লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি: জাটকা সংরক্ষণের ভর্তুকি হিসেবে লক্ষ্মীপুর জেলাধীন কমলনগর উপজেলার ২নং সাহেবের হাট ইউনিয়নে ১৮শ’ কার্ডধারী জেলের মাঝে ভিজিএফের চাউল বিতরণে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
জেলে কার্ডে ২৫০০শত থেকে ৩০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন ইউপি সদস্যরা। এতে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা আদায় করছেন বলে জানা যায়।
এ অপকর্মে মূল হোতা ওই ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও উপজেলা যুবদলের সদস্য মো: হেলাল ও ৯ নং ওয়ার্ড মেম্বার ও সাহেবের হাট ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবুল কাশেম, মাকছুদ, ছায়েদ মেম্বার বলে জানান জেলেরা।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) সকালে চাউল বিতরণ শুরু করাকালীন সময়ে বিজিএফ কার্ড বঞ্চিত জেলেরা বিক্ষোভ শুরু করলে ওই সময় সাহেবের হাট ইউনিয়নের প্রশাসক উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম পালিয়ে যান।
পরে খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: রাহাতুজ জামান উপজেলা সেনাবাহিনীর কর্মরত টিম ও থানা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার, সাহেবেরহাট ইউনিয়নে ২ হাজার ৩শ’ ১৮ জন কার্ডধারী জেলে রয়েছেন। ওই কার্ডের বিপরীতে জেলে প্রতি ৮০ কেজি হিসেবে ১৮শ’ জেলের জন্য ১৪৪ মেট্টিক টন চাউল বরাদ্দ দেয় সরকার। ইউপি সদস্যরা সব জেলে থেকে টাকা নিয়েছেন। কিন্তু টাকা নিয়ে প্রকৃত জেলে নয় এমন লোকদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন। এতে প্রকৃত জেলেদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
সরেজমিনে গিয়ে জেলেদের চাউল নিতে আসা লাইনে দাঁড়ানো বেশ কিছু কার্ডধারীদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, বর্তমানে তারা এ পেশায় নেই কিন্তু টাকার বিনিময়ে চাউল পাচ্ছেন এবং ওই চালের তালিকায় মৃত ব্যাক্তির নামও আছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
ওই ইউনিয়নের ছিদ্দিক উল্লাহ, মাকছুদ, রহিম মাঝি, দেলওয়ার হোসেন ও মোকতার, জাফর মাঝি জানান, টাকার বিনিময়ে কৃষক, রিক্সার ড্রাইভার জেলে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। যারা টাকা দেয়নি তাদের নাম বাদ দিয়েছেন। এ সব অপকর্মের মূল হোতা কাশেম মেম্বার ও হেলাল মেম্বার, ছায়েদ মেম্বার বলে জানান তারা।
উপকূলীয় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি রুহুল আমিন মাঝি বলেন,
এ সমিতির ৮০ জন জেলে নিয়মিত নদীতে মাছ ধরছে। সরকারের নিষেধাজ্ঞা মেনে তারা এখন নদীতে নামছে না। কিন্তু তারা কেউ চাউল পায়নি। যারা মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছে তারাই চাউল পেয়েছে।
জেলেদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও উপজেলা যুবদলের সদস্য মো: হেলাল মেম্বার কোন কথা বলতে রাজি হয়নি।
সাহেবেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: জহিরুল ইসলাম বলেন, চাউল বিতরণ শুরু করলে হঠাৎ জেলেরা বিক্ষোভ শুরু করে পরিষদের দিকে আসছিল। পরে নিরাপত্তার স্বার্থে আমি সরে গিয়েছি।
এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুর্য সাহা বলেন, জেলেদের তালিকা তৈরিতে কোন অনিয়ম হয়েছে কিনা তিনি জানেন না।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: রহাতুজ জামান বলেন, ২ হাজার ৩শ’ ১৮ জেলের বিপরীতে আমরা ওই ইউনিয়নে ১৮শ’ জেলের মাঝে চাউল বিতরণ করছি। কিন্তু যারা পায়নি তাদের মাঝে একটুতো ক্ষোভ থাকবেই। জেলেদের তালিকা তৈরিতে কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে খোঁজ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত: ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে জাটকা সংরক্ষণে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস চাঁদপুরের ষাট নল থেকে রামগতির আলেকজান্ডার এলাকা পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এরিয়ায় মেঘনা নদীতে সকল ধরনের মাছ ধরা বন্ধ করেছে সরকার। সরকার নদীতে না নামতে এ দুই মাস জেলেদের সহায়তার জন্য ৮০ কেজি করে ভিজিএফ চাউলের বরাদ্দ দেওয়া হয়।