নিজস্ব প্রতিনিধি: কোটা আন্দোলন থেকে জনদৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরাতেই জামায়াতকে নিষিদ্ধে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে বলে মনে করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত ও ছাত্রশিবির নিষিদ্ধ করতে সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি এ কথা বলেন।বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার একটা ইস্যু তৈরি করে, সেই ইস্যুকে ডাইভারশনের দিকে নিয়ে যায়। এখন এটি তাদের আরেকটি প্রজেক্ট। আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমাদের এটা ঘোষিত কর্মসূচি, আমাদের আদর্শ হচ্ছে, বহুদলীয় গণতন্ত্র। পাকিস্তান আমলে কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। বাম রাজনীতি যারা করতেন মির্জা গোলাম হাফিজ থেকে শুরু করে হাজী মোহাম্মদ দানেশ থেকে শুরু করে তারা সবাই দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তারা। প্রায় দুই বছর সেখানে থেকে তারপরে তারা ফিরে আসেন।তিনি বলেন, এতো দিন নেয়নি কেনো তারা? আজকে এখন নিচ্ছে কেনো? এগুলোর পেছনে তাদের অনেক যুক্তি থাকবে, অনেক কথা ওরা বলবে, আমরা যে কথাগুলো বলছি, তার বিপক্ষে তারা অনেক কথা বলবে, তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলি যে, আমাদের বক্তব্যে আমরা খুব পরিষ্কার, আমরা বিশ্বাস করি বহুদলীয় গণতন্ত্রে, আমরা বিশ্বাস করি যারা এখানে রাজনীতি করে তাদের অধিকার আছে রাজনীতি করার।মির্জা ফখরুল বলেন, গত কয়েকদিন ঘটনায় ছাত্র ভাইয়েরা শহীদ হয়েছেন তাদের বাড়িতে তাদের আত্বীয়-স্বজন কেউ খেতে পারছে না। তাদের চোখের সামনে ছেলে চলে গেছে, তাদের ভবিষ্যৎ চলে গেছে, তাদের সবচেয়ে প্রিয় যে জিনিসটা সেটা চলে গেছে।চার বছরের বাচ্চা, ছয় বছরের বাচ্চাটা রাষ্ট্রের কি উত্তর? রাষ্ট্রের জবাবটা কি? কেনো তার প্রাণ গেলো? কি উত্তর দেবে সে? দায়িত্ব তো তার। প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান করার দায়িত্ব তার। একথা বললে তো চলবে না যে, আমরা কি করতে পারি, বিভিন্নভাবে ঘটে গেছে। এই কথা বললে চলবে না। এই দায় অবশ্যই তোমাদের নিতে হবে। যে কথাটা আমরা বলেছি যে, দায় স্বীকার করে তাদের চলে যাওয়াটাই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি সমাধান করবে। রাজনৈতিক সংকট রাজনৈতিকভাবেই শেষ করতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এদেশে জঙ্গিবাদের সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে আওয়ামী লীগ। এই সরকার পরিকল্পিতভাবে এদেশে জঙ্গিবাদের তারা পৃষ্ঠপোষকতা করেন। এর বেশি কিছু আমার বলার নেই।ফখরুল বলেন, এই যে ঘটনাবলি ঘটে গেছে, মানুষের প্রাণ গেছে- এটাকে আমরা গণহত্যা বলি। অবশ্যই এটা গণহত্যা। আমার লিখিত বক্তব্যে আপনি দেখবেন, এটাকে গণহত্যা বলা আছে। আমি মনে করি, এই গণহত্যার তদন্ত অবশ্যই জাতিসংঘের তদন্তে হওয়া উচিত। কারণ এই সরকারের কোনো তদন্তে আমরা বিশ্বাস করি না। এরা নিরপেক্ষ না তো, কিভাবে এদের বিশ্বাস করবেন।মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমি তো বলেছি যে, তাদের সমস্ত আন্দোলনে আমাদের সমর্থন রয়েছে।আন্দোলনকারীদের প্রতি আমাদের একটা আহ্বান, এই আন্দোলনকে তারা চূড়ান্ত পর্যায় নিয়ে যাবে। আর জনগণের যে আন্দোলন, এই সরকারের চলে যাওয়া। তাদের আন্দোলন একটা সেটা হচ্ছে, একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠন করতে হবে। এই সরকারকে চলে যেতে হবে। একই সঙ্গে ‘এই মুহূর্তে সান্ধ্য আইন প্রত্যাহার এবং সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়ার’ দাবিও জানাচ্ছি।তিনি বলেন, ছয় সমন্বয়ককে ডিবি অফিসে হেফাজতে নিয়ে তাদের ওপর প্রচণ্ড চাপ দিয়ে একটা বক্তব্য দেয়া হয়েছিলো। আপনারা দেখেছেন, একটা খাবার নাটক করা হয়েছে। ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে একটা খাবার নাটক তৈরি করা হয়েছে। ডিবি অফিসে একটা নামই হয়ে গেছে ভাতের হোটেল হিসেবে। এগুলো কখন কোন সময়ে হয়? ডিবি সরকারের একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানের একমাত্র দায়িত্ব কি শুধুমাত্র যারা আন্দোলন করছে, যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছে, তাদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছে, তাদেরকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করা এবং এই সমস্ত নাটক তৈরি করা। নিশ্চয়ই না। মির্জা ফখরুল বলেন, আমি তো এখানে (সরকার) আওয়ামী লীগ খুঁজে পাই না। আমি বার বার আগেও বলেছি, এটা মূলত এখন পুরোপুরিভাবে একটা অদৃশ্য শক্তি, যে শক্তি এদেশকে পরিচালনা করার চেষ্টা করছে- সেই শক্তির একটা সরকার। যেখানে এই সমস্ত বাহিনীর প্রধানরা তারা যে ভাষায় প্রকাশ্যে কথা বলেন, মনে হয় না যে- কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেশে রয়েছে। সুতরাং আমরা মনে করি যে, এদেশের প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগের কোনো সরকার নেই। দেশে একটা অরাজনৈতিক সরকার পরিচালনা করছে।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ এ্যাড. নজরুল ইসলাম । ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দৈনিক ভোরের খবর,খন্দকার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান। অফিসঃ ১৫০ নাহার ম্যানসন (৫ম তলা) মতিঝিল বানিজ্যিক এলাকা,ঢাকা -১০০০। বার্তাকক্ষ-+৮৮০১৭৪৫-৩৫৪২৭৭