ভোরের খবর ডেস্ক: কৃষকদলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, প্রত্যেকে একটি ম্যাসেজ দিতে হবে যে, তোমার যাকে খুশি ভোট দাও, কিন্তু ভোট যাতে হয় যেকোনো মূল্যে এই ব্যবস্থাটা করতে হবে। আমাকে দেয়ার দরকার নাই। তুমি যাকে ভালো মনে করো, তুমি তাকে ভোট দাও। ভোট হতে হবে। এটার সঙ্গে কোনো আপস নাই। শনিবার রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে কৃষকদলের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন ও আলোচনা সভায় তিনি এ সব কথা বলেন। এ সময় আগামী তিন মাস প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষক সমাবেশের ঘোষণা দেন তিনি।
কৃষকদলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, প্রত্যেকে একটি ম্যাসেজ দিতে হবে যে, ভাই তুমি যে রাজনীতিতেই বিশ্বাস করো না কেনো, কিন্তু তুমি একটি জায়গায় এসে দাঁড়াও। ওই ডামি নির্বাচন হতে পারবে না, ওই নিশিরাতের ভোট হতে পারবে না। দিনের আলোতে ভোট হতে হবে। যাকে খুশি তাকে ভোট দেয়ার স্বাধীনতা থাকতে হবে। নিরাপদে ভোট দেয়ার স্বাধীনতা থাকতে হবে। কেউ কাউকে ভোট দেয়ার সময় ডিস্টার্ব করতে পারবে না। যাবে, লাইন ধরবে, ভোট দিয়ে চলে আসবে। তার মত সে প্রকাশ করবে। কোন ভয়-ভীতি থাকবে না। নিরপেক্ষভাবে ভোট হতে হবে। এটার সঙ্গে কোন আপস নয়। ষড়যন্ত্র যদি রুখতে হয় তাহলে অবশ্যই ভোটের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশ, দেশের মানুষ এবং এদেশের জাতীয়তাবাদী শক্তি, এই তিনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কিন্তু থেমে নেই। এই ষড়যন্ত্র যে থেমে নেই তা আপনারা পত্র-পত্রিকায় নিউজের মাধ্যমে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে, বিভিন্ন টেলিফোন আলাপের মাধ্যমে আপনারা কম-বেশি জানতে পারছেন। কাজেই জাতীয়তাবাদী শক্তির সহকর্মীদের বলব, ষড়যন্ত্র যে থেমে নেই। এই কথাটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। শুক্রবার আমি একটি কথা বলেছিলাম, আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবো না ততক্ষণ পর্যন্ত, একটি উদাহরণ দিয়ে বলি, আজকে যে বাজার সিন্ডিকেট- এটিকে ভাঙা সম্ভব হবে না। এটি যদি ভাঙতে হয়, দ্রব্যমূল্যের পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে হয় তাহলে প্রকৃত জনপ্রতিনিধি দরকার।
তিনি বলেন, যারা মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। যেদিন এরকম একটি সিস্টেম তৈরি করা সম্ভব হবে, সেদিনই বাজার পরিস্থিতি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। আমরা যেটাই উন্নত করতে চাই না কেনো, জনগণের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নিশ্চিত করতে হবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে না পারলে জনগণের কাছে জবাবদিহি করে এরকম ব্যক্তিদের সামনে আনতে না পারলে কোনভাইে আমরা ভালো কিছু করতে পারব না।
আদা-রসুন ও পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ডিমের দাম ১৬০টা থেকে ২০০ টাকার কাছাকাছি চলে যাচ্ছে। কেনো? এটার কিছু সমস্যা তো আছে। যেটা আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখি। এর বাইরে আমি মনে করি, একটি বড় সমস্যা আছে- সেটি হচ্ছে আমাদের আরও উৎপাদন বাড়াতে হবে। আর পানি আমাদের বড় একটি বিষয়। ২০ কোটি মানুষের দেশে আমাদের পানি বিরাট একটি সংকট আছে। পানি কৃষির সঙ্গে সম্পর্কিত। কৃষির সঙ্গে পানি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পানি ছাড়া আপনি কৃষির কিছুই করতে পারতেন না। শহীদ জিয়াউর রহমানের সময় খাল খনন কর্মসূচি শুরু করা হয়েছিল। ওই সময় কৃষির অনেক সেক্টরে হাত দেয়া হয়েছিল। তার ফলেই কিন্তু শহীদ জিয়া যখন দেশের দায়িত্বভার পান, তখন ফসলের উৎপাদন ছিল, বিশেষ করে ধান ১১ মিলিয়ন টনের কাছাকাছি ছিল। শহীদ জিয়ার সময় দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে দুই মিলিয়নের বেশি এটি বৃদ্ধি পায়। এটির প্রধান কারণ ছিল, খাল খনন কর্মসূচি। আগামীতে বিএনপি জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করলে আমরা শহীদ জিয়ার খাল খনন কর্মসূচি আবার শুরু করব, ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতের জন্য ইউনিয়ন পর্যন্ত সরকারিভাবে ক্রয় কেন্দ্র করা যায় কি, এটি করলে লাভ হবে কি না- এটি আমাদের চিন্তার মধ্যে আছে। কৃষকের জন্য শস্য বীমা চালু করা, সেচ ব্যবস্থা, কৃষকের স্বার্থ উন্নয়নসহ যাবতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কৃষি ভিত্তিক শিল্প কলকারখানা করার উদ্যোগ গ্রহণ করা, একচেটিয়া কারবারি বন্ধ, সমবায় ভিত্তিক চাষ পদ্ধতি চালু করাসহ কৃষকের জন্য অনেক বিষয় আমাদের দেখতে হবে।
ঝড়, বৃষ্টি, তুফান এবং বন্যায় এদেশে কৃষকের ফসল নষ্ট হয় মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, আমরা কৃষি বিমার কথা চিন্তা করেছি। যাতে কৃষকের বীজ ও ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলে, সে সময় পর্যন্ত কৃষককে সেই সহযোগিতা করা যায়। সারের সমস্যা আছে। আর একটি বড় সমস্যা আছে। সেটি হচ্ছে, কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। কিভাবে আমরা কৃষির জমি বাড়াতে পারি, এবিষয়টি আমাদের চিন্তা করতে হবে।
তিনি বলেন, কৃষি সেক্টরে আমাদের অবশ্যই নজর দিতে হবে। বীজে সমস্যা রয়েছে। এটি একটি বিরাট সমস্যা। কৃষকের বীজের সমস্যা সম্পূর্ণভাবে সমাধান করা যায়। আমাদের ৩১ দফার মধ্যে এব্যাপারে কথা রেখেছি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, কৃষকদল আগামী তিন মাসে প্রায় ৪ হাজারের মতো ইউনিয়নে যাবেন। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলবেন। তাদের আমাদের দলের সদস্য পদ গ্রহণের জন্য চেষ্টা করবেন। একইভাবে তাদের সমস্যাগুলো জানার জন্য চেষ্টা করবেন। পরবর্তীতে সমাধানগুলো আমরা বের করার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।
কৃষকদলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু প্রমুখ বক্তব্যে রাখেন।