ঢাকামঙ্গলবার , ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
আজকের সর্বশেষ খবর

রাবিতে মহান শিক্ষক দিবস পালন


ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫ ৮:১৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

রাবি প্রতিনিধি:  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে(রাবি) শহিদ ড.শামসুজ্জোহা দিবস( মহান শিক্ষক দিবস) পালন করা হয়েছে। মঙ্গলবারের( ১৮ ফেব্রুয়ারি) এই দিবস পালন করা হয়।দিবসের কর্মসূচি হিসেবে ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনসমূহে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল ৯টায় উপাচার্য প্রফেসর সালেহ্ হাসান নকীব, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) প্রফেসর মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান, কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মতিয়ার রহমানসহ প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্মকর্তাগণ শহীদ ড. জোহার সমাধি ও জোহা স্মৃতিফলকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও মোনাজাত করেন। এরপর রসায়ন বিভাগ ও শহীদ শামসুজ্জোহা হলসহ অন্যান্য আবাসিক হল, বিভাগ, রাবি স্কুল ও শেখ রাসেল মডেল স্কুল, শিক্ষক সমিতি, অফিসার সমিতি এবং হল, বিভাগসহ অন্যান্য পেশাজীবী সমিতি ও ইউনিয়ন শহীদ জোহার সমাধি ও স্মৃতিফলকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে।পরে সকাল ১০টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হয় জোহা স্মারক বক্তৃতা। এতে ‘শিক্ষার বাহন অথবা গণতান্ত্রিক জনশিক্ষা নীতির গোড়ার কথা’ শীর্ষক বক্তৃতা দেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের উচ্চতর তত্ত্বজ্ঞান কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান।এই আয়োজনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান পৃষ্ঠপোষক উপাচার্য প্রফেসর সালেহ্ হাসান নকীব এবং পৃষ্ঠপোষক উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) প্রফেসর মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান, কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মতিয়ার রহমান এবং সম্মানিত অতিথি ছিলেন শহীদ ড. জোহার কন্যা সাবিনা জোহা খান। রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া এতে সভাপতিত্ব করেন। সেখানে অন্যদের মধ্যে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ইমেরিটাস প্রফেসর এ কে এম আজহারুল ইসলাম শহীদ ড. জোহা সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করেন। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট শিক্ষক, কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।স্মারক বক্তা অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, বাংলাদেশে এখন যে শিক্ষা ব্যবস্থা বিদ্যমান তাকে কোনো বিচারেই গণতান্ত্রিক বলা যায় না। বৈষম্যহীন তো নয়ই, এই ব্যবস্থাকে ‘জাতীয়’ বলা যায় কিনা, তাও তর্কসাপেক্ষ। এই ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণ সার্বজনীনতার অভাব। দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য ক্রমবর্ধমান ধনসম্পদ বৈষম্যের ভিত্তিতে শিক্ষাদানের মধ্যেও বৈষম্যের প্রতিষ্ঠা। ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা কিংবা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পরও বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থার কোনো মৌলিক পরিবর্তন হয়নি। এ দেশের বিরাজমান শিক্ষা ব্যবস্থাকে তাই ‘আধা-ঔপনিবেশিক’ বললে বড় কোনো অন্যায় হয় না। ক্রমবর্ধমান ইংরেজি মাধ্যম আর ইংরেজি সংস্করণ শিক্ষার জয়জয়কারটা হিসাবে নিলেও এই সত্য প্রতীয়মান হয়।ইংরেজ শাসনাবসানের পরের যুগে প্রায় একশত বছর পরেও—আজ বাংলাদেশে যারা জনশিক্ষার বাহন ইংরেজি রাখতেই তৎপর, তাদের আসল মতলবটা কী? বর্তমানে তাদের কোনো কোনো প্রতিনিধি প্রকাশ্যেই বলছেন, এই দেশে শিক্ষার প্রসার একটু বেশি হয়ে গেছে। এক্ষণে প্রয়োজন প্রদত্ত শিক্ষার গুণগত উৎকর্ষ সাধন করা। অথচ একথা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে এই দেশে আজও সকল শ্রেণির মানুষের মধ্যে সমান শিক্ষালাভের সুযোগ বিস্তৃত হয়নি। এই দেশের এক বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ আধুনিক শিক্ষার সম্ভাবনা থেকে বঞ্চিত। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ এখন পর্যন্ত অক্ষরজ্ঞানও লাভ করেনি। এই অবস্থায় গুণগত উৎকর্ষের দোহাই দিয়ে তারা জনশিক্ষার বিস্তার রোধের চেষ্টা করছেন।ইংরেজি-ব্যবসায়ী বিদেশি-বিলিতি, মার্কিনি ও অন্যান্য ইংরেজি জাতি-চাচ্ছে নতুন নতুন মক্কেল ধরতে। তারা ব্যবসা করবে। স্বভাবতই তারা ‘বিশ্বভাষা ইংরেজি’ এই ধ্বনি তুলবে আর এই দেশের সামন্ত-বুর্জোয়া শ্রেণি নিজেদের প্রাধান্য বজায় রাখার স্বার্থে শ্রেণিগত শ্রেষ্ঠত্বের বা পার্থক্যের স্মারকচিহ্নস্বরূপ ইংরেজি ভাষার মধ্যস্থতায় সকল ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করবে। এই দুই সত্যে সন্দেহ নাই। এই দুই দলের মাঝখানে যে সর্বসাধারণ—যাদেরকে বলা হয় ‘আপামর জনসাধারণ’, হয়তো একমাত্র তারাই ‘জাতীয়’ শিক্ষা বা ‘গণতান্ত্রিক’ জনশিক্ষা নীতির দাবিতে জাগরুক থাকবে। বিশ্বব্যবস্থার বাতাস যতই প্রতিকূলে বইতে থাক না কেন, ব্যক্তির আত্মভাবের মতো জাতির আত্মভাবও একদিন না একদিন স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করে থাকে। আমরা সেই দিনের অপেক্ষায় থাকব।অনুষ্ঠানে উপাচার্য বলেন, আসলে আনুষ্ঠানিকভাবে জোহা স্মারক বক্তৃতা শুরু হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। আজ এই বক্তৃতা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বহুদিন ধরেই ১৮ ফেব্রুয়ারি আমরা শিক্ষক দিবস পালন করে আসছি। দিবসটি পালন করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে, আমাদের মধ্যে অনেক কৃতি মানুষ আছেন, অনেক মহান মানুষ আছেন, কিন্তু আমরা তাঁদেরকে ধারণ করতে গিয়ে সময়ে সময়ে সংকীর্ণতায় পৌঁছাই। ড. জোহার মধ্যে ছিল ভীষণ যোগ্যতা, সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সর্বোপরি অমিত সম্ভাবনা। আমি বলতে পারি, তাঁর এই গুণগুলো বিশ্ববিদ্যালয় সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহান মানুষ আমাদের মধ্যেই আছেন, কিন্তু আমরা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁদের কুক্ষিগত করার চেষ্টা করি। এতে করে না তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়, না যেভাবে ধারণ করতে চাই তা পারি। আজকের ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা যেন সেই সংকীর্ণ মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে পারি।সাবিনা জোহা খান তাঁর বক্তৃতায় বলেন, এখানে আমার স্মৃতিচারণ করার মতো তেমন কিছু নেই, তবে একটা কথা বলতে হবে আমি মানুষের মতো মানুষ হয়েছি, এটার কৃতিত্ব আপনাদের। আমার চলাফেরা, আচার-আচরণ—আমি যোগ্য হিসেবে গড়ে উঠেছি কিনা, এটার বিচারক আপনারা। এখন আমি ফিরে আসছি এই কারণে যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমার আব্বার একটা বন্ধন, যেটা চির অটুট। আমার আব্বা আপনাদের মাঝেই শুয়ে আছেন। আমি যেখানেই যাই, আমার এই বন্ধন কমবে না। বারবার এখানে ফিরে আসতে হবে।প্রসঙ্গত, দিবসের কর্মসূচিতে আরও ছিল বাদ জোহর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআনখানি ও বিশেষ মোনাজাত, বাদ আসর শহীদ শামসুজ্জোহা হলে দোয়া মাহফিল। এছাড়া সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। এ দিন শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য খোলা রয়েছে। এদিন রাবি শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালায় শহীদ ড. শামসুজ্জোহা কর্ণার উদ্বোধন করেন শহীদের কন্যা সাবিনা জোহা খান।উল্লেখ্য, উনসত্তরের এই দিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. সৈয়দ মুহম্মদ শামসুজ্জোহা প্রক্টরের দায়িত্ব পালনকালে পাকিস্তানি সেনাদের বেয়োনেট চার্জে নিহত হন। তিনিই এদেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী।

✅ আমাদের প্রকাশিত কোন সংবাদের বিরুদ্ধে আপনার অভিযোগ  বা পরামর্শ থাকলে ই-মেইল করুনঃ dailyvorerkhabor@gmail.com❌ বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।