ভোরের খবর ডেস্ক: আওয়ামী লীগের করা আইনেই হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা.শফিকুর রহমান।
রোববার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের উদ্যোগে বার্ষিক সদস্য সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। দিনব্যাপী সম্মেলন বিভিন্ন সেশনে বিভক্ত করা হয়েছে। এই সম্মেলন উদ্বোধন ঘোষণা করেন বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ নাসিব হাসান রিয়ানের পিতা মো.গোলাম রাজ্জাক। উদ্বোধনী সেশনে আন্দোলনে চোখ ও পা হারানো ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
শফিকুর রহমান বলেন, ৫ই আগস্টে যারা গণহত্যা চালিয়েছে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের বিচার আগে করতে হবে। তারা বলতেন আইন সবার জন্য সমান। সেই সমান আইনে তাদের (আওয়ামী লীগ) বিচারের অধিকার আছে কি-না? তাদের তৈরি করা কালা-কানুনে দ্রুত তাদের বিচার করতে হবে। তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে যেন তাদের বঞ্চিত করা না হয়।
তিনি বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত সকল হত্যায় জড়িতদের বিচার করতে হবে। তবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৫ই আগস্টে যারা গণহত্যা চালিয়েছে তাদের বিচার আগে করতে হবে। শহীদের রক্ত এখনো তাজা, শহীদের পরিবার, স্বজনরা এখনো কাঁদছে। আহতরা এখনো কাতরাচ্ছে। আমাদের দাবি স্পষ্ট, বিচার হোক। এই বিচার করা খুবই সহজ কারণ সাক্ষীও জীবিত। এজন্য যতদ্রুত সম্ভব ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য গণহত্যায় জড়িতদের ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে। আমরা অন্যায় জুলুম চাই না।
জামায়াতের আমীর বলেন, ২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবর লগি-বৈঠার তাণ্ডব চালিয়ে বাংলাদেশের মানবতা ও গণতন্ত্রকে জনগণের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষাকে জবাই করা হয়েছে। ওই দিনটিতে সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ পথ হারিয়েছিল। দীর্ঘ সাড়ে ১৭ বছর বহু ত্যাগ-প্রতীক্ষার পর গত ৫ই আগস্ট বাংলাদেশ তার আপন পথ ফিরে পেয়েছে। সেদিনকার ঘটনায় যার সবচেয়ে বেশি দায় তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ক্ষমতায় এসে তারা সেই মামলা শেষ করে দিয়েছিল। সেই মামলা আল্লাহ চাইলে মাটির নিচ থেকে উঠিয়ে আনা হবে, ইনশাআল্লাহ। কারণ মজলুমের বিচার আল্লাহ করেন।
তিনি বলেন, ২৮শে অক্টোবরের পর সাজানো-পাতানো নির্বাচনে একটি দল ক্ষমতায় এসেছিল। সেই দলটির নাম এখন কেউ নিতে চায় না। আমরাও নিবো না। তাদেরকে নিষিদ্ধ করার ইতিহাস আছে, যখন বাকশাল কায়েম করা হয়। সেই দলটিকে জনগণ আবার নিষিদ্ধ করেছে।
শফিকুর রহমান বলেন, ক্ষমতায় আসার দুই মাস না যেতেই তারা সেনাবাহিনীর গায়ে হাত দিয়েছে। ৫৭ সেনা অফিসারকে হত্যা করেছে। ইজ্জত-সম্ভ্রম লুণ্ঠন করে সেনা অফিসারের মা, বোনকে হত্যা করা হয়েছে। সেই জঘন্য ঘটনা জনগণ কখনো ভুলেনি। ঘটনার তদন্ত কমিটি হয়েছিল। কিন্তু একটা তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সেনাবাহিনীকে পর্যন্ত জানতে দেয়া হয়নি। নেপথ্যের নায়ক হুকুমদাতাদের আড়াল করা হয়েছে। তদন্তের নামে জনগণকে ধোঁকা দেয়া হয়েছে। মিডিয়া হাতের পুতুল, বলির পাঠা ছিল। খুনিরাই ক্ষমতায় এসে খুনের রাজত্ব কায়েম করে দুঃশাসন উপহার দিয়েছে। তারা একসঙ্গে সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দিয়েছে, বিডিআরের নাম-নিশানা মুছে ফেলেছে। শুধু ক্ষমতার লালসার জন্য তারা এই কাজ করেছিল। ওই কুখ্যাত দলের নেতা-নেত্রীরা এ কাজ করেছিল।
তিনি বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডে যাদেরকে ব্যবহার করা হয়েছে তারা জেলে, কিন্তু যারা নেপথ্যের নায়ক-নায়িকা, তাদের পাওনা বাকি। তা তাদের পেতে হবে।
এতো এতো দল থাকতে জামায়াতে ইসলামীকে কেন টার্গেট করা হয়েছিল- এমন প্রশ্ন রেখে জামায়াতে আমীর বলেন, তারা জানতো একটি দল দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও স্বার্থ কারো কাছে কখনো বিলিয়ে দিতে এবং বিক্রি করতে রাজি হয়নি। কোনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেনি। অতএব, তাদের মাথাগুলো আগে ধরতে হবে। সেজন্য তারা জামায়াতে ইসলামীর মাথায় হাত দিয়েছিল। বিচারিক হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে শীর্ষ নেতাদের দুনিয়া থেকে বিদায় করেছিল। আজ রাজপথের স্লোগান ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। জামায়াতে ইসলামীর স্লোগানও এটাই- ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’।
জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে হাজারো অপতৎপরতা চালানো হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, এর উদ্দেশ্য ছিল প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করে দেয়া। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ যেন সোচ্চার হতে না পারে। চতুর্দিক থেকে সমস্ত চাপ প্রয়োগ করে জামায়াতকে নড়তে দেয়া হয়নি। মাঠে এক তরফা খেলানো হয়েছে, শাহবাগে আসর বসানো হয়েছে। সেই আসরে আজেবাজে বিশেষ জিনিসও সাপ্লাই করা হয়েছে। আসরের নামে ওদের ডাক দেয়া হয়েছে। সংসদ ভবন থেকে একজন চিৎকার করে বলেছিলেন, আমার দেহটা সংসদে, মনটা পড়ে আছে শাহবাগে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দুই একজন আলেম নামের কলঙ্ক সেদিনের অপকর্মের অংশীদার হয়েছিলেন। আসলে তারা জ্ঞানী না, জ্ঞানপাপী। জাতি আজকে তাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে না।
তিনি আরও বলেন, ২০১৩ সালের ৫ই মে হেফাজতের ওপরে ক্র্যাকডাউন করা হয়েছিল। যা ছিল আরেকটি গণহত্যা। ঠিক কতোজনকে হত্যা করা হয়েছিল, তা আজও জানি না। এবার ৫ই আগস্টের ৪ দিন আগে জামায়াতে ইসলামকে উদ্দেশ্য করে বলা হলো, বেশি বাড়াবাড়ি করলে ২০১৩ সালের ৫ই মে রাতে যা ঘটেছিল, আমরা সে রাতের সাফ করে দিয়েছিলাম, সেরকম সাফ করে দেয়া হবে। সে কথা কিন্তু মিডিয়ার সামনেই বলা হয়েছিল।
উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি ড.মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় সম্মেলনে জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য আব্দুর রব, দক্ষিণের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুবারক হোসেন, উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মূসা, ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ডা.ফখরুদ্দিন মানিক, মহানগর উত্তর শিবির সভাপতি আনিসুর রহমান, পশ্চিমের সভাপতি সালাহ মাহমুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।