মনোরঞ্জন রায় (পঞ্চগড় জেলা) প্রতিনিধি: পঞ্চগড়ে ডিভোর্সের পর সাবেক স্বামীসহ স্থানীয়দের ফাসাতে আত্মহত্যা নাটক সাজিয়ে আটজনের নামে মিথ্যা মামলার অভিযোগ উঠেছে মোছাঃ রাবেয়া খাতুন নামের এক নারীর বিরুদ্ধে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী প্রায় ২১ বছর আগে পঞ্চগড় পৌরসভার তুলারডাঙ্গা এলাকার মৃত আব্দুল করিম এর মেয়ে মোছাঃ রাবেয়া খাতুনের বিয়ে হয় সদর উপজেলার হাড়িভাষা ইউনিয়নের ঘাগড়াপাড়া এলাকার মৃত মোঃ আব্দুল গফফার এর ছেলে মোঃ জিল্লুর রহমান এর সাথে। ভুক্তভোগী মোঃ জিল্লুর রহমান জানান, বিয়ের পর থেকে তার বেহায়াপনা ও অশালীন আচরণ শুধু আমাকে নয় এই এলাকার সাধারণ মানুষকে সহ অতিষ্ঠ করে তুলেছে। নিজের আত্মসম্মানের কথা ভেবে দিনের পর দিন সবকিছু মুখ বুঝে সহ্য করে ছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যায়ে এসে সে আমার বাড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে মোঃ ডাবলু হোসেন নামের একজনের সাথে পরকীয়া সম্পর্কে সে জড়িয়ে যায়। সেটার প্রতিবাদ করতে গেলে প্রায় সময় আমাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বিবাদ সৃষ্টি হতো। প্রায় বছরখানেক আগে সে ডাবলু হোসেনের সাথে তিন দিন যাবত আত্মগোপনে ছিল। স্থানীয় সালিশি মীমাংসার মাধ্যমে এবং নিজের সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে তাকে আমি পুনরায় গ্রহণ করি। তারপর আরো একবার আমি বাইরে থেকে হঠাৎ করে বাড়িতে এসে ডাবলুর সাথে আমার স্ত্রীকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পাই। পরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে পুনরায় আপস মীমাংসা করা হয়। সর্বশেষ আনুমানিক দের দুই মাস আগে আমার সন্তানদের বেড়াতে পাঠিয়ে দিয়ে আমার স্ত্রী পুনরায় ডবলুকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসে। সেদিনও আমি তাদেরকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পাই। আমি চিল্লাহাল্লা করতে চাইলে ডাবলুর হাতে থাকা ধারালো ছুরি দেখে ভয়ে তাদের হাতেনাতে আটক করতে পারিনি। পরে রাতের বেলা আমার স্ত্রীর ভাই এসে মোটরসাইকেল যোগে তাকে আমার ভাইয়ের বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। পরে আমি তাকে বাড়িতে নিয়ে আসতে গেলে সে আর আমার সংসার করবে না মর্মে সাফ জানিয়ে দেয়। আমার শাশুড়ি ঝাড়ু দিয়ে এবং স্ত্রী জুতো দিয়ে পিটিয়ে আমাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। পরে বাধ্য হয়ে আমি তাকে কাজীর মাধ্যমে সকালের উপস্থিতিতে ডিভোর্স দিয়ে ডিভোর্স এর কাগজ তার বাসায় পাঠিয়ে দেই। এমতাবস্থায় অনাধিকার সত্ত্বেও সে আমার বাড়িতে এসে অবস্থান নেয় এবং আমাকে আমার বাড়িতে ঢুকতে বাধা প্রদান করে। আমি দুই দিন বাড়িতে যেতে পারি নি। সে বিভিন্ন ভাবে হুমকি প্রদান করে এবং বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারি সে এখানে এসেছে একটা বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়ে অথবা আত্মহত্যার নাটক সাজিয়ে আমি সহ স্থানীয়দের নামে মিথ্যা মামলা আনায়ন করবে। আমার কাছ থেকে বড় অংকের টাকা আদায় করবে এবং আমাকে সর্বস্বান্ত করবে। এমতাবস্তায় আমি নিরুপায় হয়ে সদর থানা পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ আনায়ন করি। এর মধ্যে গত শুক্রবার (৫ই এপ্রিল) জুম্মার নামাজ থাকায় ও পরনের কাপড় ময়লা হওয়ায় বাড়িতে কাপড় আনতে যাই। যাওয়া মাত্রই সে আমার কাপড় চোপড় টেনে ছিড়ে ফেলে। যেটা এলাকার সবাই দেখেছে। একপর্যায়ে স্থানীয়রা তার কাছ থেকে আমাকে ছাড়িয়ে দিলে সে বিষ খাওয়ার নাটক করে হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হয়। তার ভাই আমি সহ আটজনের নামে থানায় মিথ্যা অভিযোগ আনায়ন করে। আমি স্বামী হিসেবে যত লাঞ্ছনা, অপমান, অপদস্ত হয়েছি সেটা বলে বোঝাতে পারবো না। একমাত্র মামলা করার উদ্দেশ্যে সে আমার বাসায় এসে এই অরাজকতামূলক কার্যক্রম চালিয়েছে। এ বিষয়ে সরে জমিনে পরিদর্শন করে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে ভুক্তভোগী মোঃ জিল্লুর রহমান এর সকল কথার সত্যতা পাওয়া গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ হাকিমউদ্দিন রহমান (৬০), মোঃ সাইদুর রহমান (৭২), আলহাজ্ব মোঃ কাচিমদ্দিন (৬০), মোঃ ফজলুর রহমান (৭০), মোঃ সাদ্দাম হোসেন (৩০), মোঃ রফিকুল ইসলাম (৩৫) সহ আরো স্থানীয়রা বলেন, ওই মহিলা খুবই খারাপ। এতকিছুর পরেও এর আগে আমরা দুইবার আপস মীমাংসা করে দিয়েছিলাম। আরো স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ওই সময় উপস্থিত ছিলেন। মোঃ জিল্লুর রহমান সে নির্দোষ। একজন স্বামী হিসেবে সে যত কিছু সহ্য করছে অন্য কেউ এগুলো সহ্য করার কথা না। ওই নারীর আচরণে এলাকার সবাই অসন্তুষ্ট। জিল্লুর রহমান যা কিছু বলেছে সবগুলোই সত্য। তার অশ্লীল আচার ব্যবহার মোটেও মেনে নেওয়ার মত না। ওই মহিলার মুখের ভাষা অত্যাধিক খারাপ। সারাদিন অশ্লীল ভাষায় বোকাবাদ্য করে। এলাকার মানুষ ভয়ে তাকে কিছু বলতে পারি না। সে জাদু টোনা করে ছেলে দুটোকে বস করার পাশাপাশি জিল্লুর এর অনেক ক্ষতি এখন পর্যন্ত করেছে। আমরা এলাকার সাধারণ মানুষ এর থেকে পরিত্রাণ চাই। ৫ তারিখের ঘটনায় স্থানীয় নারী পুরুষ শিশু সহ সকল প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ঐদিন সকালে জিল্লুর রহমান বাসায় আসার সাথে সাথে বাড়িতে ঢোকার আগেই ওই মহিলা তার পরিধেয় কাপড় ছিড়ে দেয়। তাকে বিভিন্নভাবে লাঞ্ছিত করতে থাকে। যেটা আমরা সবাই দেখেছি। পরে সবাই গিয়ে ছাড়াছাড়ি করে দেওয়ার পর সয়াবিন তেলের বোতলে থাকা তেল বা এই ধরনের কোন কিছু একটা সে খায়। খাওয়ার পর একটু বমি করে। পরবর্তীতে প্রায় সুস্থ অবস্থায় তাকে পঞ্চগড় নিয়ে যাওয়া হয়। এখন শুনতেছি সে বিষ খেয়েছে। কিন্তু আমরা যেটা দেখেছি সেটা সয়াবিন তেলের বোতল ছিল। ওই মহিলা এলাকায় এমন ভাবে চলে আমরাও মেয়ে মানুষ আমাদেরই লজ্জা হয়। আমরা অনেক সময় বাড়িতে ছেলে-মেয়ে পরিবার-পরিজন একসাথে থাকি এমন সময় তার অশ্লীল মুখের ভাষা শুনে সকলেই লজ্জিত হই। সে যে সকল অপ্রীতিকর কাজ করে এতে ছেলে মেয়ে মানুষ করা তো দূরের কথা এলাকায় বসবাস করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। স্বামী ডিভোর্স দেওয়ার পর কোন স্ত্রী আর স্ত্রী থাকে না। এখন বুঝতে পারতেছি ডিভোর্সের পর সে কেন আবার এসেছে। আমরা এলাকার মানুষ ওই নারী থেকে মুক্তি চাই। বিষয়টি ভালোভাবে জানতে রাবেয়া খাতুন এর সাথে দেখা করতে হাসপাতালে গেলে তিনি ছাড়পত্র পেয়েছেন মর্মে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি মিথ্যা অভিযোগের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান স্থানীয়রা। এ বিষয়ে সদর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রদীপ বলেন, অভিযোগের তদন্ত চলমান রয়েছে। রোগী সুস্থ হলে তার সাথে কথা বলে আমরা বিষয়ে ভালোভাবে জানতে পারবো। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ এ্যাড. নজরুল ইসলাম । ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দৈনিক ভোরের খবর,খন্দকার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান। অফিসঃ ১৫০ নাহার ম্যানসন (৫ম তলা) মতিঝিল বানিজ্যিক এলাকা,ঢাকা -১০০০। বার্তাকক্ষ-+৮৮০১৭৪৫-৩৫৪২৭৭