ভোরের খবর ডেস্ক: ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া শেখ হাসিনার বিভিন্ন সময়ে দেয়া বক্তব্য-বিবৃতিকে ভালো চোখে দেখছে না সরকার। এমনটাই জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মো. তৌফিক হাসান। বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একাধিকবার বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত ও ভারতীয় সরকারকে বিষয়টি জানিয়েছে। তাদেরকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ৫ই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময়ে ভারতে চলে যাওয়ার পর সেখানকার বিভিন্ন গণমাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে যে রাজনৈতিক বিবৃতি ও বক্তব্য দিচ্ছেন, সেটি বাংলাদেশ সরকার ভালোভাবে দেখছে না। এ ব্যাপারে সরকারের তীব্র অসন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে এ ধরনের বক্তব্য-বিবৃতি প্রদান থেকে বিরত রাখার ব্যবস্থা করতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। তৌফিক বলেন, আমাদের দুই দেশের মধ্যে যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ সেটির জন্য এ ধরনের বক্তব্য থেকে তাকে বিরত রাখাটা অত্যন্ত জরুরি। এ বিষয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের জবাব কি? জানতে চাইলে মুখপাত্র বলেন, আমরা যখন ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেছি, তখন তিনি বলেছেন, বিষয়টি তার সরকারের কাছে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে জানাবেন। আমরা আসলে সত্যিকার অর্থে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো জবাব পাইনি। তারা বিষয়টি দেখবেন এরকম জানিয়েছেন। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে এবং তাকে ভারত থেকে প্রত্যাবর্তন করানো হবে কিনা? জানতে চাইলে মুখপাত্র বলেন, এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আমাদেরকে যদি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, তখন আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নেবো। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত এমন বিষয় নিয়ে কোনো অনুরোধ পায়নি। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও এমপি ভারতে অবস্থান করছেন-সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে কিনা? জানতে চাইলে মুখপাত্র বলেন, না এ নিয়ে কোনো তথ্য নেই। ভারতের ভিসা পাওয়া সংক্রান্ত জটিলতার বিষয়ে পররাষ্ট্রের মুখপাত্র বলেন, বিষয়টি আমরা ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে বারবার বলে আসছি এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে তাদের লোকবল সংকটের কথা জানিয়েছে। স্বাস্থ্য ভিসা এবং তৃতীয় দেশে যাওয়ার জন্য ভিসা প্রত্যাশীদের বিষয়টি যেন তারা দ্রুততার সঙ্গে বিবেচনা করেন সেটি আমরা তাদের বলেছি। সেই সঙ্গে রোমানিয়া, বুলগেরিয়া এবং ফিনল্যান্ডে যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ভিসা পাওয়া সহজ করার অনুরোধ করেছি।
অপর প্রশ্নে তৃতীয় দেশের ভিসাপ্রার্থীরা দিল্লির পরিবর্তে ভিয়েতনাম এবং পাকিস্তান থেকে ভিসা গ্রহণ করতে পারবেন বলে জানান মুখপাত্র মিস্টার হাসান।
কূটনীতিকদের নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা অত্যন্ত দুঃখজনক: এদিকে সম্প্রতি সামাজিক গণমাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে কূটনীতিকদের নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মো. তৌফিক হাসান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন রাষ্ট্রদূত বা বিভিন্ন কূটনীতিক, যারা রাষ্ট্রদূত হতে যাচ্ছেন- তাদের বিষয়ে নেতিবাচক প্রচারণা হচ্ছে। এটি খুবই দুঃখজনক। তিনি বলেন, ২০-২৫ বছর অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের পরে একজনকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় এবং যোগ্য না হলে সরকার রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয় না বলে তিনি জানান। মুখপাত্র বলেন, রাষ্ট্রদূতদের বিষয়ে এ ধরনের নেতিবাচক প্রচারণা যারা করছেন- তারা ভালো কাজ করছেন না। এটি আসলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সরকারের নেতিবাচক ভাবমূর্তি বিদেশে তুলে ধরছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংস্কারের বিষয়ে তিনি জানান যে, অবসরে যাচ্ছেন অথবা অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক কিন্তু রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন- তাদের মেয়াদ আর বর্ধিত করা হচ্ছে না। ডিসেম্বরে ৭-৮ জন কূটনীতিক অবসরে যাচ্ছেন। তাদের কারও মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে না। এর ফলে নতুন প্রজন্মের কূটনীতিকরা উৎসাহিত বোধ করছেন। কারণ মেয়াদ বাড়ানো হলে, নতুন প্রজন্মের কূটনীতিকদের রাষ্ট্রদূত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ এ্যাড. নজরুল ইসলাম । ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দৈনিক ভোরের খবর,খন্দকার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান। অফিসঃ ১৫০ নাহার ম্যানসন (৫ম তলা) মতিঝিল বানিজ্যিক এলাকা,ঢাকা -১০০০। বার্তাকক্ষ-+৮৮০১৭৪৫-৩৫৪২৭৭