ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: ভালুকা পৌসভায় সড়ক ও ফুটপাথ দখল করে রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ী ও ইজারাদার। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের। বছরের পর বছর এ অবস্থা চললেও পৌরসভা এবং উপজেলা প্রশাসন নীরব। সড়ক ও ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না তারা বলে অভিযোগ এলাকাবাসী ও পথচারীদের। সড়ক ও ফুটপাথ দখলে থাকায় পথচারীরা বাধ্য হয়ে (ভালুকা বাজার রোডের) রাস্তা দিয়ে চলাচল করছেন। এতে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। অন্যদিকে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা।
সরজমিনে ভালুকা বাজার ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দোকানের সামনের সড়ক ও ফুটপাথ দখল করে ব্যবসা করছে। কেউ কেউ বেঞ্চ বসিয়ে আবার কেউ দোকানের মালামাল ফুটপাথের উপর রেখে লোহার গ্রিল দিয়ে রাস্তা পর্যন্ত সীমানা দখল করে রেখেছে। ভালুকা বাজার রোডের রাস্তা প্রায় ১০ থেকে ১৫ ফুট চওড়া। রাস্তার দু’পাশে ফুটপাথ রয়েছে প্রায় আড়াই থেকে তিন ফিট। এদিকে ভালুকা বাসস্ট্যান্ড থেকে পাঁচ রাস্তার পর্যন্ত প্রায় তিন শতাধিক দোকান রয়েছে। অধিকাংশ দোকানের মালামাল দিয়ে ফুটপাথ দখল করে রাখা রয়েছে। কিছু কিছু দোকানের মালামাল সড়কেও রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে দোকান মালিক আনিস বলেন, অন্য সব দোকানের মালামাল সামনে রাখে, তাই আমরাও রাখি। এতে আমাদের দোষ কি?
স্থানীয় ফুটপাথের কলা ব্যবসায়ী বলেন, ফুটপাথে দোকান রাখলে তেমন কোনো অসুবিধা হয় না। উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে তিনি বলেন, বেশির ভাগ দোকানদার ও ব্যবসায়ীরা ভালুকার স্থানীয় তাই উচ্ছেদ করা হয় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকান মালিক বলেন, ভালুকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ফুটওভার ব্রিজ এর সাথেই পৌর কর্তৃপক্ষ ৮ফু্টের রাস্তা সহ ফুটপাত নির্মাণ করে। এই ফুটপাতের রাস্তা কিছুদিন পরেই সাধারণ জনসাধারণের চলাচলে বাধাগ্রস্থ করে অবৈধ ফল ব্যবসায়ীরা রমরমা বাণিজ্য ও ইজারার মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করে। উজ্জল, এনামুল, সিদ্দিক, সুজন, রাসেদ, রিপন, নূরু এরা অবৈধ ফল ব্যাবসায়ী যারা কিনা ফুট ওভার ব্রিজ হতে ফলের দোকান গুলো নতুন রাস্তায় বিনা অনুমতিতে অবৈধ ফল ব্যাবসা রমরমা চালিয়ে যাচ্ছে।
ফুটপাত দখল নেওয়া ব্যবসায়ী উজ্জল বলেন, এখানে সাবেক ইউএনও ও পৌর শ্রমিকদলের নেতার মাধ্যমে ফুটপাতের জায়গায় আমাদের ব্যবসা করার অনুমতি দিয়েছেন। আমরা রাজনৈতিক দল করি, শ্রমিকদল করায় আমাদের অগ্রাধিকার বেশি। আমি ৩নং ওয়ার্ড পৌর শ্রমিক দলের সাধারন সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছি।
স্থানীয় কয়েকজন পথচারী ও এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, এসব দোকানে কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় সড়ক ও ফুটপাথ দখল করে রেখেছে ব্যবসায়ীরা। তাই দ্রুত ফুটপাথ দখলমুক্ত করে জনসাধারণের চলাচলের উপযোগী করার আহ্বান ভুক্তভোগীদের।
পৌর বিএনপির সভাপতি মাহাবুব মোল্লা বলেন, ভালুকা ফুট ওভারের পাশের জায়গায় সাবেক ইউনও-এসিল্যান্ড সহ ফলের দোকানের জন্য ১৬টি দোকানের জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছিল। রাত্রের আধারে ভালুকা বাজার ব্যবসায়ী আশিক তার লোকজনের মাধ্যমে নিদিষ্ট জায়গায় ফলের দোকানে ভাংচুর করে মালামাল লুটপাঠ করে নিয়ে যাওয়ায়, এ বিষয়ে একটি মামলাও করা হয়। সাবেক ইউনও ও হাতেম খান বলেন কিছু সময় দেন এর একটা সমাধান করি, কিন্তু আমার দায়িত্বশীল কাজের জন্য এই বিষয়ে কোন ভাবেই অগ্রসর হওয়া যায় নি। আর শ্রমিক দল করা হলেই রাস্তার উপর দোকান পাট বসানোর বিষয়ে আমরা কিছুই বলি নি। ফলের দোকানদাররা এসে বলছে নেতা আপাদত বসছি, কিছুদিন পরে উঠে যাব। আমি আরো বলছি বসছো ঠিক আছে, কিন্তু একসময় দলের নাম বিক্রি করবা। ফলের সমিতি থেকে ফুটপাতে দোকানপাঠ দিয়েছো, এটা তোমাদের বিষয়, আমাদের কে কোন ভাবেই জড়ানো যাবে না। এটা জণসাধারণের জন্য ফুটপাতের রাস্তা করা হয়েছে, জনসাধারণের সমস্যা না হয়, ফুটপাতের রাস্তায় অবৈধ দোকানপাট বসায় জনসাধারণের দূভোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রোখসানা খাতুন বলেন, ফুটপাথ সম্পর্কে মৌখিক নানান অভিযোগ পেয়েছি। এ সকল স্থানগুলোতে আমি ইতিমধ্যে পরিদর্শন করেছি। খুব শিগগিরই উচ্ছেদের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।