স্টাফ রিপোর্টার: নির্বাচন চাইলে তাদেরকে “বেইমান” বলতে হবে, এই দুষ্টুতা আপনি কোথা থেকে পেয়েছেন সার্জিস আলম? আপনি কি ভেবে বলেছেন? আপনার এ কথার মধ্যে ফ্যাসিবাদের গন্ধ, যা প্রতিটি নাগরিকের নাকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। যদি সচেতন ভাবে বলে থাকেন, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে নিন। না হলে জাতি আপনাকেই বেইমান উপাধি দিয়ে দিবে। প্রকৃতির বিচার খুব নির্মম হয়, যেটা এই জাতি অল্প সময়ের মধ্যেই অবলোকন করেছেন। আপনার প্রিয় নেত্রী দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
২৪ এর জুলাই আন্দোলনে স্বৈরাচার হাসিনার হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি নেতা ও কর্মী। সব থেকে বেশি জীবন দিয়ে দেশ জন্য যুদ্ধ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেতাকর্মী। আমরা রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছি। ১৮ বছর আমাদের উপর অন্যায়-অত্যাচার, জেল-জুলুম, গুম-খুন প্রতিনিয়ত করে গিয়েছে স্বৈরাচার হাসিনা সরকার। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, নিরপরাধ আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বছরের পর বছর অন্ধার কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে যা স্বাধীন বাংলাদেশে প্রমাণিত। তাকে চিকিৎসা পর্যন্ত নিতে দেওয়া হয়নি। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানকে অত্যাচার করতে করতে মৃত প্রায় অবস্থায় দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। আরাফাত রহমান কোকো ভাই কে অত্যাচার করতে করতে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে এই বাংলাদেশেই। ভুলে গেলে চলবে না। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ভুলে যায়নি।
ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের দোসরদের বিচার বাংলাদেশের মাটিতে হবে ইনশাআল্লাহ। হতেই হবে। ২৪ এর জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র-জনতা ও প্রতিটি দল মিলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন কি কি সংস্কার হবে। আওয়ামীলীগ, হাসিনা এবং তাদের দোসরদের কিভাবে বিচারের আওতায় আনতে হবে। সবার অংশগ্রহণে যে সিদ্ধান্ত আসবে, তা বাংলাদেশের মাটিতে বাস্তবায়ন করবেন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার। বিচারের কথা বলে নির্বাচনকে দূরে ঠেলে দেওয়ার কোন সুযোগ নেই বাংলাদেশে। দীর্ঘ ১৬ বছর আমাদের জেনারেশন এবং বাংলাদেশের মানুষ তার একমাত্র মূল্যবান ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। তাদের মূল্যবান অধিকার প্রতিষ্ঠা করাযই আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য।
আপনি আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরোটা সময় আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ করেছেন। কিভাবে আপনার উৎপত্তি জাতির কাছে তা পরিষ্কার। চালাকি করে, ডিবি হারুনের চক্রান্তের মাধ্যমে আন্দোলনের ৬ জনের একজন হয়েছেন। পরবর্তীতে জাতীয় নাগরিক পার্টিতে জায়গা করে নিয়েছেন। এই ছাত্র জনতার সামনেই আপনার আবির্ভাব ঘটেছে, ভুলে গেলে চলবে না।
কথা হিসাব করে বলবেন সার্জিস আলম। আমরা আপনার মত জীবনের প্রথম দিন থেকে ছাত্রলীগ করে করে আসিনি। আমাদের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী না। নির্যাতন অত্যাচার জেল জুলুমের দিক থেকে হিসেব করলে ছাত্রদল বা অন্যান্য ক্রীড়াশীল সংগঠনের একজন ইউনিয়নের সাধারণ কর্মীর নখের যোগ্যও নন আপনি। ছোট মুখে বড় কথা মানায় না।
গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, দুদিন আগে অথবা পরে ভোট হবেই। ভোট চাওয়া একজন মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। জীবনভর হাসিনার পা চেটে সার্জিজ আলম বলছে, যারা ভোট চাইবে তারা “বেইমান”। মুক্তিকামী এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যোদ্ধাদের ‘বেইমান’ বলার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? ২৪ এর জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া প্রায় প্রতিটি গণতন্ত্রকামি দল নির্বাচনের কথা বলছেন। কারো কারো দ্বিমত থাকতে পারে। তাই বলে আপনি তাদের ‘বেইমান’ বলতে পারেন না।
কোথায় কোথায় কি কি লুটপাট হয়েছে, কি কি দখল করা হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জাতি অনেক কিছুই জানতে পারছে আপনাদের সম্পর্কে। আপনাদের দু একজনকে দেখলে মনে হয়, গরুকে যেমন মোটাতাজাকরণ ওষুধ খাওয়ানো হয়, আপনারাও হয়তো তাই খেয়েছেন। ভাবছেন নির্বাচন ছাড়া বছরের পর বছর থাকলে হাসিনার দোসরদের মত অবৈধ টাকার পাহাড় গড়ে তুলবেন। বাংলাদেশর মাটিতে আর তা করতে দেওয়া হবে না। ২৪ এর জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতা এবং গণতন্ত্রকামি প্রতিটি রাজনৈতিক দল একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে।
সেই সোনার বাংলাদেশ গরবার লক্ষ্যে ফ্যাসিস্ট হাসিনার রক্তচক্ষু অপেক্ষা করে প্রথম সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। যার কারনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপি’র লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীর নামে গায়েবী মামলা দেওয়া হয়েছে, গুম-খুন করা হয়েছে। সে পথটি এতটা সহজ ছিল না, যতটা ভাবছেন।
তখন আপনি হেলমেট বাহিনী নেতা ছিলেন। এমন একটি সংগঠনের নেতা আপনি ছিলেন, আপনারা ধর্ষণ করে এই বাংলাদেশেই তার সেঞ্চুরি উদযাপন করতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি পবিত্র স্থানে অসংখ্য ভাই-বোনদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন। ধরে নিয়ে গিয়ে জেলের খাচায় ভরেছেন। গুম খুন সহ অসংখ্য মুক্তিকামি ছাত্র-জনতা ভাইবোনদের আয়না ঘরে বন্দী করে রাখেছেন। সে সময় ও এখন কর মত হাসিনার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য বক্তৃতার মঞ্চে উঠে অনেক চেঁচামেচি, হইচই করতেন আপনি। একটু থামুন। আপনার সে সময়ের দেওয়া স্বৈরাচার প্রেমী বক্তৃতা সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে জাতি প্রতিনিয়ত দেখতে পাচ্ছেন। আপনার ভালোর জন্যই বলছি, রূপ পরিবর্তন করতে হলেও একটু থামতে হয়।
পরবর্তীতে জনাব তারেক রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর সময় নিয়ে প্রথমে দলকে সুসংগঠিত করেন। এরপর দেশকে সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে, জনগণের হাতে রাষ্ট্রের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে, মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে , স্বাধীন বিচারব্যবস্থা নিশ্চিত করতে, দুঃখী দারিদ্র মেহনতী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলার লক্ষ্যে ৩১ জুলাই ২০২৩ তারিখে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান কর্তৃক জাতির সামনে উপস্থাপিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব করা হয়।
এবং তিনি এও বলেছেন যে দেশের প্রয়োজনে যদি আরো সংস্কার দরকার হয় তাহলে তা সংযুক্ত করা হবে।
সবার সচেতনতার জন্য বলতে চাই, অতি ভক্তি এবং অতি কথন কোনটাই ভালো নয়। ফ্যাসিস্ট হাসিনার চক্রান্ত থেমে নেই। তার সমস্ত অনুসারীরা বাংলাদেশের মাঝেই রয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত তারা দেশবিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত । স্বার্থ নিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে যুদ্ধ করলে ফ্যাসিবাদের দোসরা অতি সহজেই সুযোগ নিতে পারে। আমাদের মধ্যে থাকা তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে সেই বিভাজনের চক্রান্তেই তারা ব্যস্ত আছে এবং লক্ষ লক্ষ টাকা ইনভেস্ট করছে ।
সচেতন থাকতে হবে, আমাদের মাঝে থেকে কেউ যেন স্বৈরাচার হাসিনার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে জন্য কাজ করেতে না পারে। সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।
যেভাবে আমরা কাঁধে কাঁধ রেখে রাজপথে যুদ্ধ করে স্বৈরাচার হাসিনাকে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছি। ঠিক তেমনি ভাবে দেশ এবং দেশের মানুষের স্বার্থে, দেশ পুনর্গঠনে সবাই মিলে একসাথে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। সবার সম্মতি ক্রমে দেশ গঠনের জন্য যে সংস্কার প্রস্তাব আসবে তার বাস্তবায়নের পথে সবাই মিলে হেঁটে যেতে চাই।
২৪ এর জুলাই আন্দোলনে ২০০০ ছাত্র-জনতা ও নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন এবং ৩০,০০০ আহত হয়েছেন। এই বিভাজিত বাংলাদেশ দেখার জন্য নয়। সামনের দেশ হবে ঐকের বাংলাদেশ। নতুন বাংলাদেশে আমরা আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ছাত্র-জনতা, বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের সম্মান দিতে চাই। মতপার্থক্য থাকতে পারে, তবে দেশের স্বার্থে ঐক্যমতে পৌঁছাতে চাই। আমরা স্বাধীনতা কামী, মুক্তি কামী, গণতন্ত্রকামী দেশপ্রেমিক ছাত্র জনতা এবং নেতাকর্মীদের ‘বেইমান’ বলতে চাই না।
আমরা যারা এই জেনারেশনের ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করছি, আমাদের দিকে চেয়ে আছে সারা বাংলাদেশ। আমাদের যেমন বড়দের সম্মান করতে শিখতে হবে, ঠিক তেমনি ভাবে ছোটদেরকে ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিয়ে দেশ প্রেমিক করে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের অতি কথনে পরবর্তী প্রজন্ম যেন রাজনীতি বিমুখ না হয়ে যায়, তারা যেন আমাদেরকে ও অসম্মান করতে না শিখে। আমাদেরকেই খেয়াল রাখতে হবে।
“সম্মান করতে না জানলে,
কখনো সম্মান পাওয়া যায় না”
আমাদের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য
“সবার আগে বাংলাদেশ”
ভাববেন না আমি কাউকে উপদেশ দিচ্ছি। আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ চলায় যেটা মনে হয়েছে তা হল,
একজন ভালো নেতা হয়ে ওঠার জন্য দীর্ঘ সময় রাজনীতির পথে চলতে হয় সততার সাথে । মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে হয় বছরের পর বছর। সততা এবং দক্ষতার পরিচয় দিয়ে মানুষের ভালোবাসা অর্জন করে নিতে হয়। এই চলার পথে বিভিন্ন বাঁধা আসতে পারেই। বুক উঁচিয়ে সচেতনভাবে এবং বিচক্ষণতার সহিত তা মোকাবেলা করা একজন বিচক্ষণ রাজনৈতিক ব্যক্তির কাজ।
আমাদের রাজনীতি হোক ভালো কাজকে সামনে রেখে এবং পরবর্তী প্রজন্মকে বোঝাতে…….
“সবার আগে বাংলাদেশ”।