জেলা প্রতিনিধি,মুন্সীগঞ্জঃ মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি মো.গোলজার হোসেনের উপর হামলার মামলায় গজারিয়া উপজেলার হোসেন্দি ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল হকের জামিন নামঞ্জুর করেছে আদালত।আজ বৃহস্পতিবার (২৩ মে ) দুপুরে হাজতে থাকা ওই আসামীর জামিন আবেদন করলে মুন্সীগঞ্জ আমলি আদালত ৫ এর বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলাম তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।মামলাটিতে আসামি পক্ষে একাধিক উকিল শুনানিতে অংশগ্রহণ করলেও বাদিপক্ষে এডভোকেট শামীম ওই মামলায় শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন। দুপুর ১২ টার দিকে শুনানি শেষে আদালত পরে আদেশ দিবেন বলেন।পরে বিকেলে ওই শুনানির আদেশে আসামির জামিন নামঞ্জুর করা হয়।এর আগে গত রোববার দুপুরে পুলিশের উপর হামলা মামলায় জেল হাজতে থাকা মনিরুল হক মিঠুকে সাংবাদিক গোলজার হোসেনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে তোলে পুলিশ। শুনানি শেষে পর্যালোচনা করে জামিন না মঞ্জুর করে একদিনের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেল গেটে এনে জিঙ্গাসা বাদের আদেশ দেন বিচারক। পরে জেলগেটে একদিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পুনরায় আজ বৃহস্পতিবার আসামির জামিন আবেদন করলে তার জামিন নামঞ্জুর করে আদালত।বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামীম বলেন, কারাগারে থাকা এই মামলার ১নং আসামি মনিরুল হক মিঠুর জামিন আবেদন করলে আদালত শুনানি শেষে আসামীর জামিন নামঞ্জুর করেছেন।ভুক্তভোগী সাংবাদিক গোলজার হোসেন মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি। অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল হক উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আনারস প্রতীকের প্রার্থী এবং উপজেলা আ.লীগের সভাপতি আমিরুল হকের পক্ষের হয়ে কাজ করছিলেন।গত ৮ মে প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচনে হোসেন্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক, তাঁর ভাই গাজীপুর আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইকবাল হক ও ভাতিজা তানভীর হকরা ওই ইউনিয়নের ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করতে কেন্দ্রের বাইরে জড়ো হচ্ছিলেন । ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য সোহেল রানা সবাইকে সরে যেতে বলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে চেয়ারম্যান মনিরুল হকের নির্দেশে সোহেলকে মারধর শুরু করেন তাঁর ভাতিজা তানভীর এবং তাঁদের লোকজন।ওই ঘটনার সময় পাশ থেকে ছবি ও ভিডিও করছিলেন গোলজার হোসেন। পরে তাঁরা গোলজারের ওপর হামলা করেন। তাঁর মুঠোফোন, পকেটে থাকা টাকা, আইডি ও পর্যবেক্ষক কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে মারধর করতে থাকেন। অন্য সাংবাদিকেরা এসে তাঁকে উদ্ধার করেন। পরে সাংবাদিকেরা ভোটকেন্দ্রের ভেতর আশ্রয় নেন। সেখানে তাঁদের মারধরের জন্য তেড়ে আসেন মনিরুল হক, তাঁর ভাই ইকবাল হক সহ তাদের লোকজন। সাংবাদিকদের হত্যা ও হাত-পা কেটে ফেলার হুমকি দেন তারা।এ ঘটনায় পর দিন বৃহস্পতিবার রাতে ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুলকে প্রধান করে তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন গোলজার।এছাড়াও ভোটের দিন মনিরুল হকের নেতৃত্বে হোসেন্দি বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে দখল, ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারেন মনিরুল হকের লোকজন। পুলিশ বাঁধা দিলে ককটেল ফাটিয়ে, তাদের উপর অস্ত্র নিয়ে হামলাচায় মনিরুল হকরা।এতে পুলিশের দুই সদস্যকে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়।সেই সঙ্গে পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর করে তাঁরা। সে ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে চেয়ারম্যান মনিরুল হককে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০-২০০ জনকে আসামি করে আরো একটি মামলা করা হয়।১১ মে শনিবার রাত ৯টার দিকে পুলিশের মামলায় ঢাকার শাহজাহানপুরের একটি বাড়ি থেকে মনিরুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।সেদিন থেকে জেল হাজতে রয়েছেন মনিরুল হক।এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে গত বুধবার স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি শাখা-১ এ আদেশ জারি করে চেয়ারম্যান পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে মনিরুল হককে।এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ কোট পুলিশের ইন্সপেক্টর জামাল উদ্দিন বলেন, আসামি মনিরুল হক মিঠুর জামিন চাইলে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে আদেশ দিয়েছেন।