ঢাকারবিবার , ২৫ আগস্ট ২০২৪
আজকের সর্বশেষ খবর

লক্ষ্মীপুরে বন্যার পানিতে ভাসছেন ১ লাখ ২৪ হাজার ১ শত পরিবার, নিহত ১


আগস্ট ২৫, ২০২৪ ১১:৪২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ফরহাদ হোসাইন (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি: অতিবৃষ্টি ভয়াবহ বন্যায় ডুবেছে লক্ষ্মীপুরের ৫ উপজেলা। রামগতি চর আলগী ইউনিয়নে বিবি আয়েশা ৩ নামে এক শিশু পানিতে ডুবে নিহত হয়েছে। গত কয়েকদিনের টানা ভারী বৃষ্টি বর্ষণ ও ফেনী, নোয়াখালী উজান থেকে নেমে ঢলে জেলার অন্তত ১ লাখ ২৪ হাজার ১ শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এসব উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভয়াবহতা ছুঁয়েছে কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা, রামগতি, চর আলগী, চর বাদাম, চর রমিজ, চর পোড়া গাছা, চর সিকান্দার, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর হামছাদী,দক্ষিণ হামছাদী , দালাল বাজার, চররহিতা, চন্দ্রগঞ্জ, হাজিরপাড়া, উত্তর জয়পুর, মান্দারী, লাহারকান্দি ইউনিয়ন এবং পৌর শহরের ১,৩, ১৪, ১৫, নং ওয়ার্ড পানিতে প্লাবিত হয়ে ঘর বন্দী হয়ে পড়েছে।

পানি বন্দী স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত কয়েকদিন যাবৎ টানা ভারী বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতা কারণে পানি বাঁধাগ্রস্ত হয়ে কৃষি জমি নষ্ট হয়েছে। হাজার হাজার একর, পশু পাখি, হাঁস, মুরগি, গবাদি পশু মারা গিয়েছে। মৎস্য খামার থেকে চলে গেছে শত কোটি টাকার মাছ। বর্তমানে ফেনী, নোয়াখালীর উজানের পানি চাপ দেয়াতে লক্ষ্মীপুর জেলার মানুষের ঘর বাড়িতে ডুবতে শুরু করছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ ও মোবাইল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ফলে দুর্যোগের কঠোর ভোগান্তির সর্বোচ্চ শিখরে আছেন এসব এলাকার বানভাসি মানুষরা।এসব মানুষদের অনেকে জেলার ১৮৫ আশ্রয়কেন্দ্রে গেছেন। তবে অনেকেই খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। বানের পানি কমে গেলে নিজ ভিটেমাটিতে ফেরার অপেক্ষা আর সব হারানোর আক্ষেপ নিয়ে প্রহর কাটছে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের।

শনিবার (২৪ আগস্ট) বেলা ২ টা পর্যন্ত স্থায়ী এবং অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ৮ হাজার মানুষ। বাকি সব মানুষ আছেন খোলা আকাশের নিচে। ৫০ হাজার পানিবন্দি পরিবারের অপেক্ষা কেবল বন্যা শেষ হয়ে গেলে পুরোনো অবস্থায় ফিরে যাওয়ার। ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৪২০ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এরমধ্যে রয়েছেন কৃষক, মৎস্য চাষী, মুরগী খামারী, গরু, মহিষ, সবজি চাষিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিন সকালে বন্যা কবলিত সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চারিদিকে থই থই করছে উজানের পানি। বাদামি রঙের এসব ঘোলা পানিতে ডুবে গেছে মাছের ঘের, হেক্টরে হেক্টরে ফসলি জমি, গরুর খামার। পানিতে তলিয়ে আছে ঘরবাড়ি। নিরাপদ আশ্রয় নেওয়া অনেকে পানি সাঁতরিয়ে ভিটেমাটি দেখে আসছেন।

লক্ষ্মীপুর পৌর ৩ নং ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা মমিন বলেন, আমার জীবনে এত পানি কখনো দেখিনি। আমাদের সবকিছু তলিয়ে গেছে।

চররুহিতা বকুলতলার রহিম নামে এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, মুহূর্তের মধ্যে এত পানি কোথা থেকে এলো বুঝি না। যে ক্ষতিটা আমাদের হয়েছে, জানি না কী দিয়ে পোষাবো।

অপর দিকে শনিবার দুপুরে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার মহাসচিব কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে লক্ষ্মীপুর মেঘনা রোড বেড়ির মাথা পৌর শহরের ১৪ নং ওয়ার্ড বাঞ্চানগর গ্রামে খলিলুর রহমান আইডিয়াল মাদ্রাসায় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা লোকজনের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, সাংবাদিক জাকির হোসেন সবুজ, জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুল মালেক নিরব, মিজানুর রহমান, আলমগীর হোসেন, ফরহাদ হোসাইন সহ প্রমুখ। অপর দিকে ঢাকা থেকে স্বেচ্চাসেবক দলের একটি টিম শুকনো খাবার নিয়ে লক্ষ্মীপুরে আসার খবর পাওয়া গেছে। এদিকে আরেকটি সেচ্ছাসেবী সংঘঠন একটি উদ্ধারকাজের টিম নৌকা নিয়ে ফেনী যেতে দেখা গেছে।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, লক্ষ্মীপুরে ৫ উপজেলার ৫৮ ইউনিয়ন, ৪ পৌরসভায়, ১৮৫ টি স্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র, অস্থায়ী ৬০ টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৮ হাজার মানুষকে নিরাপদে রাখা হয়েছে, ১ লাখ ২৪ হাজার ১ শত মানুষ পানি বন্দী অবস্থা রয়েছে, ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৪২০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। চাল বিতরণ করা হয়েছে ২৪ হাজার মে.টন, শুকনো খাবার বিতরন করা হয়েছে ৩ হাজার ১ শত মানুষের মাঝে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত একটা মানুষও যেন অভুক্ত না থাকে আমরা সেভাবে কাজ করছি।

✅ আমাদের প্রকাশিত কোন সংবাদের বিরুদ্ধে আপনার অভিযোগ  বা পরামর্শ থাকলে ই-মেইল করুনঃ dailyvorerkhabor@gmail.com ❌ বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।