ঢাকাশুক্রবার , ২০ ডিসেম্বর ২০২৪
আজকের সর্বশেষ খবর

বাংলাদেশের দুর্নীতি তদন্তে যুক্তরাজ্যের লেবার মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের নাম


ডিসেম্বর ২০, ২০২৪ ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ভোরের খবর ডেস্ক:   বাংলাদেশের একটি অবকাঠামো প্রকল্প থেকে যুক্তরাজ্যের লেবার মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের পরিবার ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন পাউন্ড (৫৯ হাজার কোটি টাকা) আত্মসাৎ করেছে এমন অভিযোগের তদন্তে তার নাম উঠে এসেছে।টিউলিপ সিদ্দিক (৪২), যিনি যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি)। দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বে আছেন তিনি। তার বিরুদ্ধেই এবার আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।অভিযোগ রয়েছে, তিনি বাংলাদেশে বেশি অর্থ ব্যয়ে একটি নতুন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি করার ক্ষেত্রে ২০১৩ সালে মধ্যস্থতা করেছিলেন। চুক্তির মূল্য থেকে আরও কয়েক কোটি ডলার বৃদ্ধি দেখিয়ে প্রকল্প ব্যয়ের নাম করে এই অর্থ আত্মসাৎ করেন তিনি।গত আগস্টে টিউলিপ সিদ্দিকের খালা ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দেশটির দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যে তদন্ত করছে, তার আওতায় রয়েছে দুর্নীতির এই অভিযোগ।টিউলিপ সিদ্দিকের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র এই অভিযোগকে ‘বানোয়াট’ বলে অভিহিত করেছে। সূত্রটি আরও বলছে, অভিযোগগুলো ‘সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ এবং তার খালার ক্ষতি করার জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছিল।কনজারভেটিভ শ্যাডো হোম অফিসের মন্ত্রী ম্যাট ভিকার্স বলেন, লেবার পার্টির দুর্নীতি দমন বিষয়ক মন্ত্রীর দুর্নীতির মামলায় জড়িয়ে পড়ার ঘটনাটি প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারকে প্রশ্নের মুখে ফেলবে।যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট বলেছে, প্রধানমন্ত্রী স্যার কেয়ার স্টারমার সিদ্দিকের ওপর আস্থা রেখেছেন এবং তিনি তার দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারী মুখপাত্র জানিয়েছেন, সিদ্দিক অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে যেকোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন।টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলেন হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ।বিবিসি জানতে পেরেছে, তদন্তের অংশ হিসেবে সিদ্দিকের সঙ্গে দুদকের কোনো যোগাযোগ হয়নি। তার মা শেখ রেহানাসহ হাসিনার পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য এবং তার সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও দুদক তদন্ত করছে।২০ বছরের বেশি বাংলাদেশের নেতৃত্বে থাকা শেখ হাসিনাকে দেখা হতো একজন একনায়ক হিসেবে, যার সরকার নির্দয়ভাবে ভিন্নমতের ব্যক্তিদের দমন করত।শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের নতুন সরকার তাকে একাধিক অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করেছে। শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে; জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে, যা আগস্টের  বিক্ষোভের সময় সংঘটিত হয়েছিল এবং শত শত লোক নিহত হয়েছিল।দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সাবেক সরকারের মন্ত্রীসহ আরও ৪৫ জনের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফারুক এসব অভিযোগকে বানোয়াট বলেছেন।সিদ্দিক ২০১৫ সালে হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেটের থেকে এমপি নির্বাচিত হন, যা প্রধানমন্ত্রী স্যার কেয়ার স্টারমারের নির্বাচনী এলাকা হলবর্ন এবং সেন্ট প্যানক্রাসের পাশে অবস্থিত। ক্ষমতাচ্যুত সরকারের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ও দোষী সাব্যস্ত হওয়া বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়।সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াও একই ধরনের অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছিলেন, এটাকে তিনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে বলেছিলেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৮২ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। বাংলাদেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অনেকদিন ধরেই প্রশ্নবিদ্ধ। শাসক দলগুলোকে নিয়মিতভাবে রাজনৈতিক বিরোধীদের টার্গেট করার জন্য অভিযুক্ত করা হয়।আদালতের নথিতে দেখা গেছে, টিউলিপ সিদ্দিককে ১০ বিলিয়ন পাউন্ডের রূপপুর পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রকল্প নির্মাণের জন্য রাশিয়ান সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের মধ্যস্থতার জন্য অভিযুক্ত করেছেন ববি হাজ্জাজ। ববি হাজ্জাজ দাবি করেছেন, রূপপুর প্রকল্পের জন্য প্রায় এক হাজার কোটি ডলারের একটি চুক্তি করা হয়। কিন্তু টিউলিপ সিদ্দিক চুক্তির মূল্য থেকে আরও ১০০ কোটি ডলার বৃদ্ধি করেন এবং প্রকল্প ব্যয়ের নাম করে এই অর্থ আত্মসাৎ করেন। যার ৩০ শতাংশ টিউলিপ সিদ্দিক নিজে নেন এবং বাকি অংশ তার পরিবারের অন্য সদস্যদের দেন।হাজ্জাজের অভিযোগ, হাসিনার পরিবার ও মন্ত্রী টিউলিপ প্রকল্প থেকে মোট ৩.৯ বিলিয়ন পাউন্ড সরিয়েছেন।এপির একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ২০১৩ সালে টিউলিপ সিদ্দিক ক্রেমলিনে হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের চুক্তি স্বাক্ষরের সময় উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র: বিবিসি

✅ আমাদের প্রকাশিত কোন সংবাদের বিরুদ্ধে আপনার অভিযোগ  বা পরামর্শ থাকলে ই-মেইল করুনঃ dailyvorerkhabor@gmail.com ❌ বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।