নিজস্ব প্রতিনিধি: দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান আজ নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইবেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের মামলায় গত বছর মাহমুদুর রহমানকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। আজ রোববার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী জয়নাল আবেদীন মেজবাহ।
তবে এক্ষেত্রে আদালতের জামিন দেয়ার এখতিয়ার না থাকায় কারাগারে যেতে হবে তাকে। কারাগারে যাওয়ার পর সাজার বিরুদ্ধে আপিল করে জামিন চাইতে হবে তাকে।
গত শুক্রবার পাঁচ বছর পর দেশে ফেরেন মাহমুদুর রহমান। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে সারা দেশে ১২৪টি মামলা হয়। ২০১০ সালের জুনে প্রথম দফায় আমার দেশ বন্ধ করাসহ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে আটক করা হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় ২০১৩ সালের ১১ই এপ্রিল আমার দেশ বন্ধ করে দেয়া হয় ।
মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী সৈয়দ জয়নাল আবেদীন মেজবাহ মানবজমিনকে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করার মামলায় মাহমুদুর রহমান রোববার বেলা ১১টার দিকে আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন। আমরা আদালতে তার জামিন চেয়ে আবেদন করবো।
তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমানকে মিথ্যা বানোয়াট ভিত্তিহীন অভিযোগে সাজা দেয়া হয়েছে। তাড়িৎ গতিতে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে বিচারের নামে প্রহসন করা হয়েছে। আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি।
এ বিষয়ে সাবেক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ড. আবুল হোসেন খন্দকার মানবজমিনকে বলেন, কোনো মামলায় এক বছরের অধিক সাজা হলে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের জামিন দেয়ার সুযোগ নেই। সেই কারণে তাকে কারাগারে যেতে হবে। কারণ যে আদালত তাকে শাস্তি দিয়েছেন সেই আদালতের ৭ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির জামিন দেয়ার এখতিয়ার নেই।
নথি থেকে জানা যায়, গত বছর ১৭ই আগস্ট মাহমুদুর রহমানসহ পাঁচজনকে ৭ বছর করে কারাদণ্ড দেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূর। সাজাপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন-সাংবাদিক শফিক রেহমান, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন, তার ছেলে রিজভী আহাম্মেদ ওরফে সিজার ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়া।
দণ্ডবিধির দুইটি ধারায় একটিতে পাঁচ বছর এবং অপরটিতে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। কারাদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার টাকা পরিশোধ না করলে প্রত্যেককে আরও তিন মাসের কারাভোগ করতে হবে বলে রায়ে বলা হয়। রায় ঘোষণার সময় সবাই পলাতক ছিলেন।
রায়ে আরও বলা হয়, সাজাপ্রাপ্ত সবাই পলাতক থাকায় তারা গ্রেপ্তার হওয়ার পর অথবা আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর রায় কার্যকর হবে।
মামলার অভিযোগ ছিল, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের আগে যেকোনো সময় থেকে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনসহ বিএনপি ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত অন্যান্য দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা রাজধানীর পল্টনের জাসাস কার্যালয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় একত্রিত হয়ে পরস্পর যোগসাজশে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। ওই ঘটনায় ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান ২০১৫ সালের ৩রা আগস্ট বাদী হয়ে পল্টন মডেল থানায় মামলাটি করেন। ২০১৮ সালের ১৯শে ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এরপর ২০২২ সালের ১৩ই নভেম্বর সজীব ওয়াজেদ জয় আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য প্রদান করেন। তাকে হত্যার চেষ্টার ষড়যন্ত্রের ঘটনার বিচার দাবি করেন তিনি।