জেলা প্রতিনিধি, লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরে ফাতেমা আক্তার সাথী (২১) নামে এক গৃহবধূর লাশ পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা স্বামী-শ্বশুর ও ভাসুরকে আটক করেছে স্থানীয়রা।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) সকালে খবর পেয়ে পুলিশ সদর উপজেলার মান্দারি ইউনিয়নের মোহাম্মদনগর গ্রামের সাইফুল্লাহ মাওলানা বাড়ি থেকে নিহত গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। জিজ্ঞাসাবাদ করতে আটকদের নেওয়া হয়েছে চন্দ্রগঞ্জ থানা হাজতে।
চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাইসার হামিদ গৃহবধূর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গৃহবধূ ফাতেমা মোহাম্মদনগর গ্রামের মৃত সাইফুল্লাহ মাওলানার ছোট মেয়ে ও পাশ্ববর্তী দুর্গাপুর গ্রামের মো. রাজুর স্ত্রী। তাদের সংসারে ৩ বছরের একটি শিশুকন্যা সন্তান রয়েছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, বিয়ের পর থেকে রাজু কারণে-অকারণে প্রায় নির্যাতন করতেন গৃহবধূ ফাতেমাকে। এছাড়া ফাতেমাকে রেখে রাজু ফের নোয়াখালী সুবর্ণচরে একটি বিয়ে করে এবং বিভিন্ন সময় যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে চাপপ্রয়োগ করতেন রাজু। ১৫ দিন ধরে ফাতেমা তার বাবার বাড়িতে ছিলেন। তার সঙ্গে স্বামী রাজু ও শিশুকন্যা রূপাও ছিলেন। সোমবার ভোররাতে গোসল করতে পুকুরে যান গৃহবধূ ফাতেমা। ফিরতে দেরি হওয়াতে তার মা রোকেয়া বেগম পুকুরে যান। ওইসময় তিনি পুকুরে গিয়ে দেখেন, ফাতেমার লাশ ভেসে আছে। তার কান্নাকাটিতে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। তখন ফাতেমার স্বামী রাজুও ঘর থেকে আসেন। পরে লাশ উদ্ধার করে বসতঘরে রাখা হয়। খবর পেয়ে রাজুর বাবা মোসলেহ উদ্দিন ও বড় ভাই বাবলু গৃহবধূর বাড়িতে আসলে স্থানীয়রা বাবা-ছেলেসহ ৩ জনকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে।
নিহত গৃহবধূর বড় ভাই আব্দুল্লাহ বলেন, রাজু বিয়ের পর থেকে যৌতুকের টাকার জন্য ফাতেমাকে মারধর করতো। আমরা তাকে ১ লাখ টাকা যৌতুকও দিয়েছি। এরপরও আমার বোন ফাতেমাকে মারধর করতো। প্রায় ১৫ দিন থেকে আমার বোন ও তার স্বামী আমাদের বাড়িতে থাকছেন। সোমবার ভোরে ঘরের পাশের একটি পুকুরে আমার বোনের মরদেহ পাওয়া যায়। ঘরে তারা ২ জন ও তাদের মেয়ে ছিল। রাজু নিজেই আমার বোনকে হত্যা করছে। ফাতেমার গলায় দাগ রয়েছে। আমাদের ধারণা, গলা টিপে তাকে হত্যা করে এখন নাটক করছে।
তিনি আরো বলেন, বিয়ের পর থেকে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন করতেন রাজু। পরে টাকা দিয়ে বিদেশ পাঠাই। এরপরেও সংসারে শান্তি ছিল না। কয়েক মাস আগে রাজু অন্যত্র বিয়ে করে। এনিয়ে তাদের সংসারে অশান্তি আরো বেড়ে।
ফাতেমার স্বজনদের অভিযোগ, যৌতুকে জন্য নির্যাতন করেই ফাতেমাকে হত্যা করা হয়েছে। পূর্বেও তাকে ব্যাপক নির্যাতন করা হতো। ভোরে বাড়ির পাশের পুকুরের পানিতে ফাতেমার মরদেহ দেখতে পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তার স্বামী রাজুকে সন্দেহ করা হচ্ছে।
ফাতেমার বড় বোন রাবেয়া আক্তার বলেন, ৫ বছর আগে আমার বোনের সাথে রাজুর বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমার বোনকে জ্বালাতন করতেন রাজু। যৌতুক চাইতেন। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে জমি বিক্রি করে তাকে বিদেশ পাঠানো হয়। এক মাসের মাথায় চলে এসে আবার আমার বোনকে নির্যাতন শুরু করে।
স্থানীয় নারী ইউপি সদস্য তাজ নাহার বেগম বলেন, ফামেতার মরদেহ বাড়ির পাশের পুকুরে পাওয়ার সংবাদ শুনে আমি তাদের বাড়িতে আসি। হত্যার অভিযোগে তার স্বামী রাজুকে বাড়ির লোকজন গাছের সাথে বেঁধে রাখে। পরে পুলিশকে খবর দেয়া হয়।
গৃহবধূর স্বামী ও হত্যায় অভিযুক্ত রাজু জানান, আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে ১৫ দিন ধরে এ বাড়িতে আছি। আমাদের মাঝে এখন দ্বন্দ্ব নেই। সেই আমাকে ঘরে রেখে গোসল করতে আসছে। ঘরে যেতে দেরি হওয়াতে আমার শাশুড়ি পুকুরে এসে দেখতে পান আমার স্ত্রীর লাশ ভেসে আছে। আমি এ ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবি করছি।
ওসি কাইসার হামিদ ভোরের খবরকে জানান, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে গৃহবধূর লাশ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো ব্যবস্থা করেছি। স্থানীয়রা স্বামী-শ্বশুর ও ভাসুরকে আটক করে রাখছে। আমরা তাদের থানায় নিয়ে জিজ্ঞেসাবাদ করবো। পুরো ঘটনাটি আমাদের তদন্তধীন রয়েছে।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসান মোস্তফা স্বপন জানান, ২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ঘটনাটি সঠিকভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।