কেএম সবুজঃ পরিচয় দিতেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর ভাতিজী’র স্বামী। সেই পরিচয়েই খাটাতেন অসম্ভাব্য প্রভাব। বেড়া সরকারি কলেজের প্রিন্সিপাল হওয়ার সুবাধে অন্যান্য দলের নেতাদের ভাই,ভাতিজী কিংবা ছেলের এইচএসসি বা ডিগ্রীর ফরম ফিলাপেও দিয়েছেন বাঁধা। জাতীয়, পৌর,উপজেলা কিংবা ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচনেও অন্যান্য দলের এজেন্টদের বের করে দেওয়া সহ প্রভাব বিস্তারের নানা অভিযোগ মাথায় নিয়ে গত ০৫ আগস্ট ২০২৪ইং আওয়ামিলীগ সরকারের বড়সড়ে পতনের পর থেকে আর কলেজেই আসেন না এই প্রিন্সিপাল। বলছি বেড়া সরকারি কলেজের প্রিন্সিপাল আব্দুর রাজ্জাকের কথা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সম্প্রতি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে যারা যারা অংশ গ্রহণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন এই প্রিন্সিপাল।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে জড়িত থাকা এক শিক্ষার্থী বলেন,বেড়া সরকারি কলেজের যে শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছেন তাদের বাড়িতে রাতে পুলিশ পাঠিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেছেন এই শিক্ষক।
যদিও সাঁথিয়া ও বেড়ার থানার পক্ষ থেকে এমন তথ্য অস্পষ্ট রয়েছে। তবে, গত ০৫ই আগষ্ট থেকে আজ ১৮ ই সেপ্টেম্বর এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মোট ৪৪ দিন তিনি কলেজে আসেন না। তালা দিতে বন্ধ করে গেছে তার কক্ষ। প্রিন্সিপালের কক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকার কারণে কলেজে পাঠদান করতে আসা অন্যান্য শিক্ষক ও কর্মচারীদের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর ও করতে পারছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন,আমরা প্রিন্সিপাল আব্দুর রাজ্জাক স্যারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করতেছি। কিন্তু তিনি আসবেন, আসবেন বলে আর আসছেন না।
এ বিষয়ে বেড়া সরকারি কলেজের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্বয়ক সালমান হোসেনের কাছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাঁধা দেওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, বেড়া সরকারি কলেজের একটি ফেসবুক পেইজ আছে সেখানে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অংশ গ্রহণ না করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি সরাসরি ছাত্র আন্দোলনে বাঁধা কিংবা হুমকি প্রদান করেননি।
বেড়া-সাঁথিয়ার ছাত্র আন্দোলনের আরেক সম্বয়ক মোঃ তৌফিক হাসান রাফুল বলেন, আমরা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বিভিন্ন ভাবে বাঁধার সম্মূখীন হয়েছি। আমাদের ছবি দেখিয়ে দেখিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। আব্দুর রাজ্জাক স্যার সরাসরি বিরোধীতা না করলেও পুলিশি হয়রানিতে সহযোগিতা করেছেন ,আমি সহ আমার সহযোদ্ধাদের অনেকেই গত ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগষ্ট পর্যন্ত বাসায় থাকতে বা ঘুমাতে পারিনাই।আমাকে বেশ কিছু আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের হুমকির মুখে পরতে হয়েছে।
বেড়া সরকারি কলেজের প্রিন্সিপাল আব্দুর রাজ্জাক দীর্ঘদিন কলেজে উপস্থিত না হওয়া এবং তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আমি এখন এই বিষয়ে কোন কথা বলতে চাইনা। তবে খুব শীঘ্রই কলেজে যোগদান করবো।
অনুসন্ধানে আরও উঠে এসেছে বেড়া সরকারি কলেজের প্রিন্সিপাল আব্দুর রাজ্জাকের দীর্ঘদিন কলেজে ইচ্ছাকৃত ভাবে অনুপস্থিত ও নানা ভাবে আওয়ামী সরকারের ক্ষমতাবলে তার প্রভাব বিস্তার করার পরেও আওয়ামিলীগ সরকার ক্ষমতা হারানোর পরে ভয়ে তিনি কলেজে আসছেন না। কলেজে তার স্ব-পদে দায়িত্ব নিয়ে বসতে বিএনপি’র অনেক নেতাকর্মীদের সাথে ইতিমধ্যেই তিনি দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, এই শিক্ষকের নিজের ইচ্ছাকৃত ভাবে দীর্ঘদিন কলেজে অনুপস্থিত হয়ে কলেজের পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটানোর তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।