ঢাকাসোমবার , ১৩ জানুয়ারি ২০২৫
আজকের সর্বশেষ খবর

নবীগঞ্জে কুশিয়ারা নদীতে চলছে বালু উত্তোলনের মহাউৎসব


জানুয়ারি ১৩, ২০২৫ ৮:১৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:   হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা নদীতে চলছে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন। দিন রাত অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করার কারণে হুমকির মুখে রয়েছে নদী ও নদীর পারের শত শত ফসলী জমি এবং বাড়ীঘর। এছাড়াও অবাধে বালু তোলার কারণে ভেঙ্গে যাচ্ছে এলাকার রাস্তা ঘাট, বিলীন হচ্ছে ঘর বাড়ি। এমতাবস্থায় বিষয়টি প্রশাসনকে অবগত করা হলেও নেয়া হচ্ছে না কার্যকরি কোন ব্যবস্থা। তাই এলাকাবাসীর স্বার্থে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী পরিবেশবাদীসহ এলাকার সচেতন মহলের।সরজমিনে গিয়ে জানা যায়- নবীগঞ্জ  উপজেলার দীঘলবাক, দূর্গাপুর,পাহাড়পুর, পারকুল, কুমারকাদাঁ এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছেন স্থানীয় বিএনপির প্রভাবশাী কিছু নেতাকর্মীদের সাথে হাত মিলিয়ে আওয়ামী লীগের একটি বিশাল চক্র।আর এ চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন নবীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক জনপ্রতিনিধি ও বিএনপির শীর্ষ এক প্রভাবশালী নেতা। উনাদের কাদেঁ ভর করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক জেলা পরিষদের সদস্য আঃ মতিন আছাব, দুলাল আহমদ, ফজলু মিয়া, ইউপি সদস্য জুয়েল,স্থানীয় বিএনপি নেতা আব্দুল বারিক রনি, রুয়েল মিয়া, সাজু মাহমুদ, আওয়ামীলীগ নেতা নুরুল আমিন, সাজ্জাদ, ফখরুল মিয়া, আলী হোসেন, মৌলভীবাজারের বাহাদুরপুর গ্রামের রনি মিয়াসহ স্থানীয়  ছাত্রলীগ ও যুবলীগ  নেতৃবৃন্দ । তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে স্থানীয় এলাকার বিএনপি ও আওয়ামীলীগের আরো বেশ  কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চক্রটি এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে। তারা দীর্ঘদিন যাবত নদী থেকে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে আসছেন। কেউ এ বিষয়ে কথা বললে দেয়া হয় হুমকী। ফলে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে নারাজ। দিনের পর দিন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমান রাজস্ব।এমতাবস্থায় এলাকবাসীর স্বার্থে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী এলাকাবাসীর।সরেজমিনে গিয়ে আরও দেখা যায়- দীঘলবাক গ্রামে ও দূর্গাপুর, পাহাড়পুর, পারকুল মধ্যবর্তী এলাকায় কুশিয়ারা নদীর উপর বড় বড় একাধিক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে কুশিয়ারা  নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আর এতে কাজ করছে শতাধিক  শ্রমিক। কুশিয়ারা চরের দীঘলবাক, তাজাবাদ মৌজায়  বালু উত্তোলন শেষে সেগুলোকে বড় নৌকায় করে এলাকার  কৃষি জমিতে ও নদীর পারের কয়েকটি স্থানে নিয়ে স্তুপ করে রাখা হচ্ছে। এছাড়া বালু উত্তোলনের মেশিন নদীতে বসিয়ে প্রায় কয়েক কিলোমিটার দুরে বড় বড় পাইপ দিয়ে পারকুল বিদ্যুৎ ফাওয়ার প্লান্টের সংলগ্ন স্থানে, মজলিশপুর, কুমারকাদাঁ মন্দিরের নিকটে এবং দীঘলবাক এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বালু স্তুপ করে রেখে অবাধে বিক্রি করে আসছেন ওই সিন্ডিকেট চক্র।স্থানীয়রা বলছেন- প্রতিদিন অন্তত কয়েক লাখ টাকার বালু উত্তোলন করা হচ্ছে কুশিয়ারা নদী থেকে। যে কারণে নদীর তলদেশে সৃষ্টি হচ্ছে বিশাল বিশাল গর্ত। স্থানীয় বাসিন্দা মোজাহিদ মিয়া বলেন- অবৈধভাবে দীর্ঘদিন যাবত ওই এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করা হলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। বালু তোলার কারণে হুমকিতে রয়েছে নদী ও নদীর পারের ফসলিম জমি। অনেক স্থানে আবার ঘর বাড়িতেও ধ্বসও দেখা দিয়েছে। তাই এখনই এসব বন্ধ করা জরুরি। তারেক মিয়া নামে আরো ব্যক্তি বলেন- চক্রটি খুবই প্রভাবশালী। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই তারা নানা ভাবে হয়রানি করে সাধারণ লোকজনদের। তাদের বালু তোলার কোন ধরণের অনুমতি নেই। অথচ তারা দীর্ঘদিন যাবত পরিবেশ নষ্ট করে বালু উত্তোলন করে আসছে। কাজল মিয়া বলেন- আমার সবজির জমিতে তারা জোরপুর্বক বালু স্তুপ করে রাখছে। তারা আমাকে বলেছিল ক্ষতিপূরণ দিবে কিন্তু দেইনি।

হবিগঞ্জ জেলা বাপা’র সাধারণ তোফাজ্জুল সোহেল বলেন- নদীর তলদেশ থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন আমাদের পরিবেশের জন্য মরাত্মক হুমকি। এখন এর প্রভাব তেমন একটা না পড়লেও পরবর্তীতে বিস্তর প্রভাব ফেলবে বালু তোলার ঘটনায়। তাই পরিবেশ রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের এ সব বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।অভিযোগের বিষয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বলেন, আমার এলাকায় নদী ভাঙ্গনরোধে একটি বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। এই প্রকল্পে এলাকার কিছু যুবকসহ লোকজন কুশিয়ারা নদী থেকে বালু-মাটি দিচ্ছে। বালু তোলার বিষয়ে আমি জড়িত নই। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, স্থানীয় ও উপজেলার বিএনপির প্রভাবশালীদের নেতাদের কাদেঁর উপর ভর করেই স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। লাখ লাখ টাকা থেকে বঞ্চিত রয়েছে সরকার। কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বালু সিন্ডিকেটার চক্ররা।

✅ আমাদের প্রকাশিত কোন সংবাদের বিরুদ্ধে আপনার অভিযোগ  বা পরামর্শ থাকলে ই-মেইল করুনঃ dailyvorerkhabor@gmail.com ❌ বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।