্চিত করতে ঢাকাসহ দেশের সকল জেলার বাস স্ট্যান্ড, রেলস্টেশন এবং লঞ্চ টার্মিনাল ও মহাসড়কে দিন-রাত টহল পরিচালনা, স্পর্শকাতর স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ফলে সড়ক দুর্ঘটনাসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড গত বছরের তুলনায় অনেকাংশে হ্রাস পায়। যা জনসাধারণকে নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছানোসহ পরিবার-পরিজনের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও আনন্দঘনভাবে ঈদ উদ্‌যাপনে সহায়ক ভূমিকা রাখে। পহেলা বৈশাখ সুষ্ঠুভাবে উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে সেনাবাহিনী ঢাকাসহ সারা দেশে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে বলেও জানান সেনা সদরের মিলিটারি অপারেশন্স ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ। তিনি বলেন, যার ফলে দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া দেশের সব স্তরের জনসাধারণ আনন্দঘন পরিবেশের মধ্যদিয়ে এবারের পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপন করে। দেশের চরাঞ্চলসহ ৬২টি জেলায় সেনা সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সংস্থা, গণমাধ্যম এবং সাধারণ জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছে। গত দুই মাসে চট্টগ্রাম, সাভার, উত্তর বাড্ডা, মিরপুর, বনানী, ভাসানটেক, গাজীপুর, পটুয়াখালী ও বাগেরহাটে সংঘটিত বিভিন্ন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্য সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বিতভাবে দ্রুততম সময়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে। এসব কাজের পাশাপাশি সেনাবাহিনী দেশে সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বজায় রাখাসহ বিদেশি কূটনীতিক ব্যক্তি ও দূতাবাসগুলোর সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এ ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং কক্সবাজার জেলায় এফডিএমএন ক্যাম্প এলাকার নিরাপত্তা বিধান করার দায়িত্বও সুষ্ঠুভাবে পালন করে যাচ্ছে।

কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, গত ১৪ই মার্চ জাতিসংঘ মহাসচিব কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করেন। যেখানে প্রধান উপদেষ্টা ও সেনাবাহিনী প্রধানসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা দিয়েছে। তার সফর সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছে। এ ছাড়াও সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গার জন্য ইফতার প্রস্তুত ও সুষ্ঠুভাবে বণ্টন করা হয়েছে। সফরকালীন সময়ে সেনাবাহিনী প্রধান জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে জাতিসংঘ মহাসচিব সেনাবাহিনীর সার্বিক কর্মকান্ড বিশেষত জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবদান ও সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ডে ভূমিকম্পের আঘাতে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ ভূমিকম্পে মিয়ানমারে মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়। প্রতিবেশী দেশের বিপদসংকুল সময়ে বাংলাদেশ সরকার জরুরী উদ্ধার, ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করে। সরকারের এ উদ্যোগে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। সেনাবাহিনীর কর্নেল শামিমের নেতৃত্বে ইঞ্জিনিয়ার কোরের ২১ জনের একটি উদ্ধারকারী দল এবং ১০ জনের একটি মেডিকেল দল সেখানে পাঠানো হয়। সেনাবাহিনী ছাড়াও নৌবাহিনীর তিনজন, বিমানবাহিনীর তিনজন, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সরের ১০ জন এবং আট সদস্যবিশিষ্ট একটি অসামরিক মেডিকেল দল পাঠানো হয়। এই উদ্ধার, ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়ক দল প্রেরণের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর বিমান, বিমান বাহিনীর বিমান ও নৌ-জাহাজ ব্যবহার করা হয়। এই মানবিক সহায়তাকারী দলটি তাদের কার্যক্রম শেষ করে গত ১৫ই এপ্রিল দেশে ফিরে এসেছে।

সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনের ক্ষেত্রে সরকার ও নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিবে। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবে সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর কাজে রাজনৈতিক চাপ আছে কী না- সে বিষয়ে  তিনি বলেন, মেজিস্ট্রিসি পাওয়ারে কাজ করতে গিয়ে রাজনৈতিক চাপের সম্মুখীন হচ্ছে না সেনাবাহিনীর। কিন্তু আটকের পর তা অন্য বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেখানে সেনাবাহিনীর কোনো ভূমিকা নেই। বিভিন্ন সময় সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব দেখা যাচ্ছে- এবিষয়ে তিনি বলেন,  কোনো রকম কোনো গুজবে সেনাবাহিনী বিচলিত নয়। বরং সেনাবাহিনী আরও একতাবদ্ধ হয়ে দেশ ও জাতির পাশে কাজ কর যাচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে সেনা প্রধানের রাশিয়া ও ক্রোয়েশিয়া সফর সম্পর্কে বলেন, এটি সেনাপ্রধানের একটি নিয়মিত কার্যক্রম। এই সফরে সেনাপ্রধান বেশ কয়েকজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ও বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি পরিদর্শন করেন। এর ফলে বন্ধুপ্রতীম দেশের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা আরও প্রগাঢ় হবে। এসময় খাগড়াছড়ির গিরিফুল এলাকা থেকে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পাঁচ শিক্ষার্থীর অবস্থান শনাক্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। পার্বত্য চট্রগ্রামের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি  সম্পর্কে  মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা অবস্থা ভালো।

✅ আমাদের প্রকাশিত কোন সংবাদের বিরুদ্ধে আপনার অভিযোগ  বা পরামর্শ থাকলে ই-মেইল করুনঃ dailyvorerkhabor@gmail.com❌ বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।