স্বপন রবি দাস জেলা প্রতিনিধি হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জ ০৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট)আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিষ্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন মোবাইল ফোনে অজ্ঞাত স্থান থেকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি জানায় যে, তার জীবনের ঝুকি আছে এবং এই সংক্রান্তে তার কাছে তথ্য আছে। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে চুনারুঘাট থানার (২৮জুন) সাধারণ ডায়রী নং- ১৬১০, লিপিবদ্ধ করা হয়। একই ঘটনায় সংসদ সদস্য তিনি নিজে শেরে বাংলা নগর থানায় একটি জিডি করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে তার প্রতিকার চান। যা ব্যাপক আকারে ভাইরাল হয়।উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে হবিগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার আক্তার হোসেন নির্দেশনায় হবিগঞ্জ জেলা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ও সিটিটিসি ঢাকা এর সমন্বয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে গত (০৯জুলাই) দুপরে উল্লেখিত তথ্য দাতাকে সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।গ্রেফতারকৃত আসামি হলো : মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার মোবারকপুর গ্রামের মোঃ মন্তাজ মিয়া পুত্র মোঃ সোহাগ মিয়া (২৭)।উক্ত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, সে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। পরবর্তীতে ২০১১ সালে কাজের অনুসন্ধানে বিদেশ যায় এবং ৬/৭ বৎসর অবস্থান করে ২০১৮ সালে দেশে আসে। দেশে আসার পর কতিপয় দালালের সাথে যোগাযোগ করে তার এলাকার ১২ জন লোককে পর্তুগাল পাঠাবে বলে প্রতিজনের নিকট হতে ৮/১০ লাখ করে টাকা নিয়ে দালালকে প্রদান করেও তাদের বিদেশ পাঠাতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে বিদেশ গমনেচ্ছুকের চাপে সোহাগ মিয়া তাদের টাকা দিতে না পেরে পালিয়ে ভারতে চলে যায় এবং সেখানে এক বছর অবস্থান করে দেশে ফেরত আসে। তারপর সে আর্থিক অভাব-অনটনের দূর করতে হ্যাকার হওয়ার চেষ্ঠা করে এবং ইন্টারনেট হতে হ্যাকিং এর বিষয়ে ধারনা নিতে গিয়ে ডার্ক ওয়েব এর সাথে পরিচিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সে USA এর ভিপিএন অ্যাপস ডাউনলোড করে এবং এর মাধ্যমে ডার্ক ওয়েব সাইট ব্যবহার করে হিটম্যান নেটওয়ার্ক লিংকসহ বিভিন্ন সাইটে প্রবেশ করে। হিটম্যান নেটওয়ার্ক সাইটে প্রবেশ করার পর সে ভারতীয় একটি গল্প পড়ে। যাতে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে তার জীবনের হুমকি আছে মর্মে তথ্য দিয়ে প্রতারনার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করার বিষয়টি তার নজরে আসে। কিছুদিন যাবৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাধবপুর-চুনারুঘাট এর সংসদ সদস্য ব্যারিষ্টার জনাব সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন তার জীবনের উপর হুমকি আছে মর্মে বিভিন্ন ভিডিওতে প্রকাশ করে। যা উক্ত সোহাগ মিয়া দেখতে পেয়ে সে নিজে নিজে একটি পরিকল্পনা করে যে, হিটম্যান নেটওয়ার্ক সাইটে উল্লেখিত গল্পের আঙ্গিকে ব্যারিষ্টার সুমন সাহেব এর কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ আত্মসাৎ করবে। কিন্তু মাননীয় সংসদ সদস্য কিংবা তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী এর মোবাইল নাম্বার তার কাছে না থাকায় সে স্থানীয় চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ এর সরকারী মোবাইল নাম্বারে হোয়াটস অ্যাপে যোগাযোগ করে এবং সে ব্যারিষ্টার সুমন সাহেবের সাথে কথা বলিয়ে দেয়ার জন্য অফিসার ইনচার্জকে অনুরোধ করে। তারই ধারাবাহিকতায় অফিসার ইনচার্জ এর মাধ্যমে ব্যারিষ্টার সুমন সাহেবের সাথে সে কথা বলে এবং সে জানায় যে, ৪/৫ জনের একটি দল তাকে হত্যা করার জন্য কিলিং মিশনে নেমেছে। তার উদ্দেশ্য ছিল ব্যারিষ্টার সুমন সাহেব নিজে কিংবা তার ব্যক্তিগত সহকারী এর মাধ্যমে কিলিং মিশনের সদস্যদের সম্পর্কে তার কাছে তথ্য চাইবে। তখন সে তথ্য প্রদানের বাহানা করে ব্যারিষ্টার সুমন সাহেবের কাছে মোটা অংকের অর্থ দাবী করবে। কিন্তু ব্যারিষ্টার সুমন সাহেবকে বিষয়টি জানানোর পরদিন তিনি এই বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে এসে এর প্রতিকার চান ও থানায় জিডি করেন এবং ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেন মর্মে সে জানতে পারে। তখন সে ভয় পেয়ে ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম চলে যায়। যখন সে বুঝতে পারে তাকে কেউ ট্র্যাক করছে তখন সে চট্রগ্রাম থেকে সিলেটে চলে আসে। অতপর: গতকাল বিকালে হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ ও সিটিটিসি ঢাকা এর সমন্বয়ে তাকে সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকা হতে আটক করা হয়। উল্লেখ্য যে, সে ৮ জুন ২০২৪খ্রি. বিকাল অনুমান ৪.২০ ঘটিকা হতে ২৪ জুন ২০২৪খ্রি. তারিখ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে মোঃ সোয়েব মিয়া (২৪), পিতা- মোঃ মনির মিয়া, সাং- গহরপুর, ০৯ নং বাউসা ইউ/পি, থানা- নবীগঞ্জ, জেলা- হবিগঞ্জকে বিদেশে পাঠাবে বলে বর্নিত আসামী সোহাগ মিয়া তার নিকট থেকে সর্বমোট ২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা প্রতারণা পূর্বক আত্মসাৎ করে।তার বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ থানায় (০৮জুলাই)মামলা নং ০৭ ধারা- ৪২০/৪০৬/৫০৬(২) পেনাল কোড রুজু হয়। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর থানার (২০এপ্রিল) মামলা নং ১১ধারা- ৪২০/৪০৬ পেনাল কোড বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন আছে।আসামী সোহাগ মিয়া বিদেশে থাকা অবস্থায় একটি বিয়ে করে এবং তার একটি কন্যা সন্তান আছে। পরবর্তীতে বিদেশ থেকে আসার পর আরেকটি বিয়ে করে। স্ত্রীদের সাথে তার পারিবারিক কলহ রয়েছে। উভয় স্ত্রী তাদের পিত্রালয়ে বসবাস করে। মূলত: সে অভাব-অনটন ও উচ্ছাকাংখার কারনে বিদেশ পাঠানোর নামে মানুষকে ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করত: বিভিন্ন লোকজনের নিকট থেকে টাকা পয়সা আত্মসাৎ করে। সে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত।