ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার ৪নং দৌলতপুর ইউনিয়নের সোনাতনপুর গ্রামে নিতাইপদ সাধুখাঁর দান করা ২০শতক জমির উপর গড়ে উঠা নিতাই সাধুখাঁ মেমোরিয়াল বিশেষ শিক্ষা প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টিতে লক্ষ লক্ষ টাকার নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি বিশ্বনাথ সাধুখাঁ মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে শিক্ষক,আয়া ও অফিস সহকারী পদে কোন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বা পরীক্ষা বাদেই নিয়োগ দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। গ্রামের উচ্চ শিক্ষিত বেকার মানুষেরা মোটা বেতনের চাকরি পাওয়ার আশায় জমি বিক্রি করে, বেসরকারি এনজিও থেকে লোন নিয়ে, হালের গরু বিক্রি করে, চাষাবাদের জমি বন্ধক রেখে টাকা সংগ্রহ করে তুলে দেন সভাপতি বিশ্বনাথের হাতে। উদ্দ্যেশ্য একটাই বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়া। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় রাস্তার পাশে ভাঙ্গাচুরা দরজা জানালা বিহীন ঢেউটিনের বেড়া ও ছাউনি দিয়ে তৈরি কয়েকটি ঘর। ভিতরে উঁকি দিয়ে দেখা যায় ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের দান করা কয়েকটি হাই বেঞ্চ যা ইতিমধ্যেই উইপোকায় খাওয়া শুরু করেছে। কিছু ঘরে মানুষ মলত্যাগ করেছেন তাও দৃশ্যমান। স্কুল মাঠে গরিব মানুষেরা গরুর গবর দিয়ে ঘসি ভেঙে রোদে শোঁকাচ্ছে ।সভাপতি বিশ্বনাথের সাথে কথা বলে জানা যায় বিদ্যালয়টি ঢাকার এস বি টি এম ফাউন্ডেশন থেকে নিবন্ধন প্রাপ্ত হন অবশ্য নাম্বারটি বলতে পারেননি ।স্কুলে মোট ১শত ২০জন শিক্ষার্থীর অধিনে শিক্ষক ১৬ জন, আয়া ৫জন ও অফিস সহকারী একজন ছিলেন। শিক্ষক পদে রিশখালী গ্রামের নাসির উদ্দিনের ছেলে মওদুত ১লক্ষ ৩৯হাজার টাকা, কেষ্টপুরের কাজলী খাতুন ১লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, রাধানগর গ্রামের বারেক আলীর ছেলে কামাল হোসেন ১ লক্ষ ১৩ হাজার টাকা দেন বিশ্বনাথের দাদা সঞ্জয়ের মাধ্যমে, পরে অবশ্য ৬৩ হাজার ফেরত পেয়েছেন এখানো ৫০ হাজার টাকা বাকি আছে, ভাতুড়িয়া গ্রামের আশরাফুল ইসলাম ১লক্ষ টাকা দিয়ে অফিস সহকারী পদে7 চাকরি নেন, ভুইয়ে পাড়া গ্রামের দাউদ হোসেন তার বউমা রেবেকার আয়া পোষ্টে চাকরির জন্য নিজের আবাদী জমি বন্ধক রেখে ৫০ হাজার টাকা দেন বিশ্বনাথ সাধুখাঁর হাতে, সোনাতনপুর গ্রামের নুপুর ও তার দুই ভাবি নাজমা ও রনি আয়াপদে চাকরীর আশায় বিশ্বনাথের কাছে প্রত্যেকে ৫০হাজার টাকা করে অগ্রিম হিসেবে প্রদান করে চাকরিতে যোগদান করেন। সোনাতনপুর গ্রামের শান্তি মিয়া তার স্ত্রী নাজমা খাতুনের আয়া পোষ্টে চাকরি হবে বিধায় বিশ্বনাথ সাধুখাঁর সাথে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকার চুক্তিতে ৬৫ হাজার টাকা অগ্রিম প্রদান করে এবং বিদ্যালয়ে কাজ করা শুরু করেন,বর্তমানে বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলে শান্তি মিয়া টাকা ফেরত চাইলে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং বলেন কোন টাকা ফেরত হবে না। বিশ্বনাথ সাধুখাঁ এলাকায় একটি রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে সাধারণ মানুষের নানা রকম ভয়ভীতি দেখান।তার এই আচরণের কারণে অনেকেই টাকা দিয়েও চাইতে পারেনি। সবাই মুখ বুঝে সৈয্য করেছেন।মোট কথা সাধুখাঁ পরিবারের মানুষের কাছে সবাই একপ্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছে। এব্যাপারের বিদ্যালয়টির সভাপতি বিশ্বনাথ সাধুখাঁর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন -বিগত সরকারের সময় প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করন ও তা পরে জাতীয়করন করা হবে এমন প্রতিশ্রুতি মোতাবেক আমার পিতা নিতাইপদ সাধুখাঁর দান করা ২০শতক জমির উপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। আমি কারও নিকট থেকে জোর করে বা ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা নেইনি তারা নিজেরাই স্বপ্রোনোদিত হয়েই টাকা দিয়েছে। বিদ্যালয়টির অবকাঠামো নির্মাণের জন্য সবাই টাকা দিয়েছেন। বেশকিছু দিন আমাদের নিজ খরচে প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখা, খাওয়া দাওয়া ও আনা-নেওয়া করিয়েছি, এমন কি ঝিনাইদহ জেলা পরিষদ থেকে করোনাকালীন সময়ে প্রায় ৩০০ প্যাকেট খাবার নিয়ে এসে তাদের মধ্যে বিতরণ করেছি এবং আমার পরিবারের পক্ষ থেকে ৩ লক্ষ টাকার চাউল বিতরণ করেছি । জাতীয় করন ও শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ভাতা না হওয়ায় বর্তমানে বিদ্যালয়টি বন্ধ আছে। টাকা ফেরৎ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন সদউত্তর দিতে পারেননি।এছাড়াও সোনাতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১৩ সালে নাইটগার্ডের চাকরি দেওয়ার নাম করে তৎকালীন স্কুল কমিটির সভাপতি বিশ্বনাথ সাধুখাঁর বড় দাদা পরিমল সাধুখাঁ মৃত হাসেম আলী মন্ডলের ছেলে সেলিম রেজার নিকট থেকে ৬ লক্ষ টাকার চুক্তিতে ১লক্ষ টাকা গ্রহন করেন। পরিমল বাবু ইহলোক ত্যাগ করলে বিশ্বনাথ সাধুখাঁর টাকা পরিশোধ করার কথা থাকলেও তা তিনি করেননি। এব্যাপারের বিদ্যালয়টির সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন স্যারের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন-এমন একটা কথা শুনেছি এবং আমাদের স্কুলেরও অনেক শিক্ষকেরাই জানেন এবং সেলিম রেজার টাকা বিশ্বনাথ সাধুখাঁ পরিশোধ করবেন বলেও জানতাম। বিশ্বনাথ সাধুখাঁ বলেন আমি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই জানিনা। উল্লেখ্য নিতাই সাধুখাঁ মেমোরিয়াল বিশেষ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের জমিদাতা নিতাইপদ সাধুখাঁ,সভাপতি ছেলে বিশ্বনাথ সাধুখাঁ, প্রধান শিক্ষক, সভাপতি ছেলের বউ, একদম দূর্নীতির আতুরঘর পারিবারিক প্রতিবন্ধী স্কুল।