রাজিবুল ইসলাম ।। সংবিধানকে কবর দেওয়ার কথা বললে কষ্ট লাগে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। রোববার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। মির্জা আব্বাস এ সময় সংবিধান পুনর্লিখন প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, সংবিধান লেখা হয়েছিল একাত্তরের ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে। এই সংবিধানে স্বাধীনতার পর থেকে চলে আসছে। এই সংবিধানকে যারা মিস ইউজড করেছে, যারা অপব্যবহার করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। তিনি বলেন, আজকে বৈষম্যমূলক কথাবার্তা বলা হচ্ছে। এই কিছুক্ষণ আগে আমাদের ছেলে-মেয়েরা যারা নাকি আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ হিসেবে কাজ করেছে ৫ আগস্ট, এককভাবে তারা এই আন্দোলনকে নিজেদের করে নিতে চায়। যখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন নিভু নিভু তখন কিন্তু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সামনে এগিয়ে আসে। সাধারণ মানুষ সামনে এগিয়ে আসে, আমরা এগিয়ে যাই। আমাদের বিএনপির রাজনৈতিক কর্মীই মারা গেছে ৪৬২ জন। নিশ্চয় নেতৃত্বে একজন থাকবে, পেছনে হাজারো লোক থাকবে। কিন্তু এককভাবে কেউ কারও দাবি করা ঠিক না৷ এতে কিন্তু জনমনে বিভেদ সৃষ্টি হবে। এই যে, আমাকে কথাটা বলতে হচ্ছে, আমাকে এই কথাটা বলতে বাধ্য হতে হয়েছে। কারণ, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি, সেটাও সম্মুখভাগে। আমার সঙ্গের অনেক সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধব মারা গেছে। প্রায় ৩০ লাখ শহীদ হয়েছে। শহীদের রক্ত দিয়ে লেখা যে সংবিধান, সেটিকে যখন কবর দেওয়ার কথা বলা হয় তখন কিন্তু আমাদের কষ্ট লাগে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের প্রতি অনুরোধ রেখে মির্জা আব্বাস বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভাইদের কাছে অনুরোধ করবো বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা করবেন। ভুল বুঝবেন না। কবর দিয়ে দেব, মেরে ফেলব, কেটে ফেলব- এই ধরনের কথাগুলো কিন্তু ফ্যাসিবাদের মুখ থেকে আসে। এগুলো কিন্তু ভালো কথা নয়৷ জাতি তাকিয়ে আছে আপনাদের দিকে। আমরাও তাকিয়ে আছি। আপনাদের মুখ থেকে এই ধরণের কথা আমি আশা করি না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য আরও বলেন, কিছু লোক বাহির থেকে সরকার গঠন করে ফেলেছেন মনে হয় এরকম। এদের সঙ্গে কথাবার্তা হয়। তাদের কথাবার্তার যে ঝাঁজ, আজকে আমাদের ছাত্র ভাইদের কথাবার্তার যে ঝাঁজ একই রকম। আমরা তাহলে ৭১ সালে কি করলাম? আমার প্রশ্ন এই জায়গায়, ৭১ সালে জাতি কি করলো? আমরা কি অন্যায় করেছিলাম? আমি জানি, একটা পক্ষ বলবে, হ্যাঁ। ওইদিন পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে অন্যায় করেছেন। বলতে পারেন, স্বাধীনতা আছে। কিন্তু আমরা কি অন্যায় করেছিলাম যুদ্ধ করে? এই দেশকে স্বাধীন করে? আপনাদেরও একদিন বয়স হবে। বুঝতে পারবেন সেদিন, যদি কেউ বলে আমরা তোমাদের সংবিধানকে ছুড়ে ফেলে দিলাম, তাহলে কেমন লাগবে? সেদিন বা দুদিন পরে কেউ বলে তোমাদের সংবিধান ছুড়ে ফেলে দিলাম। আপনাদের মতোই কেউ যদি আবার চলে আসে তখন কি হবে? ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুন সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সহ-সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, সাবেক দপ্তর সম্পাদক সাইদুর রহমান মিন্টু প্রমুখ।