মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি: মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে ভূমিদস্যু, জমিদখল, ঠকবাজি, প্রতারণা ও মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানীর মুখে সর্বশান্ত করার অভিযোগ উঠেছে রফিকুল ইসলাম মোল্লা ওরফে লিটন মোল্লার বিরুদ্ধে৷
নিরীহ গ্রামবাসীর কাছে মূর্তিমান আতঙ্কের নাম লিটন মোল্লা। লিটন মোল্লা ও তার ভাইদের কবলে পড়ে অসংখ্য ভূমি মালিক সর্বশান্ত হয়ে পথে বসেছে। তার মিথ্যা মামলার ভয়ে সর্বদা আতঙ্কিত থাকে সাধারণ গ্রামবাসীরা।
এমনই এক জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে উপজেলার বেজগাও ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডে। জানগেছে একসময়ে ধাইদা নদীভাঙ্গা পরিবারটি জীবিকার তাগিদে আশ্রয় নেয় এই গ্রামে। সেই সময় একটি পরিত্যক্ত বাড়ি দখলে নিয়ে, জাল দলিলের মাধ্যমে নিজেদের ক্রয়-কৃত সম্পত্তি দাবি করে বসবাস করা শুরু করেন লিটন মোল্লার পিতা জৈনুদ্দিন মোল্লা। সেই থেকে শুরু বংশের রীতি ধরে রেখে বড় ভাই নজরুল ইসলাম মোল্লা ওরফে নজু মোল্লা,ছোট ভাই লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য, মিরাজ মোল্লা, ভাতিজা বিপুল মোল্লা সহ লিটন মোল্লা একের পর এক মানুষকে হয়রানি করে আসছেন। লৌহজং ভূমি অফিসের কতিপয় কথিত স্টাফ পরিচয়দানকারী ব্যক্তির সহযোগিতায় (যার কিনা চাকরির কোন বৈধতা নেই), অন্যের জমি দখলের চেষ্টা অব্যহতা রেখেছে। কোন ব্যক্তি লিজ নবায়ন করতে দেরি করলে সেই সুযোগে লিটন মোল্লা নিজের নামে লিজ কাটিয়ে জায়গা দখল করেছে। সরকারি খালকে নাল দেখিয়ে লিজ কেটে সরকারি জমি নিজের কুক্ষিগত করেছে। সরকারি পুকুর লিজ নিয়ে বালু দিয়ে ভরাট করেছে। লিজ কৃত জায়গার গাছ কেটে বিক্রি করেছে। এক হিন্দু ব্যক্তির জায়গা দখল করার জন্য তাকে মামলা দিয়ে হেনস্তা করার অভিযোগ রয়েছে লিটন মোল্লার বিরুদ্ধে।
এলাকার একাধিক সুত্র থেকে জানাযায়, এতকিছু পরেও ক্ষান্ত হচ্ছে না লিটন মোল্লা। সুন্দিসার গ্রামের মরহুম ইয়াসিন মৃধার সম্পদের দিকে হাত বাড়িয়ে একের পর এক হেনস্থা করছে তার পরিবারকে, এই পরিবারের বেশিরভাগ ব্যক্তিই প্রবাসী হওয়ায় দখল করার চেষ্টা করছে তাদের ৪৭ শতাংশের পুকুর , ৩৯ শতাংশের সরকারি লিজকৃত পুকুর, যা কিনা হাল সাল নাগাদ লিজ নবায়নকৃত। এখন হাত বাড়িয়েছে মরহুম ইয়াসিন মৃধার বসত বাড়ির দিকে। ইয়াসিন মৃধ্যা প্রাচীর করা বাড়ির মধ্যে সরকারি রাস্তা আছে দাবি করে একটি ভুয়া অভিযোগপত্র দাখিল করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। জেলা প্রশাসক লৌহজং প্রশাসনকে তদন্তের নির্দেশ দিলে কাল বিলম্ব না করে, লৌহজং সরকারি কমিশনার ভূমি (এসি ল্যান্ড)মো. কায়েছুর রহমান, সরজমিনে পরিদর্শন করে রাস্তার কোন অস্তিত্ব খুঁজে পান না, এমনকি পর্চা ঘেটেও কোথাও কোন রাস্তার অস্তিত্ব খুঁজে পাননি। উপায়ান্ত না পেয়ে লিটন মোল্লা এখন মিথ্যা অভিযোগ এনে পরিবারটিকে ভিন্নভাবে হয়রানি করার পরিকল্পনা করতেছে।
স্থানীয়রা জানান, এ বিষয়ে গ্রামবাসী প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি না হলেও নাম না প্রকাশ করার শর্তে অনেকেই জানান লিটন মোল্লা একজন ভূমিদস্যু, রাজনৈতিক দল বদল হলেই তার দল ও বদলে যায়, কোন এক সচিবের দোহাই দিয়ে একের পর এক মানুষকে হয়রানি করে আসছে । আমরা এসব বলছি এটা যদি জানতে পারে আমাদেরও বিপদে ফেলবে। লিটন মোল্লা এতই ভয়ংকর যে আমরা কিছু আর বলতে চাই না।
এ বিষয়ে লিটন মোল্লার বক্তব্য থেকে জানা যায়, ইয়াসিন মৃর্ধার বাড়ির উপরে ইট বিছানো রাস্তা ছিলো।
এ বিষয়ে বেজগাও ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য আবু তাহের মৃর্ধা বলেন, গ্রামে অনেকেই অনেক কিছু বলে, আমার কাছে এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ আসেনি। তবে ইয়াসিন মৃর্ধা সাহেবের বাড়িটি তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি তাদের প্রয়োজনে তারা সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেছে, এটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। লৌহজং সহকারি কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) মহোদয় তদন্তে এসেছিলেন আমি ও সেখানে উপস্থিত ছিলাম আমি যতোটুকু জেনেছি বা জানি তাই বলেছি।
এবিষয় ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য মতিউর রহমান রিয়াদ বলেন, লিটন মোল্লা আমাদের বাড়ির যায়গা মিথ্যাবানোয়াট ভাবে দখলের পায়তারা করছেন। আমরা প্রবাসী তাই তিনি এসুযোগে দখলের চেষ্টা করতেছে। তিনি আমার নামে থানায় একটি মিথ্যা অভিযোগও করেছেন যে তাকে নাকি আমি ফোনে হুমকি দিয়েছি যা সম্পুর্ন মিথ্যা ও বানোয়াট। তিনি বিভিন্ন গরিব অসহায় মানুষের জমির ভুয়া দলিল করে আত্মসাৎ করে আসছে। এখন আমার বাড়ির উঠানকে সরকারী জায়গা বলে দাবী করে আমাদের বাড়ির প্রাচীর ভেঙ্গে নিজে জমি দখলের পায়তারা করতেছেন। আমি এই অন্যায়ের বিচার চাই। প্রতারক ভুমিদস্যুরা যাতে সমাজে মাথা উচু করে মানুষকে হয়রানী না করতে পারে সেজন্য প্রশাসনের প্রতিও আহব্বান রইল।
এব্যাপারে লৌহজং সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) মো. কায়েছুর রহমান জানান, পরিদর্শনে গিয়ে আমি ওটা তাদের নিজস্ব সম্পত্তি দেখতে পেয়েছি রাস্তার কোন অস্তিত্ব খুজে পাইনি। এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি প্রাচীন নির্মাণের আগে ১০-১৫ টা পরিবার এই বাড়ির ওপর দিয়ে যাতায়াত করত। এটা একটা নিজস্ব প্রাচীর করা বাড়ি হিসেবে দেখতে পেয়েছি।