নিজস্ব প্রতিনিধি: সারাদেশে নানা আয়োজনে দীর্ঘ ১৭ বছর পর, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন করেছে, বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দরা। বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি পালিত হয়েছে পাবনায়। এ উপলক্ষে বেড়া সাথিয়া থেকে হাজার হাজার মানুষের রেলি নিয়ে, পাবনা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান, ৬৮ পাবনা ১ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী ভিপি শামসুর রহমান। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক, হাবিবুর রহমান হাবিব।
সিপাহি জনতার বিপ্লবের মহানায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতি সালাম ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সর্বস্তরের বিএনপির নেতৃবৃন্দ রা। এ সময় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের বাতিল করা ছুটি পূনর্বহালের দাবি জানান তারা।
ঐতিহাসিক ৭ ই নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে মহান স্বাধীনতার ঘোষক, রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্বনির্ভর ও আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম) কে শ্রদ্ধাভরে স্মরন করেন পাবনা জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা।
১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর সংঘটিত হয়েছিল জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি। কর্নেল (অবঃ) আবু তাহেরের নেতৃত্বে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থান জেনারেল খালেদ মোশাররফের ৩ দিনেব্যাপি সামরিক অভ্যুত্থানের পতন ঘটায়। এই বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে জেনারেল প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান বন্দীদশা থেকে মুক্তি পান এবং পরবর্তীতে ক্ষমতায় আসেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সরকারের আমলে মূলত ৭ই নভেম্বর বাংলাদেশে সরকারি ছুটি হিসেবে পালিত হয়েছে।
১৯৭৫ সালের এই দিনে সিপাহি-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবে দেশের তৎকালীন রাজনীতির গতিধারা পাল্টে গিয়েছিল। দেশ ও জাতি পেয়েছিল নতুন দিশা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড এবং ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার ঘটনার ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনীর তৎকালীন উপপ্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফ তার অনুসারী সেনা সদস্যদের নিয়ে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করেন। নিজেকে সেনাপ্রধান হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ৬ নভেম্বর বঙ্গভবনে গিয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদকে গ্রেপ্তার করে করে মন্ত্রিসভা বাতিল ও জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেয় খালেদ মোশাররফ। প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে দেশের প্রেসিডেন্টের পদে বসান। ওই রাতেই সেনাবাহিনীর সাধারণ সিপাহিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
সেই অভ্যুত্থানে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দিয়ে সর্বস্তরের জনতা রাজপথে নেমে আসে। সিপাহি-জনতার মিলিত সেই বিপ্লবে বন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত হন জিয়াউর রহমান। পাল্টা অভ্যুত্থান ঠেকাতে গিয়ে ৭ নভেম্বর সকালে কয়েকজন অনুসারীসহ প্রাণ হারান খালেদ মোশাররফ। অভূতপূর্ব এক সংহতির নজির সৃষ্টি হয় দেশের রাজনীতিতে। তখন মেজর জিয়াউর রহমান চলে আসেন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পটপরিবর্তনের পর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রভাবমুক্ত হয়ে শক্তিশালী সত্তা লাভ করে। গণতন্ত্র মুক্ত হয়ে অগ্রগতির পথে এগিয়ে যায়, এই দিন থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়।সেনা ট্যাঙ্কে ফুলের মালা পরিয়ে জনগণ সিপাহি বিপ্লবকে অভিনন্দন জানায়। বেতারে ‘আমি জিয়া বলছি’ ভাষণ শুনতে পায় দেশবাসী। পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় নিজেকে সুসংহত করেন একাত্তরের ২৫ মার্চের গণহত্যা প্রতিরোধে বিদ্রোহ করে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া মেজর জিয়া। ৭ নভেম্বরের পর তিনি সামরিক শাসক থেকে রাজনীতিকে পরিণত হন।
এর পর থেকে ৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। বিএনপি সরকারের আমলে এ দিনটিতে ছিল সরকারি ছুটি। তবে আওয়ামী লীগের দেড় যুগের শাসনামলে গত দেড় দশকেরও বেশি সময় দিবসটি স্বাচ্ছন্দ্যে উদযাপন করতে পারেনি বিএনপি।
পৃথক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরে আমরা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম, সেই একই চেতনা বুকে ধারণ করে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিশ্চিত করা, স্বাধীনতার সুফল তথা অর্থনৈতিক মুক্তি, শান্তি-শৃঙ্খলা, সাম্য, ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।